- সারাদেশ
- ‘দ্রুত বিচারে ম্যাজিক লাগে না, আইনজীবী-বিচারকের পরিশ্রমই যথেষ্ট’
‘দ্রুত বিচারে ম্যাজিক লাগে না, আইনজীবী-বিচারকের পরিশ্রমই যথেষ্ট’

ছবি: সমকাল
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘দ্রুত বিচারে ম্যাজিক লাগে না, আইনজীবী-বিচারকদের পরিশ্রমই যথেষ্ট। অনেক সময় বিচার প্রার্থীদের ন্যায় বিচার পেতে কষ্ট পেতে হয়। আশির দশকের অনেক মামলা নিয়ে এখনও আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। তাদের বিচারকাজটি দ্রুত শেষ করতে পারাটাই সাফল্য। স্বল্প সময়ে সঠিক বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব শুধু বিচারকের না, আইনজীবীদেরও বড় ভূমিকা আছে।’ আজ বুধবার (৩ মে) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির বার ভবনে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘আইনজীবী ও বিচারক একে অপরের পরিপূরক। বেঞ্চের সহায়তা ছাড়া বার চলতে পারে না, আবার বার ছাড়া বেঞ্চ চলতে পারে না। জুডিসিয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রাষ্ট্রের একটি বড় অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
আইনজীবীদের সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বয়কটের মতো সিদ্ধান্তে যাবেন না। এতে জুডিসিয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনারা সহনশীল হবেন, জুডিসিয়ারিকে সহযোগিতা করবেন। কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের বলবেন। দুষ্ট বিচারক থাকলে আইনি বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দুই যুগেরও বেশি সময় ওকালতি করেছেন জানিয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে আরও বেশি গল্প করতে ইচ্ছা হয়। তাদের কাছ থেকে শেখার অনেক কিছু আছে।’
আইনজীবীদের সংসদে যাওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানপতি। ‘সংসদে আইনজীবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সংসদ আরও সমৃদ্ধ হবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ১৯৭২ সালে ১৫৬টি প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার জারি হয়। অর্থাৎ প্রতি দুই কর্মদিবসে একটি আইন তৈরি হয়। একটি আইন তৈরি করার পেছনে যে শ্রম, মেধা লাগে সে সম্বন্ধে আপনারা সবাই জানেন। ওই সময়ে পার্লামেন্টে আইনজীবীর সংখ্যা এখনকার সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। আমি আপনাদের কাছে দাবি করি, আপনারা প্লিজ পার্লামেন্টে আসুন, জনগণের প্রতিনিধিত্ব করুন। এতে পার্লামেন্ট আরও সমৃদ্ধ হবে।’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘দেশের আর্থিক উন্নয়ন হচ্ছে, এই উন্নয়নের সাথে বিচারক বিভাগের গতি বাড়াতে হবে। বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুতে ফান্ডিং বন্ধ করে দেওয়ার কনসিকোয়েন্স তৈরি হয়েছিল সেই সম্পর্কে আপনারা জানেন। সেই বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতুর ছবি উপহার দিয়েছেন। এটি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে আমাদের অর্থনীতিতে একটি চাপ এসেছে। সেই চাপ সাহসিকতার সঙ্গে পরিশ্রম করে বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি কাজে লাগিয়ে এই দুঃসময়ের মোকাবেলা করব। বিশ-পঁচিশ বছরের মধ্যে আমরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো দেশে পরিণত হব। এ স্বপ্ন আমরা দেখি।’
দুপুর ৩টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য নির্মাণাধীন বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’ এর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। এই সময় উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রব্বানী, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল মুন্সি মো. মশিয়ার রহমান, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল সাইফুর রহমান, জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আস শামস জগলুল হোসেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামল, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌস, জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ, জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল প্রমুখ।
মন্তব্য করুন