চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যুক্ত পিসি রোড সংস্কারের পর গত নভেম্বরে উদ্বোধন করা হয়। দুই বছরের সংস্কার কাজ শেষ করতে লাগে পাঁচ বছর। সড়কটি উদ্বোধনের পর বহুদিনের ভোগান্তি শেষে স্বস্তি মেলে নগরবাসীর। কিন্তু পাঁচ মাস পার না হতেই সেই সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। বর্ষার আগে চকচকে সড়কটিতে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। 

ওয়াসা বলছে, বাসা বাড়িতে পানির সংযোগ দিতে পাইপ বসাতে এই খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরের দুটি সেবাসংস্থার মধ্যে সমন্বয় না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

পিসি রোড দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন করা হয়। নগরের একাংশের লোকজনের চলাচলের প্রধান সড়ক এটি। ২০১৬ সালে সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ে। সংস্কারের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ব্যয় ধরা হয় ১৭০ কোটি টাকা। চারটি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় সংস্কার কাজ। এর মধ্যে দুইটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাঝপথে কাজ ফেলে চলে যায়। এতে বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরের বাসিন্দাদের। 

পরে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে চসিক। যথাসময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ১০ কোটি টাকা গচ্চা যায় চসিকের। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ১৮০ কোটি টাকা। গত ৯ নভেম্বর সড়কটির উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।  

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল উদ্দিন বলেন, পাঁচ বছর ধরে সড়কটিতে নরক যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে। সংস্কার কাজ চলার সময় ওয়াসা পাইপলাইন বসাতে পারত। এখন সামনে বর্ষা। এখন সড়ক কাটাকাটি শুরু হয়েছে। হালিশহর আবাসিকের বাসিন্দা সলিম উল্লাহ নামে এক শিক্ষক সমকালকে বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা এখন আতঙ্কের নাম। নতুন সড়ক কাটাকাটি করে দুর্ভোগ তৈরি করাই যেন প্রতিষ্ঠানটির কাজ। 

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় বাসাবাড়িতে পানির সংযোগ দিতে পাইপলাইন বসানোর জন্য সড়ক কাটা হচ্ছে। সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়কটির অন্তত ১০০ স্থানে গর্ত করা হবে। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে মাঝ বরাবর খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। 

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, বাসাবাড়িতে পানির সংযোগ দেওয়ার জন্য চসিককে ক্ষতিপূরণ দিয়ে সড়ক কাটা হচ্ছে। অনুমতি পেতে দেরি হওয়ায় এই সময়ে সড়কটিতে খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে। মেশিন দিয়ে সড়কের নির্দিষ্ট অংশ তুলে নেওয়া হচ্ছে। পাইপ বসানোর পর তা আবার বসিয়ে দেওয়া হবে।’  

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, পানির সংযোগ লাইনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাজ শেষ হলে সড়কটি সংস্কার করে দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক সিকান্দার খান বলেন, সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা এসব পাত্তা দেন না। তাদের কাণ্ড দেখলে মনে হয় তারা দুর্ভোগ সৃষ্টির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।