ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

চলাচলের অনুপযোগী রেলপথের ১২ কিলোমিটার

চলাচলের অনুপযোগী রেলপথের ১২ কিলোমিটার

তীব্র স্রোতে রেললাইনের প্রায় ১২ কিলোমিটার লন্ডভন্ড

শাহ মো. আখতারুজ্জামান, ছাতক (সুনামগঞ্জ)

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২২ | ২২:৪৭ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২২ | ২২:৪৭

পাথর নেই রেললাইনের নিচে। অনেক জায়গায় মাটি সরে গেছে। অধিকাংশ স্থানে ঝুলে রয়েছে স্লিপার। কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের। কিছু স্থানে স্লিপারের কাঠও সরে গেছে। এমন চিত্র সুনামগঞ্জের ছাতক-সিলেট রেললাইনের। সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে রেললাইনের প্রায় ১২ কিলোমিটার লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। আড়াই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাতক থেকে গোবিন্দগঞ্জ আফজলাবাদ রেলস্টেশন পর্যন্ত রেলপথে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও সংস্কার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। কবে সংস্কার হবে, তাও জানা নেই কারোর। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়লে সারাদেশের সঙ্গে ছাতক-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে দীর্ঘ আড়াই বছরেও সেটি চালু হয়নি। এর মধ্যে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেলপথটি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৪ সালে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছাতক বাজার পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাথর, বালু, চুনাপাথর, কমলালেবু, তেজপাতাসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে মূলত রেলপথটি নির্মিত হয়েছিল। পরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে রাজস্ব আয়ে ছাতক বাজার স্টেশন শীর্ষস্থানে ছিল। এরপর নানা অজুহাতে কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেন ও বগি সংখ্যা।

স্থানীয়রা বলছে, ট্রেনে ছাতক থেকে ৪৫ মিনিটে পৌঁছানো যায় সিলেটে। পথে খাজাঞ্চীগাঁও, সৎপুর ও আফজালাবাদ স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। এলাকার কয়েক হাজার মানুষের সিলেট ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যোগাযোগে এটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল। সড়কপথের চেয়ে পণ্য পরিবহনে খরচ কয়েক গুণ কম হতো রেলপথে। সকালে ও বিকেলে ট্রেনে সিলেট থেকে ছাতকে যেতে ভাড়া ছিল মাত্র ১০ টাকা।

ওই পথে বাসে যেতে এখন ভাড়া গুনতে হয় ৭০ টাকা। এ ছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। রেলপথটি লাভজনক হওয়ার কারণে পাথর পরিবহনের জন্য দেশের একমাত্র ছাতক-ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ (রোপওয়ে) নির্মাণ করা হয়েছে। ছাতকে রয়েছে রেলওয়ের তিন শতাধিক একর ভূমি ও অর্ধশতাধিক স্থাপনা। এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথটি দ্রুত সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের।

কলেজছাত্রী সোনিয়া বেগম জানায়, আগে কম খরচে ট্রেনে কলেজে যাওয়া যেত। কিন্তু এখন বাসে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যেতে হয়। খরচও বেড়েছে, কলেজে যেতে সময়ও লাগে বেশি। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাতায়াতে।

ছাতক বাজারের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন ও আফসার উদ্দিন বলেন, প্রায় আড়াই বছর ধরে ছাতক-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখানে স্থাপিত রেলওয়ের নিয়ন্ত্রাধীণ একমাত্র কংক্রিট স্লিপার কারখানাও বন্ধ। এ জন্য কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দায়ী। ব্যবসা-বাণিজ্যিক স্বার্থে দ্রুত রেলপথটি চালু করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে সিলেট অঞ্চলের রেলওয়ে সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, সম্প্রতি বন্যার কারণে ছাতক-সিলেট রেলপথের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যেই রেলপথ সরেজমিন পরিদর্শন করে কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী সিরাজ জিন্নাত বলেন, ছাতক-সিলেট রেলপথের ৩৪ কিলোমিটারের মধ্যে ১০-১২ কিলোমিটারের ক্ষতির খবর জানতে পেরেছেন। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে রেললাইন মেরামতের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আরও পড়ুন

×