বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকলেও আধিপত্য নিয়ে আছে চরম বিভক্তি। দু'পক্ষের মধ্যে প্রায়ই ঘটছে সংঘাত। ছাত্রলীগের বিভক্তিতে স্থানীয় রাজনীতির ছোঁয়া লাগায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। বর্তমানে একপক্ষের অনুসারীরা ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন না প্রতিপক্ষের হামলার আশঙ্কায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই কমিটিবিহীন ছাত্রলীগ বেশ তৎপর। ২০১৪ সালের নভেম্বরে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মিসভা হয়। সে সময় কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিচালনাকারী শিক্ষার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত নিয়েছিলেন। তবে ওই উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০১২ সালে জিলা স্কুলের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পর কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু তিন বছর পর স্থায়ী ক্যাম্পাসে (কর্ণকাঠি) যাওয়ার পর আধিপত্য নিয়ে ছাত্রলীগের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। তখন ছোটখাটো ঝামেলা লেগেই থাকত। এখন দুটি পক্ষ প্রকাশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। একপক্ষ বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী, অপরপক্ষ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী চলতি সপ্তাহে নিরাপত্তা চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে পৃথক আবেদন করেছেন। আবেদনে ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাত ও তার কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করা হয়েছে। ওই চারজন হলেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের ইরাজ রব্বানী, রসায়ন বিভাগের সাইমুন ইসলাম, বাংলা বিভাগের সাব্বির হোসেন ও লোকপ্রশাসন বিভাগের রাব্বি খান। প্রথম দু'জন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং অন্য দু'জন বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন। এই ৪ শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা অমিত হাসান রক্তিমের পক্ষের। রক্তিম সদর আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী।

চারজন যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন সেই মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাত ২-৩ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী। সিফাত স্থানীয় শিক্ষার্থী হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের ৪০১৮ নম্বর কক্ষ দখলে রেখেছেন।

সিফাতের গ্রুপ শুরুতে এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করত। প্রায় দুই বছর ধরে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষটি ক্যাম্পাসে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে টানতে প্রভাব খাটানো ও নির্যাতনের অভিযোগ আছে।

চার শিক্ষার্থী আবেদনে বলেছেন, গত ২০ জুলাই থেকে বেশ কিছুদিন সিফাত তাঁর অনুসারীদের নিয়ে তাঁদের (অভিযোগকারীদের) ক্যাম্পাসে খোঁজাখুঁজি করেছেন। এতে তাঁদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে, ক্যাম্পাসে অবস্থান করাও তাদের জন্য ভীতিকর। এসব অভিযোগের বিষয়ে সিফাত বলেছেন, প্রতিপক্ষ গ্রুপ তাকে বিতর্কিত করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।

গত ৫ জুলাই গভীর রাতে সিফাত ও রক্তিম গ্রুপের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তুমুল সংঘর্ষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক এলাকায় সংঘর্ষে সিফাত ও তাঁর তিন অনুসারী এবং রক্তিমের তিন অনুসারী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ঈদুল আজহার ছুটির পর ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও রক্তিম গ্রুপের অনুসারীরা ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন না হামলার আশঙ্কায়। অভিযোগ আছে, ২০ জুলাই ক্যাম্পাস খোলার দিনে সিফাত গ্রুপ ধারালো অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছিল। রক্তিম গ্রুপ এ বিষয়টি জানতে পেরে ওই দিন ক্যাম্পাসে যায়নি। এখনও তারা সংঘবদ্ধভাবে ক্যাম্পাসে যাচ্ছে না। এ বিষয়ে রক্তিম বলেন, 'আমরা ভয়ে ক্যাম্পাসে যাচ্ছি না, তা কিন্তু না। ছুটির পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দিন প্রতিপক্ষ গ্রুপ বহিরাগতদের নিয়ে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। ক্যাম্পাসে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থেই আমরা ওই দিন ক্যাম্পাসে যাইনি।' অপর পক্ষের নেতা সিফাত বলেন, ক্যাম্পাসে না আসতে কাউকে হুমকি দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগ কাল্পনিক।
ছাত্রলীগের বিভক্তি প্রসঙ্গে সিফাত বলেন, 'আমরা সবসময় অপরপক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছি। কিন্তু তারা আসেনি'। রক্তিম বলেন, 'আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংগঠন করছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অথবা রাজনৈতিক নেতৃত্ব চাইলে সমন্বয়ের উদ্যোগ নিতে পারে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম বুধবার সমকালকে বলেছেন, 'চার শিক্ষার্থী নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করার পর গত সোমবার তাদের ডেকে কথা বলেছি। তাদের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছি। তবে তারা রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ড বা অন্য কোনো কাজে যুক্ত থাকা অবস্থায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক প্রশ্নে তাদের কিছু বলা হয় না। তবে শিক্ষার্থী হিসেবে উভয় পক্ষকেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকার জন্য বলেছি।'