ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

নাসাজয়ী মাহমুদায় মুগ্ধ গ্রামবাসী

নাসাজয়ী মাহমুদায় মুগ্ধ গ্রামবাসী

ঈশ্বরদীর গ্রামের বাড়িতে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলছেন মাহমুদা সুলতানা মুনমুন- সমকাল

সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী (পাবনা)

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ | ১৫:৩৯ | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ | ১৬:০০

নিজ গ্রামের মানুষের কাছে মাহমুদা সুলতানা মুনমুন এখন গর্বের প্রতীক। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এই উদীয়মান বিজ্ঞানী নিজ এলাকায় ফেরার পর অন্যরকমের অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের মানুষের মধ্যে।

আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও আশপাশের মানুষ মাহমুদাকে এক নজর দেখতে, তার কথা শুনতে ছুটে আসছেন। আমেরিকায় বেড়ে ওঠা মাহমুদাও তার গ্রামের মানুষের ভালোবাসায় বিমোহিত। মাহমুদার আমেরিকান স্বামী ইয়াকুবকে নিয়েও আগ্রহের কমতি নেই। মাহমুদার পরিবারের ছোট-বড় সবাই দারুণ ব্যস্ত নতুন জামাইকে কোথায় রাখবেন, কী খাওয়াবেন, কোথায় বেড়াতে নিয়ে যাবেন সেসব নিয়ে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসে নাসার বিজ্ঞানী ইয়াকুবও ঈশ্বরদীর সবুজ শ্যামল শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ দেখে এবং গ্রামের মানুষের ভালোবাসা পেয়ে অভিভূত। শ্বশুরবাড়িতে এসে কাঁটাচামচ দিয়ে নয়, হাত দিয়েই তৃপ্তির সঙ্গে খেয়েছেন মাছ, ডাল, ভাত আর শীতের ঐতিহ্যবাহী হরেক রকমের পিঠাপুলি। ২০১৭ সালে নাসার বর্ষসেরা আবিস্কারক মনোনীত হয়ে  সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলে দেওয়া মাহমুদা কয়েকদিন আগে তার স্বামীকে নিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ি ঈশ্বরদীতে বেড়াতে আসেন। খবর পেয়ে রোববার  বিকেলে মাহমুদা ও তার স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এ প্রতিবেদক।

আলাপচারিতায় ৩৭ বছর বয়সী মাহমুদা বলেন, 'আমি সবসময় জটিল সমস্যা সমাধান করতে ভালোবাসি। সবসময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফলতা অর্জন করার চিন্তা করি। নাসার বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে প্রতিনিয়ত জটিল জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে সফল হয়েছি। আমি বাংলাদেশি হিসেবে গর্বিত যে পৃথিবীর বড় বড় বিশেষজ্ঞকে পেছনে ফেলে আমি জয়ী হয়েছি। এই অর্জন বাংলাদেশের।'

মাহমুদা বলেন, 'জয়নগরের মানুষের ভালোবাসা সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ থেকে নাসায় ফিরে গিয়ে আরও ভালো কিছু করতে পারব। তাদের ভালোবাসা আমাকে আরও প্রেরণা জুগিয়েছে।'

মাহমুদা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করে বিশ্বখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি পারমাণবিক স্কেল নিয়ে কাজ করার সুযোগ পান। এ সময় মাহমুদার সৃজনশীলতায় মুগ্ধ হয় নাসা। বর্ষসেরা আবিস্কারক নির্বাচিত করার পাশাপাশি নাসার সাময়িকী 'কাটিং এজ'-এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদনও করা হয় তাকে নিয়ে। এ ছাড়া তিনি নাসার গ্রুপ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ অ্যাওয়ার্ড, ইয়ারলি ক্যারিয়ার অ্যাচিভমেন্ট মেডেল, অভ্যন্তরীন রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বেল ল্যাবরেটরি গ্র্যাজুয়েশন ফেলোশিপ, এনএসএফ গ্র্যাজুয়েটস ফেলোশিপ, মার্গারেট এইচ রোসেভ ফেলোশিপসহ বিভিন্ন পুরস্কারও অর্জন করেছেন।

তার চাচাতো বোন লাবণী ইসলাম জানান, মাহমুদা ছোটবেলায় বাবার চাকরির সুবাদে রংপুর ও রাজশাহীতে পড়ালেখা করেছেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী।

মাহমুদা জানান, নাসায় কাজ করতে গিয়ে আমেরিকান বিজ্ঞানী জ্যাকবের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারপর দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয়। জ্যাকব খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হন। ৮/৯ মাস আগে আমেরিকায় পারিবারিকভাবেই তাদের বিয়ে হয়। জ্যাকবের নতুন নাম হয় ইয়াকুব।

ইয়াকুব জানান, 'প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসে আমি মুগ্ধ। এখানকার মানুষের ভালোবাসা আমাকে ঋণে আবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ খুব ভালো দেশ।'

পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী প্রয়াত গোলাম জাকারিয়ার একমাত্র মেয়ে মাহমুদা। তার চাচা সেতু মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ। গত বছর মাহমুদার বাবা আমেরিকায় মারা যান। মাহমুদার তিন ভাই আর মা এখন আমেরিকা প্রবাসী।

সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা বলেন, মাহমুদার এই অর্জনে তিনি খুবই আনন্দিত। মাহমুদার চাচা ঈশ্বরদী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান মিন্টু বলেন, মাহমুদার কারণে এলাকার মানুষের কাছে তারা বিশেষ সম্মান পান। তাদের পরিবারকে মাহমুদা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তাকে নিয়ে ঈশ্বরদীবাসী গর্বিত।

আরও পড়ুন

×