সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক, মার্কসবাদী বুদ্ধিবৃত্তিক বৃত্তের অন্যতম পুরোধা- বহুমাত্রিক পরিচয় তার। স্বাধীনতা-বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর ক্ষণে সমকালের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি জানিয়েছেন, অসামান্য অর্জন থাকার পরও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের লক্ষ্যকেন্দ্রে এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ যেমন এখানে যথার্থভাবে বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়নি, তেমনি বামপন্থিরাও পারেননি রাষ্ট্রকে সমাজতান্ত্রিক-বৈপ্লবিক পরিবর্তনের অভিমুখে নিয়ে যেতে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেবব্রত চক্রবর্তী বিষুষ্ণ
আমরা বিজয়ের ৫০ বছর উদযাপন করছি। স্বাধীনতা-বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর এই ক্ষণে আমরা কি কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের লক্ষ্যকেন্দ্রে পৌঁছতে পেরেছি?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
না, কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের লক্ষ্যকেন্দ্রে আমরা পৌঁছতে পারিনি। আর পারিনি যে, সেটা প্রায় সবাই বলবেন। কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের প্রথমেই ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজের প্রত্যাশা। অর্থাৎ যেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের শ্রেণিগত, ধর্মগত, লৈঙ্গিক বা বর্ণগত কোনো বৈষম্য থাকবে না। সব নাগরিকের থাকবে আহার, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকারগুলোর নিশ্চয়তা। থাকবে মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা। ঘটবে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। সর্বক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পাবে। সর্বোপরি থাকবে অধিকার ও সুযোগের সাম্য। ওই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
এই ব্যর্থতার দায় কার বা কাদের বলে আপনি মনে করেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
না-পৌঁছানোর সব দায় নেতৃত্বের। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন ছিল একটি সামাজিক বিপ্লবের; যে বিপ্লব ঘটেনি। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা এসেছে, কিন্তু সমাজে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মৌলিক কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সেই যে 'চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত' প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঔপনিবেশিক শাসনামলে, তার ভেতরকার জমিদার ও প্রজার সম্পর্কই নানাভাবে এবং চেহারায় পুনঃপুন উৎপাদিত হয়ে চলেছে। শাসক-শাসিতের সম্পর্ক বদলায়নি। বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করছিল, এখনও করছে সামাজিক ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তনের। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বে। যুদ্ধে সমাজতন্ত্রীরাও ছিলেন, কিন্তু তারা নেতৃত্ব দিতে পারেননি। যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারাই রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। জাতীয়তাবাদীরা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে রাষ্ট্র শাসন করেছেন। সামাজিক বিপ্লব সম্পন্ন করার দায়িত্ব ছিল সমাজতন্ত্রীদের। স্বাধীনতার পর সমাজ ও রাষ্ট্রকে সমাজতান্ত্রিক-বৈপ্লবিক পরিবর্তনের অভিমুখে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তাদেরই। তারা সে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। প্রথমত, তারা বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন নানা দল ও উপদলে। দ্বিতীয়ত, তাদের ওপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চলেছে। তৃতীয়ত, মিডিয়া ছিল তাদের বিরুদ্ধে। ওদিকে বিশ্ব-রাজনৈতিক পরিস্থিতিও সমাজতন্ত্রের পক্ষে ছিল না। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পুঁজিবাদের একাধিপত্য ও দৌরাত্ম্য। আমার ধারণা, মূল ব্যর্থতা বামপন্থিদেরই। জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বের তো অঙ্গীকার ছিল না সামাজিক বিপ্লবের। যে জন্য দেখা যায়, সংবিধানের স্বীকৃত রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি থেকে সমাজতন্ত্র বিদায় নিয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্গত ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বিকশিত ও প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে। সেই লক্ষ্যও কি পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
না, হয়নি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ যথার্থরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। পেছনে অনেক কারণ আছে। একটা কারণ ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিষ্ঠা না হওয়া। এর ফলে সাম্প্রদায়িক বিভাজন রয়ে গেছে। আরও বড় বিভাজন অবশ্য শ্রেণিগত। শ্রেণিগত বৈষম্য অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন প্রকট। এই বৈষম্যের ফলে সব বাঙালি এক হতে পারছে না। বৈষম্য প্রতিফলিত হয়েছে তিন ধারার শিক্ষায়। ইংরেজি, বাংলা ও মাদ্রাসা- এ তিন ধারাকে এক ধারায় আনার কথা ছিল এবং এক ধারার মাধ্যম হওয়ার কথা ছিল বাংলা ভাষায়, তা হয়নি। রাষ্ট্রভাষা বাংলা হয়েছে, কিন্তু রাষ্ট্রের ভাষা যে বাংলা হয়েছে- তা বলা যাবে না। সংস্কৃতিচর্চার ঘাটতিও একটি কারণ। ঐক্যকে বাস্তবিক ও গভীর করার জন্য সংস্কৃতির ব্যাপক চর্চার প্রয়োজন ছিল; সেটা করা যায়নি।
আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, সুশাসনের ক্ষেত্রে আমরা বিগত ৫০ বছরে কতটুকু এগিয়েছি?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
এগিয়েছে, তবে তা সন্তোষজনক নয়- সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। গণতন্ত্রের জন্য আইনের শাসন অবশ্যই প্রয়োজন; কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়। কারণ আইন তৈরি হয় সমাজের সুবিধাভোগী অংশের স্বার্থের দিকে চোখ রেখে। তা ছাড়া বৈষম্যমূলক সমাজে আইনের সুরক্ষাও সবাই পান না। টাকা খরচ করতে হয়। টাকা সবার থাকে না। যার টাকা বেশি, বিচার তার দিকে ঝুঁকে পড়ে। আসলে প্রয়োজন হচ্ছে ন্যায়বিচার। ন্যায়বিচারের পথেও প্রধান অন্তরায় হচ্ছে বৈষম্য। আমরা একটি পুঁজিবাদী-আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভেতর রয়েছি। এ ব্যবস্থা মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর ব্যবস্থা করতে অক্ষম। সুশাসনের পথে বড় অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি। ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। এটাও কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থারই অন্তর্গত। ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা আগে ছিল, সেটা এখনও রয়ে গেছে। এ ব্যবস্থা বদলানো চাই।
যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল, সেই লক্ষ্যে সমাজ বিনির্মাণ আজও সম্ভব হয়নি বলে অনেকে মনে করেন। আপনিও এ কথা ইতোমধ্যে বহুবার বলেছেন। এর অন্তরায় কী মনে করেন এবং এর জন্য করণীয়ই বা কী?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
প্রধান অন্তরায় হচ্ছে পুঁজিবাদী উন্নতির ধারা। এই ধারা ব্রিটিশ আমলে ছিল, পাকিস্তানি আমলে আরও বেড়েছিল; এখন সর্বাত্মক হয়ে পড়েছে। আগে রোগকে চেনা দরকার; তার পরে চিকিৎসা। রোগটা হচ্ছে পুঁজিবাদী উন্নতি। উন্নতিকে সামাজিক করা চাই। ব্যক্তিমালিকানা বাদ দিয়ে আমাদের এগোতে হবে সামাজিক মালিকানার দিকে। কাজটা কঠিন, কিন্তু এর কোনো বিকল্প নেই।
বিগত ৫০ বছরে আমাদের অর্জনের বিষয়গুলো কীভাবে দেখছেন? দেশে-বিদেশে আমাদের সার্বিক অবস্থান কি আগের চেয়ে তুলনামূলক ভালো নয়?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
স্বাধীনতা লাভের পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল- অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ কীভাবে উঠে দাঁড়াবে। যুদ্ধ অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করেছিল; উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল। তারপর বন্যা হয়েছে; দুর্ভিক্ষও দেখা দিয়েছে। তাতে মানুষও মারা গেছে। সেসব বিপর্যয় কাটিয়ে বাংলাদেশ এগিয়েছে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে সে স্থান করে নিয়েছে। অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নতি ঘটেছে। এসবের পেছনে আছে শ্রম। মেহনতি মানুষ শ্রম দিয়েছে; যেমন দেশের ভেতরে থেকে, তেমনি বাইরে গিয়ে। তাদের শ্রমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে; বৈদেশিক ঋণগ্রহণ কমেছে; বিদেশ থেকে রপ্তানির টাকা এসেছে। রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেছে। নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে এবং অর্থনীতিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। আমরা ছিলাম অত্যন্ত দরিদ্র এবং পশ্চাৎপদ একটি দেশ। সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি। অর্জনগুলো সামান্য নয়।
বাহাত্তরের সংবিধানের মূল স্তম্ভগুলোতে আঘাত করা হয়েছে। সেই সংবিধানে ফিরে যাওয়ার দাবি প্রগতিশীলদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু এখন সে প্রেক্ষাপট থাকা সত্ত্বেও কেন বাহাত্তরের সংবিধানে প্রত্যাবর্তন সম্ভব হচ্ছে না?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
আমাদের সংবিধানে দুর্বলতা ছিল বটে। কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি। ওই মূলনীতিগুলোর তাৎপর্য ছিল এটা- আমরা লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারব। কিন্তু লক্ষ্যগুলো অর্জিত হয়নি, বরং আমরা সেখান থেকে পিছিয়েই গেছি। যার প্রতিফলন ঘটেছে রাষ্ট্রীয় মূলনীতিগুলোতে আঘাতে। প্রেক্ষাপট আসলে বদলায়নি।
একদিকে আমরা শুনছি উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা, অন্যদিকে নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যচিত্র এখনও দৃশ্যমান। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
৫০ বছরে অনেকটা উন্নয়ন হয়েছে, তা সত্য। কিন্তু দেখতে হবে কোন ধরনের উন্নয়ন হয়েছে। ওই উন্নয়ন হচ্ছে পুঁজিবাদী ধরনের। পুঁজিবাদী উন্নয়ন বৈষম্য বাড়ায়। তাই বাংলাদেশে যত উন্নতি হয়েছে, তত বেড়েছে বৈষম্য। তার ওপর এ উন্নয়ন কর্মসংস্থান বাড়ায়নি। বিপরীত দিকে দেখা যাচ্ছে সম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের এই নীতি বদলানো চাই। উন্নয়ন হওয়া দরকার সার্বজনীন।
ধর্মান্ধ-প্রতিক্রিয়াশীলদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আপনি বরাবরই উচ্চকণ্ঠ। এই চিত্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
ধর্মান্ধরা আছে; আছে ধর্মব্যবসায়ীরাও। ধর্মব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করে। মূল সমস্যাটা হচ্ছে, আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থেকে সরে গেছি। 'ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার'- এটাই হওয়া উচিত ছিল নীতি; কিন্তু তা হয়নি।
গণতন্ত্র, নির্বাচন, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংকট নিয়েও আপনার উদ্বেগ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের পথ কী?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
উত্তরণের উপায় হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা। ওই সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য হবে পরমতসহিষুষ্ণতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ। তাই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করাটা অপরিহার্য। এর জন্য নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা তো অবশ্যই প্রয়োজন। তারও আগে প্রয়োজন সরকারের নিরপেক্ষতা। কিন্তু আসল কাজটা হলো গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা, যা বাংলাদেশে এখনও হয়নি।
আমাদের রাজনীতি বহুলাংশে দুর্বৃত্তায়িত হয়ে পড়েছে- এ অভিযোগ অনেকেরই। আপনি কী মনে করেন? স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত রাজনীতির চালচিত্র নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের পেছনে রয়েছে টাকার দৌরাত্ম্য। রাজনীতিতে ব্যবসা ঢুকে পড়েছে। যারা ব্যবসা করেন বা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারা এবং তাদের প্রতিনিধিরাই সর্বস্তরে নির্বাচিত হচ্ছেন। রাজনীতিকে টাকার অধীনতা থেকে মুক্ত করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা থাকা চাই এবং আরও থাকা চাই জনমতের চাপ। জনমত গঠনে গণমাধ্যম একটা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে এর মালিকদের তুলনায় কর্মীদের দায়িত্ব অনেক।
যদি জানতে চাই, আমাদের বড় কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করুন; তাহলে আপনি কোন কোন বিষয় সামনে আনবেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
এক নম্বরের সমস্যা বৈষম্য। এটা সব সময়েই ছিল এবং এর বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করেছি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে উন্নতি ও বৈষম্য একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। দ্বিতীয় সমস্যা জ্ঞানচর্চার অভাব। জ্ঞান ক্রমাগত মূল্য হারাচ্ছে। অথচ জ্ঞান ছাড়া তো প্রকৃত অগ্রগতি সম্ভব নয়। সেই জ্ঞানের চর্চা দরকার, যা মানবিক উন্নয়নে কাজ দেবে। তৃতীয় সমস্যা বেকারত্ব। উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু বেকারত্ব কমছে না। চতুর্থ সমস্যা সংস্কৃতিচর্চার অপ্রতুলতা। সংস্কৃতির চর্চা না থাকলে সামাজিকতা বাড়বে না, বরং এর উল্টোটাই ঘটবে। তা-ই হয়েছে। বিচ্ছিন্নতা বেড়েছে। সংস্কৃতির চর্চা চাই সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে। তবে সমস্যা আরও আছে। এই কয়টির কথাই আপাতত বললাম।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আপনি কেমন দেখছেন?
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
আমি আশাবাদী। কারণ পরিবর্তন প্রয়োজন এবং পরিবর্তন সম্ভব। এই পরিবর্তনের জন্য জ্ঞান প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন হবে একটি সাংস্কৃতিক জাগরণের। বাংলাদেশে অনেক কিছু ঘটেছে, কিন্তু এ পর্যন্ত তেমন কোনোই সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটেনি। এ কাজটা খুবই জরুরি। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা থাকবে তরুণদের। ভূমিকা থাকবে তাদের, যারা হৃদয়বান ও বুদ্ধিমান। শিক্ষিত হৃদয়, শানিত বুদ্ধি- এই দুই-ই চাই। সঙ্গে নিতে হবে মেহনতি মানুষকে। সমাজে মেহনতিদের সংখ্যা সর্বাধিক এবং তাদের শ্রমের ওপর আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ নির্ভরশীল। মেহনতি মানুষকে সঙ্গে না পেলে পরিবর্তন ঘটবে না। স্মরণীয়, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তো অবশ্যই, আমাদের সব অভ্যুত্থান সম্ভব হয়েছে অবশ্যই মেহনতিদের অংশগ্রহণের কারণে। মূল কাজটা রাজনৈতিক। তবে রাজনৈতিক কাজ গভীর, পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী হবে না সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি না থাকলে।
সমকাল :ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী :
আপনাকেও ধন্যবাদ। সমকালের জন্য শুভকামনা।

সম্পাদনা : ইমতিয়ার, শব্দ : ১,৪৫৩