- বিজয় দিবস
- সবার মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছি
সবার মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছি

সুলতানা কামাল। মানবাধিকার কর্মী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। ষাটের দশকে ছাত্র ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের [এমএসএফ] প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এই অধিকার কর্মীর সঙ্গে কথা হয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর লগ্নে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহবুব আজীজ
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই লগ্নে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও নারী উন্নয়নের বাস্তবতা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।
সুলতানা কামাল :আপনাদের প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। প্রথমেই সবাইকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এবং বিজয় দিবসের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদকে, যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই দেশের মাটি থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
আপনাদের প্রশ্নের উত্তরটা এভাবে শুরু করতে চাই যে বাংলাদেশের জন্মই সব মানুষের মানবাধিকারের দাবির ভিত্তিতে। বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণে সেটা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। মানবাধিকার তো কোনো গণনীয় সূচক দিয়ে মাপা যায় না। মানবাধিকার একটা বোধ, একটা নৈতিক আদর্শ। মানবাধিকারের বাস্তবতার মূল্যায়ন করতে হলে তার মূল্যবোধগুলোকে জানতে হবে, মানতে হবে। আমার আগের কথার সূত্র ধরেই বলি, আমাদের স্বাধীনতা, যা অর্জিত হয়েছিল দীর্ঘ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগ্রামের পথ ধরে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার গণহত্যার প্রতিউত্তরে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে-সেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে আমরা লিখেছিলাম, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি- বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করনার্থে।-
এই একটি বাক্যেই মানবাধিকারের সকল অঙ্গীকার এবং মূল্যবোধের মর্মার্থ বিধৃত আছে এবং তার ওপরেই ভিত্তি করে বাংলাদেশের জন্ম। এখন আমরা বিচার-বিশ্নেষণ করে দেখতে পারি আজকের বাংলাদেশে মানবাধিকারের বাস্তবতাটা কেমন। বাংলাদেশ নানা সূচকে উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে বেশ কয়েক ধাপ ওপরে ওঠার স্বাক্ষর রেখেছে সন্দেহ নেই। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বেশ কিছু কাঠামোগত উন্নয়ন বড় সাফল্যের দাবি রাখে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষম বণ্টন ঘটেনি, বৈষম্য বরং প্রকট হয়েছে। এই বৈষম্য দুর্বলের ওপর সবলের আধিপত্যবাদকে প্রশ্রয় দিয়েছে, যার ফলে পরিচয় নির্বিশেষে সকল নাগরিকের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আমরা ব্যার্থ হয়েছি।-কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না- সংবিধানের এই ধারাকে লঙ্ঘন করে রাষ্ট্র একটি ধর্মকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে, কোনো কোনো গোষ্ঠীকে সাংবিধানিক পরিচয় দিতে অস্বীকার করেছে, সংবিধানে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বৈষম্যমূলক আইন প্রচলিত রেখেছে; রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত আচার-আচরণে যে কোনো ধরনের ভিন্নতার প্রতি অসহিষ্ণুতা প্রদর্শন স্বাভাবিক বলে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার পরিস্থিতির বদল আনতে পারেনি। এখনও আমাদের জন্য অসাম্প্রদায়িক, সর্বজনের সম-অধিকারের এমন কোনো সামাজিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যা সবাইকে একটা নিরাপত্তাবোধ দিতে সক্ষম হতো। মানবাধিকারের বিচারে এই বাস্তবতাকে মানসম্মত বলা চলে না। এর ফলে নারী উন্নয়নে নানা সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ সত্ত্বেও নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনতে পারিনি আমরা। অনেক ক্ষেত্রেই নারীর অধিকার সচেতনতা বেড়েছে, নারীর অবস্থানগত পরিবর্তন এসেছে। নারীর ক্ষমতায়ন ঘটেছে। জনজীবনে নারী সমান অধিকারের দাবিদার হওয়ার সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে নারী আজও পুরুষনির্ভর, সমঅধিকার বঞ্চিত জীবন-যাপনে বাধ্য। উপার্জনক্ষম নারীও সব বিষয়ে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে না। মানবাধিকারের দিক থেকে এই বাস্তবতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার অনুযায়ী মানবিক বাংলাদেশ গঠনে কত দূর এগোতে পেরেছি আমরা?
সুলতানা কামাল :এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল কাদের ঘরে যাচ্ছে সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। আগেই বলেছি আমাদের সমাজে বৈষম্য ক্রমবর্ধমান। ভিন্ন পরিচয়ের কারণে দেশের নাগরিকেরা কোনো রকম অনিরাপত্তাবোধে আক্রান্ত হতে বাধ্য হয় কিনা সেটা দেখতে হবে। সামগ্রিকভাবে বাকস্বাধীনতা ও বিশ্বাসের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা ও সুরক্ষা দিতে রাষ্ট্র সক্ষম বা আন্তরিক কিনা। আইনের শাসনের দুর্বলতা, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, অপরের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করা, সমাজের মননে প্রতিনিয়ত বাধাহীনভাবে নারীবিদ্বেষী ধারণা প্রবিষ্ট করা, অন্যের সম্পদ দখল করা, পরিবেশ-প্রকৃতি দূষণ, রাষ্ট্র কর্তৃক আইন ও বিচারবহির্ভূত আচরণের বৈধতা পাওয়া, দুর্নীতির প্রকোপে সাধারণ মানুষের অসহায় বোধ করা- এরকম অসংখ্য অসংগতিই সামাজিক সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকারহীনতা এবং প্রতিকার না পাওয়া মানুষ সহজভাবে মেনে নিয়েছে। একই সঙ্গে একে অপরের প্রতি কোনোরকম দায়বদ্ধতার বোধ আমাদের আলোড়িত করে না। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারই ছিল এসব কিছুর বিপরীতে একটি মানবিক মর্যাদার দেশ গড়ে তোলা। স্বাধীনতা ঘোষণা এবং বিজয় অর্জনের মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের দেশকে শত্রুমুক্ত করেছি যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ছিল সব মানুষের অধিকার ও মর্যাদার দেশ গড়ে তোলা। আমাদের সংবিধানের ধারাগুলোতে এই আদর্শ আমরা খচিত করেছি- জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি- বলে। সেই বিচারে আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছি।
শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির নানান পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ ও অবস্থান কি আশানুরূপ অর্জিত হয়েছে?
সুলতানা কামাল :দেখুন আমাদের অঙ্গীকার ছিল সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং সেটা যেমন সংখ্যাগত দিক থেকে করার কথা তেমনই গুণগত দিক থেকেও। বাংলাদেশে নারীর অবস্থানের অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে মূলত জনজীবনে। নারীরা গুরুত্বপূর্ণ আসনে আসীন হয়েছেন রাজনীতিতে, পেশাগত ক্ষেত্রে- এমন কি পুলিশ এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীতেও। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যার মধ্যে খেলাধুলাও রয়েছে নারীরা সবাইকে চমৎকৃত করে দিয়েছেন। কিন্তু সার্বিকভাবে এখনও নারীকে সমমর্যাদায় দেখতে এবং মেনে নিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মননের যে উৎকর্ষ সাধন প্রয়োজন ছিল সেটা এখনও হয়ে ওঠেনি। ফলে সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও অবস্থান আশানুরূপ হয়নি বলে আমি মনে করি।
৫০ বছর পেরিয়ে নারীমুক্তির পথে আমাদের অন্তরায়গুলো কী বলে মনে করেন?
সুলতানা কামাল :এক কথায় প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করা কঠিন। তবে মূলত পুরুষতন্ত্র দ্বারা আচ্ছন্ন চিন্তাধারা যা আমাদের রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত তার প্রভাবেই নারীমুক্তির পথ এখনও কণ্টকিত। রক্ষণশীল, নারীবিদ্বেষী মানসিকতার দাপটে ক্ষমতাশ্রয়ী নীতিনির্ধারকেরা নারীর স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রশ্নে আপসকামী ভূমিকা নিয়ে থাকেন। অন্যদিকে নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাদের বিপক্ষ দলের মতো সহিংসতা প্রদর্শন করতে অক্ষম বা সেটা তাদের নির্বাচিত পথও নয়, তাই রাষ্ট্র সুবিধাবাদিতার কৌশল বেছে নিয়ে নারী স্বাধীনতা ও মুক্তিবিরোধী শক্তির দিকেই হাত বাড়িয়ে দেয়। নারীনীতি বাস্তবায়ন ও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রতিকারে নমনীয়তা, পাঠ্যসূচি পরিবর্তনে রাষ্ট্রের এই চরিত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। ইদানীং প্রধানমন্ত্রীও অত্যন্ত পরিস্কার করে সামাজিক মানসিকতা বদলানোর কথা বলেছেন। এ ছাড়া নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইনে প্রচলিত থাকা এবং বিচার ব্যবস্থার মধ্যে নারীর অধিকারের প্রতি অশ্রদ্ধার মনোভাবও নারীমুক্তির পথে বাধা সৃষ্টি করে। নারীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়াটা খুবই জরুরি।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়েও নারীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। নির্যাতন, খুন, ধর্ষণের ভয়াবহতা থেকে জাতি আজও মুক্ত হতে পারছে না কেন?
সুলতানা কামাল :আমার আগের মন্তব্যগুলোর ভেতরে আপনাদের এই প্রশ্নের উত্তর কিছুটা দেওয়া হয়ে গেছে বলে আমি মনে করি। প্রথম কথা হলো, আমাদের মন-মনন, ধ্যান-ধারণা এখনও নারীবিদ্বেষী চিন্তাধারা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এর জন্য আমাদের পারিবারিক জীবনে নারীপুরুষের সমঅধিকার ও মর্যাদার সংস্কৃতি সঞ্চারিত করার কোনো বিকল্প নেই। সেই পারিবারিক সংস্কৃতিই আমাদের সামাজিক লেনদেন এবং রাষ্ট্রীয় নীতিতে প্রতিফলিত হতে হবে। তখন নারীর প্রতি যে কোনো ধরনের সহিংসতা, তা পারিবারিক সহিংসতাই হোক বা অন্য যে কোনো নির্যাতন, ধর্ষণ কিংবা খুনের মতো অপরাধ হোক না কেন তার সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। কারণ তখন নারী নির্যাতনের মতো অপরাধের প্রতি এখন যে সুপ্ত বা প্রচ্ছন্ন, বা কখনও খোলাখুলি সমর্থন আছে, সেটার সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা দিনের পর আইনের ঊর্ধ্বে থেকে এই অপরাধগুলো চালিয়ে যাওয়ার সাহস পাবে না। সংবাদ মাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী নারী নির্যাতনের যত ঘটনা ঘটে তার এক-দশমাংশ বিচারের মামলার আওতায় আসে। এখন পর্যন্ত বিচার পেয়েছেন এমন ঘটনার সংখ্যা মাত্র তিন শতাংশ। তাই বলা চলে নারী নির্যাতন কমিয়ে নিয়ে আসতে না পারার পেছনে রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, যা পুরুষতান্ত্রিক নারীবিদ্বেষী মানসিকতাকে প্রণোদিত করে সে সব কিছুই দায়ী। এখানে অর্থনীতিতে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের যে সমীকরণ আছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। নারীর সমানাধিকারের দাবিকে অনেক সময় পুরুষের অর্থনৈতিক সুযোগের ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ হিসেবে দেখা হয়। এই মানসিকতাও নারী নির্যাতনের কারণ ঘটায়।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জনগণের অধিকার বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপগুলোর দিকে আপনি সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে চান?
সুলতানা কামাল :রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মানুষের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষায় দৃঢ় সংকল্প। এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থায় একেবার প্রাথমিক পর্যায় থেকে অন্যের সঙ্গে বেড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করা এবং বৈচিত্র্যকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করার মানসিকতা উৎসাহিত করা। রাজনীতিক এবং নীতিনির্ধারকদের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তরিকভাবে কাজ করা। তাদের জীবনাচরণ, কথাবার্তা যেন মানুষের অধিকার রক্ষার অঙ্গীকারের প্রকাশ ঘটায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। সার্বিকভাবে সমাজের গণতন্ত্রায়ন ঘটানো এবং তাকে শক্তিশালী করা। একই সঙ্গে মানবাধিকারের শর্ত মেনে চলার পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে মানবাধিকার সংস্কৃতির প্রসার ঘটবে। আমরা আমাদের সংবিধানে মৌলিক অধিকারের যে সব নির্দেশনা আছে এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার যে সনদে স্বাক্ষর করেছি তা সততা ও অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে পালন করা। এর মধ্যে দিয়ে আমরা জনগণের অধিকার বাস্তবায়নের উপায়গুলো খুঁজে পাব।
শত বাধা সত্ত্বেও তৃণমূল থেকে সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আপনি কেমন আশাবাদ ব্যক্ত করবেন? মানুষের অধিকার আর নারীর নিরাপত্তায় আমাদের লক্ষ্যমাত্রাগুলো কেমন হওয়া উচিত?
সুলতানা কামাল :বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত কর্মঠ এবং যে কোনো সংকট মোকাবিলার শক্তি ধারণ করেন। তাদের অধিকার ও মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তাদের মধ্যে যে দেশপ্রেম ও কর্মোদ্যোগ রয়েছে তাকে জাগ্রত করে মানবাধিকারবোধ সম্পন্ন সমাজ-সংস্কৃতি গঠনের ভেতর দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব বলে দৃঢ়বিশ্বাস রাখি। সব মানুষের জন্য সমতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারই আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত। এই নীতিগুলোর বাস্তবায়নেই আমরা মানুষের অধিকার আর নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই লগ্নে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও নারী উন্নয়নের বাস্তবতা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।
সুলতানা কামাল :আপনাদের প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। প্রথমেই সবাইকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এবং বিজয় দিবসের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদকে, যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই দেশের মাটি থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
আপনাদের প্রশ্নের উত্তরটা এভাবে শুরু করতে চাই যে বাংলাদেশের জন্মই সব মানুষের মানবাধিকারের দাবির ভিত্তিতে। বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণে সেটা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। মানবাধিকার তো কোনো গণনীয় সূচক দিয়ে মাপা যায় না। মানবাধিকার একটা বোধ, একটা নৈতিক আদর্শ। মানবাধিকারের বাস্তবতার মূল্যায়ন করতে হলে তার মূল্যবোধগুলোকে জানতে হবে, মানতে হবে। আমার আগের কথার সূত্র ধরেই বলি, আমাদের স্বাধীনতা, যা অর্জিত হয়েছিল দীর্ঘ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগ্রামের পথ ধরে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার গণহত্যার প্রতিউত্তরে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে-সেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে আমরা লিখেছিলাম, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি- বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করনার্থে।-
এই একটি বাক্যেই মানবাধিকারের সকল অঙ্গীকার এবং মূল্যবোধের মর্মার্থ বিধৃত আছে এবং তার ওপরেই ভিত্তি করে বাংলাদেশের জন্ম। এখন আমরা বিচার-বিশ্নেষণ করে দেখতে পারি আজকের বাংলাদেশে মানবাধিকারের বাস্তবতাটা কেমন। বাংলাদেশ নানা সূচকে উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে বেশ কয়েক ধাপ ওপরে ওঠার স্বাক্ষর রেখেছে সন্দেহ নেই। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বেশ কিছু কাঠামোগত উন্নয়ন বড় সাফল্যের দাবি রাখে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষম বণ্টন ঘটেনি, বৈষম্য বরং প্রকট হয়েছে। এই বৈষম্য দুর্বলের ওপর সবলের আধিপত্যবাদকে প্রশ্রয় দিয়েছে, যার ফলে পরিচয় নির্বিশেষে সকল নাগরিকের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আমরা ব্যার্থ হয়েছি।-কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না- সংবিধানের এই ধারাকে লঙ্ঘন করে রাষ্ট্র একটি ধর্মকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে, কোনো কোনো গোষ্ঠীকে সাংবিধানিক পরিচয় দিতে অস্বীকার করেছে, সংবিধানে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বৈষম্যমূলক আইন প্রচলিত রেখেছে; রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত আচার-আচরণে যে কোনো ধরনের ভিন্নতার প্রতি অসহিষ্ণুতা প্রদর্শন স্বাভাবিক বলে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার পরিস্থিতির বদল আনতে পারেনি। এখনও আমাদের জন্য অসাম্প্রদায়িক, সর্বজনের সম-অধিকারের এমন কোনো সামাজিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যা সবাইকে একটা নিরাপত্তাবোধ দিতে সক্ষম হতো। মানবাধিকারের বিচারে এই বাস্তবতাকে মানসম্মত বলা চলে না। এর ফলে নারী উন্নয়নে নানা সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ সত্ত্বেও নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনতে পারিনি আমরা। অনেক ক্ষেত্রেই নারীর অধিকার সচেতনতা বেড়েছে, নারীর অবস্থানগত পরিবর্তন এসেছে। নারীর ক্ষমতায়ন ঘটেছে। জনজীবনে নারী সমান অধিকারের দাবিদার হওয়ার সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে নারী আজও পুরুষনির্ভর, সমঅধিকার বঞ্চিত জীবন-যাপনে বাধ্য। উপার্জনক্ষম নারীও সব বিষয়ে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে না। মানবাধিকারের দিক থেকে এই বাস্তবতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার অনুযায়ী মানবিক বাংলাদেশ গঠনে কত দূর এগোতে পেরেছি আমরা?
সুলতানা কামাল :এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল কাদের ঘরে যাচ্ছে সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। আগেই বলেছি আমাদের সমাজে বৈষম্য ক্রমবর্ধমান। ভিন্ন পরিচয়ের কারণে দেশের নাগরিকেরা কোনো রকম অনিরাপত্তাবোধে আক্রান্ত হতে বাধ্য হয় কিনা সেটা দেখতে হবে। সামগ্রিকভাবে বাকস্বাধীনতা ও বিশ্বাসের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা ও সুরক্ষা দিতে রাষ্ট্র সক্ষম বা আন্তরিক কিনা। আইনের শাসনের দুর্বলতা, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, অপরের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করা, সমাজের মননে প্রতিনিয়ত বাধাহীনভাবে নারীবিদ্বেষী ধারণা প্রবিষ্ট করা, অন্যের সম্পদ দখল করা, পরিবেশ-প্রকৃতি দূষণ, রাষ্ট্র কর্তৃক আইন ও বিচারবহির্ভূত আচরণের বৈধতা পাওয়া, দুর্নীতির প্রকোপে সাধারণ মানুষের অসহায় বোধ করা- এরকম অসংখ্য অসংগতিই সামাজিক সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকারহীনতা এবং প্রতিকার না পাওয়া মানুষ সহজভাবে মেনে নিয়েছে। একই সঙ্গে একে অপরের প্রতি কোনোরকম দায়বদ্ধতার বোধ আমাদের আলোড়িত করে না। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারই ছিল এসব কিছুর বিপরীতে একটি মানবিক মর্যাদার দেশ গড়ে তোলা। স্বাধীনতা ঘোষণা এবং বিজয় অর্জনের মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের দেশকে শত্রুমুক্ত করেছি যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ছিল সব মানুষের অধিকার ও মর্যাদার দেশ গড়ে তোলা। আমাদের সংবিধানের ধারাগুলোতে এই আদর্শ আমরা খচিত করেছি- জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি- বলে। সেই বিচারে আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছি।
শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির নানান পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ ও অবস্থান কি আশানুরূপ অর্জিত হয়েছে?
সুলতানা কামাল :দেখুন আমাদের অঙ্গীকার ছিল সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং সেটা যেমন সংখ্যাগত দিক থেকে করার কথা তেমনই গুণগত দিক থেকেও। বাংলাদেশে নারীর অবস্থানের অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে মূলত জনজীবনে। নারীরা গুরুত্বপূর্ণ আসনে আসীন হয়েছেন রাজনীতিতে, পেশাগত ক্ষেত্রে- এমন কি পুলিশ এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীতেও। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যার মধ্যে খেলাধুলাও রয়েছে নারীরা সবাইকে চমৎকৃত করে দিয়েছেন। কিন্তু সার্বিকভাবে এখনও নারীকে সমমর্যাদায় দেখতে এবং মেনে নিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মননের যে উৎকর্ষ সাধন প্রয়োজন ছিল সেটা এখনও হয়ে ওঠেনি। ফলে সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ ও অবস্থান আশানুরূপ হয়নি বলে আমি মনে করি।
৫০ বছর পেরিয়ে নারীমুক্তির পথে আমাদের অন্তরায়গুলো কী বলে মনে করেন?
সুলতানা কামাল :এক কথায় প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করা কঠিন। তবে মূলত পুরুষতন্ত্র দ্বারা আচ্ছন্ন চিন্তাধারা যা আমাদের রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত তার প্রভাবেই নারীমুক্তির পথ এখনও কণ্টকিত। রক্ষণশীল, নারীবিদ্বেষী মানসিকতার দাপটে ক্ষমতাশ্রয়ী নীতিনির্ধারকেরা নারীর স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রশ্নে আপসকামী ভূমিকা নিয়ে থাকেন। অন্যদিকে নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাদের বিপক্ষ দলের মতো সহিংসতা প্রদর্শন করতে অক্ষম বা সেটা তাদের নির্বাচিত পথও নয়, তাই রাষ্ট্র সুবিধাবাদিতার কৌশল বেছে নিয়ে নারী স্বাধীনতা ও মুক্তিবিরোধী শক্তির দিকেই হাত বাড়িয়ে দেয়। নারীনীতি বাস্তবায়ন ও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রতিকারে নমনীয়তা, পাঠ্যসূচি পরিবর্তনে রাষ্ট্রের এই চরিত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। ইদানীং প্রধানমন্ত্রীও অত্যন্ত পরিস্কার করে সামাজিক মানসিকতা বদলানোর কথা বলেছেন। এ ছাড়া নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইনে প্রচলিত থাকা এবং বিচার ব্যবস্থার মধ্যে নারীর অধিকারের প্রতি অশ্রদ্ধার মনোভাবও নারীমুক্তির পথে বাধা সৃষ্টি করে। নারীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়াটা খুবই জরুরি।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়েও নারীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। নির্যাতন, খুন, ধর্ষণের ভয়াবহতা থেকে জাতি আজও মুক্ত হতে পারছে না কেন?
সুলতানা কামাল :আমার আগের মন্তব্যগুলোর ভেতরে আপনাদের এই প্রশ্নের উত্তর কিছুটা দেওয়া হয়ে গেছে বলে আমি মনে করি। প্রথম কথা হলো, আমাদের মন-মনন, ধ্যান-ধারণা এখনও নারীবিদ্বেষী চিন্তাধারা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এর জন্য আমাদের পারিবারিক জীবনে নারীপুরুষের সমঅধিকার ও মর্যাদার সংস্কৃতি সঞ্চারিত করার কোনো বিকল্প নেই। সেই পারিবারিক সংস্কৃতিই আমাদের সামাজিক লেনদেন এবং রাষ্ট্রীয় নীতিতে প্রতিফলিত হতে হবে। তখন নারীর প্রতি যে কোনো ধরনের সহিংসতা, তা পারিবারিক সহিংসতাই হোক বা অন্য যে কোনো নির্যাতন, ধর্ষণ কিংবা খুনের মতো অপরাধ হোক না কেন তার সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। কারণ তখন নারী নির্যাতনের মতো অপরাধের প্রতি এখন যে সুপ্ত বা প্রচ্ছন্ন, বা কখনও খোলাখুলি সমর্থন আছে, সেটার সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা দিনের পর আইনের ঊর্ধ্বে থেকে এই অপরাধগুলো চালিয়ে যাওয়ার সাহস পাবে না। সংবাদ মাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী নারী নির্যাতনের যত ঘটনা ঘটে তার এক-দশমাংশ বিচারের মামলার আওতায় আসে। এখন পর্যন্ত বিচার পেয়েছেন এমন ঘটনার সংখ্যা মাত্র তিন শতাংশ। তাই বলা চলে নারী নির্যাতন কমিয়ে নিয়ে আসতে না পারার পেছনে রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, যা পুরুষতান্ত্রিক নারীবিদ্বেষী মানসিকতাকে প্রণোদিত করে সে সব কিছুই দায়ী। এখানে অর্থনীতিতে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের যে সমীকরণ আছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। নারীর সমানাধিকারের দাবিকে অনেক সময় পুরুষের অর্থনৈতিক সুযোগের ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ হিসেবে দেখা হয়। এই মানসিকতাও নারী নির্যাতনের কারণ ঘটায়।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জনগণের অধিকার বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপগুলোর দিকে আপনি সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে চান?
সুলতানা কামাল :রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মানুষের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষায় দৃঢ় সংকল্প। এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থায় একেবার প্রাথমিক পর্যায় থেকে অন্যের সঙ্গে বেড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করা এবং বৈচিত্র্যকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করার মানসিকতা উৎসাহিত করা। রাজনীতিক এবং নীতিনির্ধারকদের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তরিকভাবে কাজ করা। তাদের জীবনাচরণ, কথাবার্তা যেন মানুষের অধিকার রক্ষার অঙ্গীকারের প্রকাশ ঘটায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। সার্বিকভাবে সমাজের গণতন্ত্রায়ন ঘটানো এবং তাকে শক্তিশালী করা। একই সঙ্গে মানবাধিকারের শর্ত মেনে চলার পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে মানবাধিকার সংস্কৃতির প্রসার ঘটবে। আমরা আমাদের সংবিধানে মৌলিক অধিকারের যে সব নির্দেশনা আছে এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার যে সনদে স্বাক্ষর করেছি তা সততা ও অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে পালন করা। এর মধ্যে দিয়ে আমরা জনগণের অধিকার বাস্তবায়নের উপায়গুলো খুঁজে পাব।
শত বাধা সত্ত্বেও তৃণমূল থেকে সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আপনি কেমন আশাবাদ ব্যক্ত করবেন? মানুষের অধিকার আর নারীর নিরাপত্তায় আমাদের লক্ষ্যমাত্রাগুলো কেমন হওয়া উচিত?
সুলতানা কামাল :বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত কর্মঠ এবং যে কোনো সংকট মোকাবিলার শক্তি ধারণ করেন। তাদের অধিকার ও মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তাদের মধ্যে যে দেশপ্রেম ও কর্মোদ্যোগ রয়েছে তাকে জাগ্রত করে মানবাধিকারবোধ সম্পন্ন সমাজ-সংস্কৃতি গঠনের ভেতর দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব বলে দৃঢ়বিশ্বাস রাখি। সব মানুষের জন্য সমতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারই আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত। এই নীতিগুলোর বাস্তবায়নেই আমরা মানুষের অধিকার আর নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব।
বিষয় : সবার মানবিক মর্যাদা
মন্তব্য করুন