প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০১৯
মুনতাসির রশিদ খান
শপিংয়ে আসক্তির তাড়া
এই আসক্তিটা নানাভাবে আপনাকে তাড়া দিতে পারে-
ূ আপনি যদি মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন তো আপনার ভেতর শপিং-ভূতটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তখন শপিং-মার্কেট ছাড়া কিছুই ধরা দেবে না চোখে। আমাদের অনেকেই আছেন; যারা প্রয়োজনীয় দ্রব্যটি মনের মতো না কেনা পর্যন্ত বারবার কিনেই যান। কিনতেই থাকেন।
ূ কেউ কেউ আবার চান তার উপস্থিতি কারও চোখ যেন অন্য দিকে টেনে নিতে না পারে; সেই চেষ্টাতেই থাকেন। তাই তারা মার্কেটের সবচেয়ে রঙিন পোশাকটি না কিনে দম ফেলেন না। তাদের ধারণা, এই কালারই চোখে গোলক ধাঁধা লাগিয়ে দেবে।
ূ অন্যের প্রয়োজনে শপিংয়ে গেলেও কম দামে পেলেও অনেকে কিনতে থাকেন। আবার তার খরচের হাত যে অনেক লম্বা, সেটা বোঝানোর জন্যও অনেকে কিনে যান।
ূ আশপাশে তাকালে এমন লোকের লিস্টও লম্বা দেখা যায়, যারা কেনেন আর ফেরত দেন। এতেই তাদের স্বস্তি!
ূ কালেভদ্রে আবার শখের শপিংপাগলুও দেখা যায়। তারা বাজারে আসা নতুন যে কোনো ট্রেন্ডই সংগ্রহে রাখার জন্য মার্কেটের এমাথা-ওমাথা ঘুরে বেড়ান।
শপিং-আসক্তির পূর্বাভাস
নানাভাবে আপনার ভেতর এই বীজ গজিয়ে উঠতে পারে। এনিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যায়- ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলেন, শপিংয়ের সময় ব্রেন যেভাবে কাজ করে বা বিক্রেতা যে প্রতিক্রিয়া দেখান, তাতে অনেকেই আসক্ত হয়ে যান তার প্রতি। কেনাকাটার সময় ক্রেতার ব্রেনে অ্যান্ডোসপ্রিন আর ডোয়ামিন অ্যানজাইম নির্গত হয় আর এতেই আসক্ত হয়ে পড়েন অনেকে। তবে এর সংখ্যা সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। আর বাকিরা তাদের পরীক্ষায় ফেল!
আসক্তির লক্ষণ
এটা খুবই জটিল এবং হতচ্ছাড়া রকমের লক্ষণ। এই রোগে ভোগা পাগলুদের কিছু লক্ষণ হতে পারে এমন-
ূ এদের প্রধান লক্ষণটাই গিয়ে ঠেকে আবেগের মধ্যে। তখন তারা অন্য আসক্তদের মতো লক্ষণগুলোকে লুকাতে চান।
ূ তাছাড়া পরিবারের আয়-ব্যয়ের সামর্থ্যের কথা না ভেবে তারা শপিং করেই যাবেন।
ূ হতাশা বা রাগ-ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটাতে যদি আপনার পরিবারের মানুষটি শপিং করে যায় তাকেও আপনি এই তালিকায় স্থান করে দিতে পারেন।
শপিং-আসক্তির প্রভাব
শপিং আসক্তিটা হতে পারে দু'ভাবে। এর একটি স্বল্প মেয়াদি। এই স্বল্প সময় বা কালে-ভদ্রে শপিং করতে কার না ভালো লাগে! কিন্তু এর সঙ্গে যেন যুক্ত হতে পারে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা অপরাধবোধ। কারণ এই থেকেই কেনাকাটির ইচ্ছেটা বাড়তে থাকে। আর এই আসক্তির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে আর্থিক অবস্থার ওপর। এমনকি ঋণ করে কেনাকাটি করাটাও স্বাভাবিক হয়ে পড়ে। এ থেকে মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হয় আপনার পারিবার। শুধু তাই নয়, পারিবারিক সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যেতে পারে এতে। আপনার কাছ থেকে একে একে দূরে সরতে থাকে আপনার প্রিয়জন।
ঝটপট যাচাই
খুব সহজেই নিজেকে কিংবা আপনার পরিবারের একান্ত প্রিয় মানুষ বা কাছের মানুষ শপিংয়ে আসক্ত কি-না তা যাচাই করে নিতে পারেন। কিন্তু কীভাবে; চলুন দেখে নেওয়া যাক-
ূ আপনি রেগে থাকলে শপিং করেন?
ূ শপিংয়ে আপনার বড়-ছোট কোনো সমস্যা হচ্ছে কি-না?
ূ শপিং নিয়ে আপনার প্রিয় মানুষের সঙ্গে ঝগড়া হচ্ছে কি-না?
ূ আপনার ভেতর এমন চেতনা জাগ্রত হয় যে, আমি শপিং করে অনেক বড় কিছু করে ফেলেছি?
ূ তাছাড়া শপিংয়ের পর আপনার এমন মনে হয় যে, আপনি কোনো কিছুতে লজ্জা পান?
ূ খুব আগ্রহ নিয়ে কেনা পোশাক রেখে আপনি কি আবার মার্কেটের পথে ছুটছেন? সব সময় শপিংয়ের টাকা নিয়ে ভাবেন?
দাওয়াই
শপিং আসক্তির দাওয়াই পুরোটাই নির্ভর করে নিজের ওপর। এর ওষুধেও আশাব্যঞ্জক কোনো ফল পাননি চিকিৎসকরা। তবে হাতাশা কাটানোর ওষুধ থেকে কিছুটা প্রতিকার পেতে পারেন আপনি। আপনার যদি ঘুমুতে সমস্যা হয়, দুশ্চিন্তা আসে বারবার, অতিরিক্ত ঘাম ঝরে, ক্লান্তি অনুভূত হয়, মাথাব্যথা লেগেই থাকে তবে হতাশা কাটানোর ওষুধের সাহায্য নিতে পারেন। তবে এর চূড়ান্ত প্রতিকারের জন্য আপনাকে হতে হবে আত্মসচেতন। তবেই এই ভূত আপনার ঘাড় থেকে ধড়মড়িয়ে নেমে পড়বে!