- শেষের পাতা
- ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগাতে হবে
শেষের পাতা
গোলটেবিল বৈঠক :কৃষি সম্প্রসারণে ভিডিওর ব্যবহার
ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগাতে হবে
সমকাল প্রতিবেদক |
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০ । ০০:০০
আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০ । ০১:৩০
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০ । ০০:০০ । আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০ । ০১:৩০
বৃহস্পতিবার সমকাল কার্যালয়ে 'কৃষি সম্প্রসারণে ভিডিওর ব্যবহার' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ - সমকাল
ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি শিক্ষা ও কৃষি সম্প্রসারণকে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যেসব কৃষিপণ্য অপরিহার্য, তার উৎপাদন আধুনিকায়ন করার বিকল্প নেই। কৃষি খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগাতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সমকাল কার্যালয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা জানান বিশেষজ্ঞরা। 'কৃষি সম্প্রসারণে ভিডিওর ব্যবহার' শিরোনামে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সমকাল, গণসাক্ষরতা অভিযান ও অ্যাকসেস এগ্রিকালচার।
সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র সচিব ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান, অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি ড. আহমদ সালাহউদ্দিন, সাবেক সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ, কৃষি তথ্য সার্ভিসের সাবেক পরিচালক কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম, ড. জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ড. ফারুকুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ সাহিনুল ইসলাম, সিসিডিবির হেড অব প্রোগ্রাম অসিত সিং, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের ডাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, ব্র্যাকের এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটির ম্যানেজার এমডি শাহাদাৎ হোসেন, বিটিভির মাটি ও মানুষের রেজাউল করিম সিদ্দিক, এটিএন বাংলার প্রযোজক মীর এমদাদ আলী ও গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক তপন কুমার দাশ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিবেশসম্মত কৃষিবিষয়ক আন্তর্জাতিক ভিডিও বাংলায় প্রচার সম্পর্কিত ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ড. আহমদ সালাহউদ্দিন। তিনি জানান, অ্যাকসেস এগ্রিকালচার একটি আন্তর্জাতিক অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থা। এর জন্ম ২০০২ থেকে ২০০৪ সালে বাংলাদেশে ইরির (ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট) একটি প্রকল্পের মাধ্যমে। এটি প্রধানত পরিবেশসম্মত কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন দেশের স্থানীয় ভাষায় প্রশিক্ষণ ভিডিও তৈরি করে সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। ২০১৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় কাজ করার জন্য অ্যাকসেস এগ্রিকালচার ইরির সঙ্গে অপর একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে এর কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু হয়।
তিনি জানান, অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের ওয়েবসাইটে বর্তমানে পরিবেশসম্মত কৃষির ওপর দুই শতাধিক ভিডিও আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিচিত্র বিষয়ের ওপর এগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এই ভিডিওগুলো প্রায় ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় ভিডিওর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১০০। এর সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানসম্মত এবং স্থানীয় জ্ঞানের সংমিশ্রণে ধান, দানাদার ফসল, ডাল, স্থায়ী জমির পরিচালনা কৌশল, রোগবালাই দমন, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন ও মাছ চাষ, বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যবহার, কম পানির ব্যবহার করে সেচ ইত্যাদিসহ অন্য অনেক বিষয়ে ভিডিও যুক্ত করা হয়েছে। এসব ভিডিও পাওয়া যাচ্ছেwww.accessagriculture.org এবংwww.agtube.org সাইটে। বর্তমানে www.accessagriculture.org সাইটটি বাংলায় ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। এ সাইট দুটিতে বিনামূল্যে ভিডিও দেখা যায়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে অনেক ধরনের উদ্ভাবন হচ্ছে। এ দেশে মানুষের কাজ করার অমিত সম্ভাবনা আছে। এই সম্ভাবনা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশেও কৃষিতে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এখন কৃষিকে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এ জন্যই অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের ভিডিওগুলো ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি। মূলত এই জরুরি দায়িত্বের বিবেচনা থেকেই গণসাক্ষরতা অভিযান অ্যাকসেস এগ্রিকালচারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষিকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহী করে তুলতে, তাদের সম্ভাবনার জায়গাগুলো বাস্তবে রূপ দিতে গণমাধ্যম, কৃষিবিদ, কৃষি প্রযুক্তিবিদ, অর্থনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখানে যে মাধ্যমে কৃষকের কাছে ভিডিও পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটি কষ্টসাধ্য। ইন্টারনেট কিনে ওয়েবসাইট দেখার জন্য আমাদের প্রান্তিক কৃষকরা কতটা প্রস্তুত, সেটা নিয়ে সংশয় আছে। তারপরও বলব, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। এ জন্য প্রতি গ্রামে কিছু পয়েন্টে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা এলাকা প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। সরকার চাইলে মোবাইল অপারেটরদের দিয়ে এটি করা সম্ভব। এ ছাড়া যে ওয়েবসাইটের কথা বলা হয়েছে, সেখানে ক্লাউড সোর্সিং ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ফলে অনেক বিষয়ে ভিডিও যোগ হবে। সেগুলো অনেক বেশি সহায়তা করবে ডিজিটাল কৃষি শিক্ষায়। তিনি বলেন, সবচেয়ে ভালো হয় যদি স্মার্টফোনের জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করা যায়, যেটির মাধ্যমে কৃষক তার প্রয়োজনীয় তথ্যটি সহজেই পাবেন। ভিডিওর মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণের উদ্যোগ তখনই সফল হবে, যখন এই ভিডিওগুলো খুব সহজে কৃষকের কাছে নেওয়া যাবে।
সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, কৃষিকাজ কৃষকের; কিন্তু কৃষি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন ও শিক্ষার জন্য অবশ্যই কৃষিবিদ, প্রযুক্তিবিদ, অর্থনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত না হলে আগামী দিনের চাহিদা মোকাবিলার জন্য যে কৃষির প্রয়োজন, সেটা মেটানো কষ্ট হবে। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও কৃষিনির্ভর। তিনি আরও বলেন, সমকাল সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত থাকাকে দায়িত্ব মনে করে। এ জন্য নিয়মিত শিক্ষা, প্রযুক্তি, পরিবেশ, কৃষি, বাণিজ্য, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে গোলটেবিল ও আলোচনার আয়োজন করছে। সমকাল এ ধারায় এগিয়ে যেতে চায়।
সাবেক সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ বলেন, ভিডিওর মাধ্যমে যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রামের কৃষকের কাছে এসব ভিডিও তুলে ধরা এখন পর্যন্ত সহজসাধ্য নয়। কারণ কৃষকরা এখনও ওয়েবসাইট ব্যবহারে অভ্যস্ত নন। তবে মোবাইল ফোন অ্যাপ তৈরি করা হলে কিংবা মোবাইল ফোনকে ব্যবহার করে ভিডিও প্রচার করা হলে সেটা অনেক বেশি সময়োপযোগী হবে। তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতার পরও বাংলাদেশের কৃষকদের কৃষিকাজে অভিজ্ঞতা ও উদ্ভাবনী শক্তি দুটোই আছে। এখন সবার দায়িত্ব হচ্ছে কৃষককে সহায়তা করা।
কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভাষা। আমাদের কৃষকরা আঞ্চলিক ভাষায় অভ্যস্ত। অনেকেই প্রমিত বাংলার অনেক শব্দের মানে বোঝেন না। এ কারণে আঞ্চলিক বাংলায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। এই ভিডিও প্রচারে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি কৃষি সাংবাদিক ফোরামসহ গণমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাংলাদেশে একেক এলাকায় একেক ধরনের কৃষির প্রচলন। কোথাও নদীকেন্দ্রিক, কোথাও হাওরকেন্দ্রিক কৃষি, কোথাও বিল, কোথাও একেবারে শুকনো ভূমি। এ কারণে কোন এলাকায় কোন ধরনের ভূমিতে কী ধরনের ফসল হয়, তা নির্ধারণ করে এর ওপর আলাদা ভিডিও নির্মাণ করলে সেটা অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
রেজাউল করিম সিদ্দিক বলেন, যে ভিডিওগুলো তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো নির্মাণে তিনিও যুক্ত ছিলেন। প্রায় ৮০টি ভিডিও তিনি দেখেছেন। এগুলো আরও সমৃদ্ধ করতে হবে কৃষির বিভিন্ন খাতের ওপর পৃথক ভিডিও নির্মাণের মধ্য দিয়ে।
রিয়াজ আহমেদ বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য যে ধরনের কৃষির প্রয়োজন, তার আধুনিকায়ন জরুরি। কারণ তার ওপরই নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ। এ জন্য সব সময়ই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কৃষি বিষয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষি উৎপাদনকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
ড. ফারুকুল ইসলাম বলেন, কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে পরিবেশও খুব গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাকসেস এগ্রিকালচার পরিবেশসম্মত কৃষিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যে ভূমিকা নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। তবে কৃষি সম্প্রসারণে ভিডিও তৈরির জন্য দেশের একেক অঞ্চলের কৃষির ওপর আরও নিবিড় গবেষণা, সমীক্ষা চালিয়ে স্ট্ক্রিপ্ট তৈরি করতে হবে। প্রশিক্ষণ ভিডিওতে যেন কোনো ভুল বা ত্রুটিপূর্ণ তথ্য না যায়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
কৃষিবিদ সাহিনুল ইসলাম বলেন, যে অ্যাপের কথা বলা হচ্ছে, সে ধরনের কিছু অ্যাপ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস তৈরি করেছে। তবে এগুলোর আরও উন্নয়ন দরকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও নানাভাবে কৃষককে প্রশিক্ষিত করছে। এর সঙ্গে অ্যাকসেস এগ্রিকালচার যুক্ত হলে কাজগুলো আরও ত্বরান্বিত হবে।
অসিত সিং বলেন, তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছেন, কৃষকরা কখনই ফসলের নায্যমূল্য পান না। যে কারণে তারা ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদন করে দাম না পেয়ে মাথায় হাত দেন। আর অন্য সময়ে আমদানি কম হলে দেশের মানুষকে দেড়শ', দুইশ' টাকায় পেঁয়াজ খেতে হয়। বাংলাদেশে কৃষিপণ্যের সংকট কখনই হবে না, যদি কৃষককে সময়মতো উপযুক্ত মূল্য দেওয়া যায়।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পরিবেশসম্মত কৃষির জন্য দূষণমুক্ত ফসল উৎপাদন করতে হবে। আহছানিয়া মিশন সে লক্ষ্যে কাজ করছে। দূষণমুক্ত ফলনের ওপরও ভিডিও নির্মাণ করা দরকার।
শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ব্র্যাক দেশের কৃষি অর্থনীতি, কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সফল বিপণন নিয়ে কাজ করছে।
মীর এমদাদ আলী বলেন, কৃষক পণ্য উৎপাদনের পর কীভাবে বিপণন ও সংরক্ষণ করবেন, সে বিষয়েও ভিডিও নির্মাণ করা উচিত।
তপন কুমার দাশ বলেন, সারাদেশে গণসাক্ষরতা অভিযানের কার্যক্রম রয়েছে। এই কার্যক্রমকে ব্যবহার করে কৃষকদের মাঝে প্রশিক্ষণ ভিডিও ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন তারা।
মন্তব্য করুন