- শেষের পাতা
- থমকে আছে সেরনিয়াবাত, শেখ মনি হত্যার বিচারও
শেষের পাতা
থমকে আছে সেরনিয়াবাত, শেখ মনি হত্যার বিচারও

সেরনিয়াবাত হত্যা :মামলার বিবরণে জানা যায়, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি তৎকালীন পানি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতে হামলা চালায় সেনা সদস্যরা। তাদের মধ্যে সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, আজিজ পাশা ও নুরুল হুদা বাসার ভেতরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে সব সদস্যকে ড্রয়িংরুমে জড়ো করে। এক পর্যায়ে ব্রাশফায়ার করে আবদুর রব সেরনিয়াবাতসহ আটজনকে হত্যা করে রক্তপিপাসু ঘাতকরা। নিহত অন্যরা হলেন- আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত, চাচাতো ভাই শহীদ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত হাসানাত বাবু (আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে), গৃহপরিচারিকা লক্ষ্মীর মা, গৃহপরিচারক পোটকা ও আবদুর রহিম খান রিন্টু। সে দিনের হামলায় আহত হয়েছিলেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর মা আমেনা বেগম (বঙ্গবন্ধুর বোন), স্ত্রী শাহান আরা বেগম, ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, বোন বিউটি সেরনিয়াবাতসহ আরও তিনজন।
সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ১৯৯৬ সালের ২১ অক্টোবর আবুল হাসানাতের স্ত্রী শাহান আরা বেগম বাদী হয়ে ঢাকার রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় মেজর শাহরিয়ার, মেজর আজিজ পাশা, ক্যাপ্টেন মাজেদ, ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা হিরুকে আসামি করা হয়। ১৯৯৭ সালের ৩০ জুলাই ১৫ সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। বর্তমানে মামলাটি ঢাকা প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল মামুনের আদালতে বিচারাধীন। এ বিষয়ে ওই আদালতের প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার দুলাল সমকালকে বলেন, চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় অনুসারে কার্যকর হয়েছে। অন্য আসামিরা এখনও পলাতক। শিগগিরই এ মামলা নিষ্পত্তির জন্য আদালতের নজরে নেওয়া হবে।
শেখ মনি হত্যা :মামলার বিবরণে জানা যায়, ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি ঘাতক দল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শেখ ফজলুল হক মনির ১৩/১-এর বাসায় আক্রমণ চালায়। ওই সময় তারা খুন করে শেখ মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে। ১৯৯৬ সালের ২০ নভেম্বর ধানমণ্ডি থানায় ১৮ জনকে আসামি করে মামলা হলেও মামলাটির কোনো অগ্রগতি নেই। ওই মামলায় সাবেক উপমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়। তদন্তের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২০০২ সালের ২২ আগস্ট মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তবে সংশ্নিষ্ট কেউই বলতে পারছেন না মামলাটি এখন কোথায় থেমে আছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পিপির একান্ত সচিব মাসুদ পারভেজ সমকালকে বলেন, মামলাটি সম্পর্কে অনেক খোঁজ-খবর করার পরেও সর্বশেষ অবস্থা জানা যায়নি। উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে মামলার নথি উদ্ধারের চেষ্ট চলছে।
মোহাম্মদপুরে মর্টার হামলা :মামলার বিবরণে জানা যায়, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বিপথগামী সেনাসদস্যরা বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আক্রমণের সময় কামানের গোলা ছুড়লে তা গিয়ে মোহাম্মদপুরে শেরশাহ সুরি রোডের ৮ ও ৯ এবং ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বাড়ির (বস্তি) ওপর পড়ে। এতে নিহত হন নারী, শিশুসহ ১৩ জন ও আহত প্রায় ৪০ জনের মধ্যে কয়েকজন পুরুষ পঙ্গু হয়ে যান। নিহতরা হলেন- রিজিয়া বেগম ও তার ছয় মাসের মেয়ে নাসিমা, কাশেদা বেগম, ছাবেরা বেগম, সাফিয়া খাতুন, আনোয়ার বেগম (প্রথম), ময়ফুল বিবি, আনোয়ার বেগম (দ্বিতীয়), হাবিবুর রহমান, আবদুল্লাহ, রফিজল, আমিন উদ্দিন আহম্মেদ ও শাহাব উদ্দিন আহম্মেদ।
এ ঘটনায় ৮ নম্বর বাড়ির মালিক মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ১৯৯৬ সালের ২৯ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০০১ সালের এপ্রিলে সিআইডি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এর পর ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর এ মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। তবে ১৭ আসামির মধ্যে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এ পাঁচজন হলো- লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহিউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও মেজর (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ। মামলার বাকি ১২ আসামির মধ্যে ১১ জনই পলাতক। জানা গেছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ মারা গেছে। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে ঢাকার মহানগর চতুর্থ অতিরিক্ত দায়রা জজ নুরুল আমিনের আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলায় ৫৮ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। গত ৯ আগস্ট মামলার তারিখ থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারায় ৪ অক্টোবর নতুন দিন ধার্য করেন আদালত। ওইদিন ৫১ থেকে ৫৮তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে মামলার সংশ্নিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম হেলাল সমকালকে বলেন, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে বিচারকাজ স্থগিত ছিল। তবে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর আবারও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৫ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
মন্তব্য করুন