রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় যে অনুদান পাওয়া যাচ্ছে, তার উল্লেখযোগ্য অংশ যাচ্ছে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর পরিচালন ব্যয় হিসেবে। এতে রোহিঙ্গারা সহায়তা কম পাচ্ছে। এ ত্রাণ কর্মসূচির পরিচালন ব্যয় এবং প্রাপ্ত তহবিলের স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট।

রোহিঙ্গাদের অনুদানের স্বচ্ছতা নিয়ে এক আলোচনা সভায় সংস্থাটি এ উদ্বেগের কথা জানায়। গতকাল ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় কোস্ট ট্রাস্ট এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

পল্লী-কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আবদুস সালাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ উইংয়ের মহাপরিচালক নাহিদা সোবহান, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সাপ্পো প্রমুখ। কোস্ট ট্রাস্টের রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার কর্মকর্তা মজিবুল হক মনির।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ অঙ্গ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের তহবিল এসেছে। প্রত্যেক রোহিঙ্গার জন্য এসেছে মাথাপিছু ৫৭ হাজার টাকা। তহবিলের কত অংশ রোহিঙ্গাদের জন্য আর কত অংশ সংস্থাগুলোর প্রধান কার্যালয় বা মাঠ পর্যায়ে তাদের পরিচালন ব্যয় বাবদ কত খরচ হয়েছে- এ বিষয়েও তথ্য প্রকাশ করা উচিত। জাতিসংঘ অঙ্গ সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। স্থানীয় এনজিওর মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পরিচালন ব্যয় কমে আসবে।

মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো স্থানীয় বিশেষজ্ঞ নিয়োগ না দিয়ে আফ্রিকানদেরও নিয়ে আসছে, যাদের এ দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের বেতনও অনেক বেশি দিতে হচ্ছে। এ কারণেও পরিচালন ব্যয় বাড়ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ উইংয়ের মহাপরিচালক নাহিদা সোবহান বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য টেকসই, নিরাপদ এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন। এই মানবিক সংকটে বৃহত্তর সমন্বয় খুব প্রয়োজন। মিয়া সাপ্পো বলেন, অংশীদারিত্বই এর প্রয়াসে সাফল্য আনতে পারে। উন্নয়ন কার্যক্রমে আরও বেশি বিনয়ী এবং সহযোগিতার মনোভাবসম্পন্ন হতে হবে এবং সমস্যা সমাধানে আশাব্যঞ্জক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ প্রতিনিধি পাপা কাইসমা সিলা বলেন, কক্সবাজারের জনগণের ওপর থেকে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা কমিয়ে আনা তাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনই হতে পারে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর সমাধান। এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আবদুস সালাম বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা আন্তর্জাতিক। এ কারণে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে না দেখে আন্তর্জাতিকভাবে দেখতে হবে। এনজিওগুলোর কাজ মানবিক সহায়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। এ ছাড়া স্থানীয় এনজিওগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। আরও বক্তব্য দেন অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি অনিতা কাট্টাখুজি।

মন্তব্য করুন