
অভিযান শুরুর পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৩০টি ক্লাব ও বারে অভিযান চালানো হয়। ক্যাসিনোঝড়ের কারণে ২০১৯ সাল যুবলীগ দক্ষিণের বহিস্কৃৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ আরও অনেকের পতনের বছর বলেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। যদিও কেউ কেউ এখনও রয়েছেন বহাল তবিয়তে। অনেকে আবার গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিদেশ থেকে দেশে ফিরছেন না।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত ৭ সেপ্টেম্বর দলের যৌথ সভায় দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। এর পর দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। ওই সভায় যুবলীগের দুই নেতার সমালোচনাও করা হয়। এর পাঁচ দিনের মাথায় ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযানের প্রথম দিন গ্রেপ্তার হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া। তাকে সংগঠন থেকে বহিস্কারও করা হয়। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অভিযোগের কারণে আলোচনায় আসে সম্রাটের নাম। খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া গ্রেপ্তারের পর কয়েক দিন শত শত নেতাকর্মী নিয়ে কাকরাইলের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন তিনি। অভিযানের ১৯ দিনের মাথায় সহযোগী আরমানসহ গ্রেপ্তার হন সম্রাট।
এরই মধ্যে টানা অভিযানে ঠিকাদার মোগল জি কে শামীম, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি লোকমান হোসেন ভুঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধান, ক্যাসিনোর হোতা দুই ভাই এনামুল হক ওরফে এনু ভূঁইয়া ও রুপন ভূঁইয়া, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীব, ময়নুল হক মনজু, কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজসহ অনেকে গ্রেপ্তার হন।
র্যাব বলছে, শুদ্ধি অভিযানের পর র্যাবের হাতে ২৩৬ জন গ্রেপ্তার হন। এ পর্যন্ত র্যাব দেশি-বিদেশি মুদ্রাসহ আট কোটি ৪৫ লাখ টাকা জব্দ করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে ১৬৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার এফডিআর, ১৩২টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও ছয় কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক। আরও জব্দ করা হয় আট কেজি স্বর্ণ। এখন পর্যন্ত বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ২৫টি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক ইয়াবা, বিদেশি মদ ও অন্যান্য মাদক আটক করা হয়। খালেদ ও সম্রাটের কার্যালয় থেকে টর্চার সেলে ব্যবহূত বিভিন্ন আলামত পাওয়া যায়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১১টি ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। এরই মধ্যে গ্রেপ্তার অনেকের বিরুদ্ধে অল্প সময়েই চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তবে ক্যাসিনোকাণ্ড সামনে রেখে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু হয়েছে, তা শক্ত হাতে অব্যাহত থাকুক- এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
মন্তব্য করুন