প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় যারা জড়িত এবং যারা এ হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরি করেছে ও খুনিদের পাশে ছিল- তারাও সমানভাবে দায়ী। জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার হয়েছে। সেদিন বেশি দূরে নয়; এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত ও ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল- সেটাও বের হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা এ দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। দেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী যেদিন দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে; মানুষ উন্নত জীবন পাবে এবং ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে- সেদিনই বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন পূরণ করতে পারব। সেদিনই জাতির পিতার হত্যার প্রকৃত প্রতিশোধ নেওয়া হবে।

দ্রুত উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনে বিভিন্ন মহলের দাবির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপথ্যে কারা রয়েছে; কারা এর পেছনে রয়েছে- সে জন্য তো বেশি খোঁজার দরকার নেই। তখনকার পত্র-পত্রিকা ও তাদের বক্তব্য খুঁজে বের করেন; অনেক খবর আপনাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে। একটি দেশ প্রতিষ্ঠার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে বছরের পর বছর সময় লাগে। সেখানে একটি বছরও সময় দেওয়া হলো না; শুরু হলো সমালোচনা। আর এটা হলো না কেন, সেটা হচ্ছে না কেন- এমন নানা কথা লেখা হলো। কারা লিখেছিল? কাদের খুশি করতে? এবং কারা এ হত্যাকাণ্ডের জন্য একটা অবস্থান তৈরি করছিল? যাকে বলে ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। সেটা কারা করছিল?

শেখ হাসিনা আরও বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এসেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে যখন বঙ্গবন্ধু গড়ে তুলছিলেন; দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত মানুষের কল্যাণে কাজ শুরু করেন; মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছিল- তখনই অর্থাৎ ৭২ সাল থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা, জাসদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। পাকিস্তানের দোসররা তখন হঠাৎ হাওয়া হয়ে গেল। তারা বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টিতে মিশে গিয়ে নানা চক্রান্ত চালাতে লাগল। পত্র-পত্রিকায় নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা '৭৫-এর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং যারা এ হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরি করেছিল; তারাও সমানভাবে দায়ী। আমি শুধু এ হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে খুনিদের বিচার করেছি। সেদিন বেশি দূরে নয়; হত্যাকাণ্ডের পেছনে ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীদের চেহারাও ধীরে ধীরে বের হবে। বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করতে সরকারের প্রচেষ্টা তুলে ধরার পাশাপাশি এক দিন তাদেরও মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা সম্ভব হবে বলে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আবেগজড়িত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন আমার বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের রক্তের কেউ বেঁচে থাকুক- তা চায়নি ঘাতকরা। পিতার মতো আমিও রক্ত দিতেই দেশের মাটিতে পা দিয়েছিলাম। আমার জীবনে কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই; ভয়ও নেই। মৃত্যুকে অনেকবার সামনে থেকে দেখেছি; কখনও ভীত হইনি। আমি সব সময় প্রস্তুত- যে কোনো সময় চলে যেতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ বেঁচে আছি, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রক্ত দিয়ে গেছেন। ভালোবাসা দিয়ে তিনি এ দেশটা স্বাধীন করে গেছেন; দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রচেষ্টা নিয়েছেন। তার সে স্বপ্ন পূরণে দেশকে এগিয়ে নেওয়াই আমাদের আজকের দিনের প্রতিজ্ঞা। আর সে লক্ষ্যেই আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। আরও এগিয়ে যাব। জাতির পিতার রক্ত কখনও বৃথা যাবে না, বৃথা যেতে দেব না।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে স্মরণসভায় সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পারভীন জাহান কল্পনা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। গণভবন প্রান্ত থেকে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।





মন্তব্য করুন