একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্বাধীন ও মুক্ত চলাচলের পথে সবচেয়ে বড় উপকরণ সাদাছড়ি। সাদাছড়ি ব্যবহারকারী চলার পথে বস্তুগত বাধা, চড়াই-উতরাই, গর্ত ইত্যাদি সল্ফপর্কে ধারণা করতে পারেন তার ছড়ির মাধ্যমে। আদর্শ সাদাছড়ি হবে সোজা, দৃঢ়, হালকা এবং মাটি থেকে ব্যবহারকারীর বুকের মধ্যভাগ পর্যন্ত দীর্ঘ। সাদাছড়ি ব্যবহারের রয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট কৌশল। ঙৎরবহঃধঃরড়হ ধহফ গড়নরষরঃু প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে যে কোনো বয়সের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি এ কৌশলগুলো আয়ত্ত করতে পারেন। প্রশিক্ষিত ব্যক্তি সাদাছড়ি ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে, নিরাপদে, সাবলীলভাবে পথ চলতে পারেন। তবে প্রযুক্তির কল্যাণে সাদাছড়িতেও লেগেছে উদ্ভাবনের ছোঁয়া। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশসহ উন্নত অনেক রাষ্ট্রে ব্যবহূত হচ্ছে ঝসধৎঃ ঈধহব, যার আল্ট্রাসনিক সেন্সর নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত চলার পথের প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করে ভাইব্রেশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করে দেয়।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির কাছে সাদাছড়ি শুধু তার পথচলার সহায়ক উপকরণ নয়, এটি তার আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক। শনিবার ছিল এই দিবস।
১৯৯৬ সাল থেকে সরকারিভাবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কর্মরত সংগঠনগুলোর যৌথ আয়োজনে যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্ব সহকারে বাংলাদেশে নিয়মিত 'বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস' উদযাপন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশের প্রচারমাধ্যম- বেতার, টেলিভিশন, সংবাদপত্র দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- 'সাদাছড়ির নিশ্চিত ব্যবহার, এ দিবসের অঙ্গীকার।'
আমাদের দেশে ইমারত, রাস্তা, ফুটপাত ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে সার্বজনীন নকশা অনুসরণ করা হয় না। এতে করে সাদাছড়ি ব্যবহারকারীর মুক্ত চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া অবৈধ স্থাপনা এবং নির্মাণসামগ্রী ফুটপাত দখল করে রাখায় একজন দৃষ্টিসল্ফপন্ন ব্যক্তির জন্যই পথচলা যেখানে কষ্টকর, একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির পক্ষে সেখানে চলা দুঃসাধ্য, অনিরাপদ। ফুট ওভারব্রিজ, জেব্রা ক্রসিং, কোথাও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির উপযোগী ব্রেইল বা টকিং পদ্ধতিতে নির্দেশনা প্রদানের ব্যবস্থা নেই। রাস্তায় রয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ, গর্ত, ড্রেনের ওপর নেই স্ল্যাব। গণপরিবহনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকলেও এর বাস্তবায়ন নেই।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সাদাছড়ি ব্যবহার কৌশল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের দেশে উন্নত মানের সাদাছড়ি তৈরি করতে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সহজশর্তে ঋণ দিয়ে উৎসাহ প্রদান করা যেতে পারে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উন্নতমানের সহায়ক উপকরণ তৈরি করতে তরুণ উদ্ভাবকদের উৎসাহিত করতে হবে। সাদাছড়ির গুরুত্ব সল্ফপর্কে যানবাহনের চালককে সচেতন ও সাবধানী হওয়ার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ গাড়িচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের সময় শর্ত আরোপ করতে পারে। এ ছাড়াও তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষায় সরকারকে আরও সচেষ্ট হতে হবে। সরকারের বিল্ডিং কোড সংশোধন ও প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিশেষ চাহিদা পূরণের নির্দেশনা ও তাদের ব্যবহারোপযোগী করার অনুকূল বিধান অন্তর্ভুক্ত করা চাই।
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ভিজ্যুয়ালি ইল্ফেপয়ার্ড পিপলস সোসাইটি (ভিপস)

মন্তব্য করুন