নতুন প্রজন্মের ফোন হিসেবে ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করছে ফোল্ডিং তথা ভাঁজযোগ্য ফোন। ফোল্ডিং ফোন হয়ে উঠেছে ফ্যাশন এবং আভিজাত্যের প্রতীক। নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে গ্রাহক আকৃষ্টে স্মার্টফোনের শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলো এরই মধ্যে ফোল্ডিং ফোন বাজারে এনেছে। এই তালিকায় রয়েছে স্যামসাং, হুয়াওয়ে, মটোরোলা, অপো, শাওমির মতো স্মার্ট ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। স্মার্ট ডিভাইস জায়ান্ট অ্যাপলের পাশাপাশি ভাঁজযোগ্য ফোন নিয়ে কাজ করছে এলজি, ভিভো, টিসিএল, ওয়ানপ্লাসের মতো কোম্পানি। দাম একটু বেশি হলেও ফোল্ডিং ফোনের জাদুর স্পর্শ পেতে মুখিয়ে আছেন ব্যবহারকারীরা।

ফোল্ডিং ফোনের বাজারে বলা যায় একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ান ইলেক্ট্রনিক্স জায়ান্ট স্যামসাংয়ের দখলে। স্যামসাংয়ের একাধিক ভাঁজযোগ্য ডিভাইস বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোল্ড এবং গ্যালাক্সি ফ্লিপ নামে দুটি সিরিজের ভাঁজযোগ্য ফোন বাজারজাত করছে। সদ্য বিদায়ী বছরে স্যামসাং বাজারে ছেড়েছে গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ৪ এবং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৪ ডিভাইস। স্যামসাংয়ের ফোল্ডিং ডিভাইসের আগের সংস্করণে কিছু ত্রুটি দেখা দিলেও জেড ফ্লিপ ৪ কিংবা জেড ফোল্ড ৪ গ্রাহকদের চমৎকার অভিজ্ঞতা দিয়েছে। গত আগস্টে বিশ্ববাজারের পাশাপাশি দেশে আসে স্যামসাংয়ের ভাঁজযোগ্য ফোন গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৪ ও জেড ফ্লিপ ৪। স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ফোরে রয়েছে ৭.৬ ইঞ্চি মেইন এবং ৬.২ ইঞ্চি কভার (ডায়নামিক অ্যামোলেড টুএক্স) ডিসপ্লে; ৫০+১২+১০ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ; সেই সঙ্গে ৪ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট এবং ১০ মেগাপিক্সেল কভার ক্যামেরা। গ্যাজেটটিতে যুক্ত হয়েছে অক্টাকোর প্রসেসর (৩.১৮ গিগাহার্টজ পর্যন্ত), ১২ গিগাবাইট র‌্যাম, ২৫৬ গিগাবাইট রম এবং ৪৪০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি। ফাইভজি সমর্থিত ডিভাইসটির ওজন ২৬৩ গ্রাম। গ্রে গ্রিন, বেইজ ও ফ্যান্টম ব্ল্যাক রঙে গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ফোর ডিভাইসটি বাজারে আসে। দাম ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

অন্যদিকে স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ৪-এ রয়েছে একটি ৬.৭ ইঞ্চি (ডায়নামিক অ্যামোলেড টুএক্স) মেইন এবং ১.৯ ইঞ্চি সুপার অ্যামোলেড কভার ডিসপ্লে। স্মার্টফোনটিতে ১২+১২ মেগাপিক্সেল রিয়ার এবং ১০ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে ৮ গিগাবাইট র‌্যাম এবং ২৫৬ গিগাবাইট রম। ৩.১৮ গিগাহার্টজ গতির অক্টাকোর প্রসেসর যুক্ত ডিভাইসটিতে আছে ৩৭০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি। ফাইভজি নেটওয়ার্ক সমর্থিত ডিভাইসটির ওজন ১৮৭ গ্রাম। পার্পল, গ্রে ও পিঙ্ক গোল্ড ভ্যারিয়েশনের গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ ৪-এর দাম ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

একই সময়ে মটোরোলা বাজারে ছাড়ে রেজর সিরিজের ফোল্ডিং ফোন রেজর ২০২২। অ্যান্ড্রয়েড ১২ চালিত ২০০ গ্রাম ওজনের ফোনটিতে রয়েছে দুটি স্ট্ক্রিন। যার প্রধানটি ৬.৭ ইঞ্চি, অন্যটি ২.৭ ইঞ্চি। ফোনটি ভাঁজ করা থাকলে ছোট পর্দাটি চালু থাকে। স্ন্যাপড্রাগন ৮ প্লাস জেন ১ প্রসেসর চালিত ফোনটির ৮ জিবি ও ১২ জিবি র‌্যামের আলাদা সংস্করণ রয়েছে, যাতে মডেলভেদে স্টোরেজ রয়েছে ১২৮, ২৫৬ ও ৫১২ জিবি। ডিভাইসটির পেছনে রয়েছে ৫০ মেগাপিক্সেল ও ১৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা সেটআপ। এ ছাড়া সামনে রয়েছে ৩২ এমপি ক্যামেরা সেটআপ। আছে ৩৫০০ এমএএইচ ব্যাটারি। ডিভাইসটি খুব দ্রুত চার্জ হয়, তুলনামূলক বেশি সময় চার্জ ধরে রাখতে সক্ষম। বলা যায়, স্যামসাংয়ের ভাঁজযোগ্য ডিভাইসের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মটোরোলা রেজর ২০২২। মটোরোলার হ্যান্ডসেটটি ফটোগ্রাফিতেও ভালো অভিজ্ঞতা দেবে। এর আগে মটোরোলা বাজারে ছেড়েছিল রেজর ২০২০ মডেলের ফোল্ডিং ফোন। তবে ফিচার ও জনপ্রিয়তায় আগের সংস্করণকে ছাড়িয়ে গেছে মটোরোলা।

ভাঁজ ফোনে সত্যিকার অর্থে স্যামসাংকে টেক্কা দিচ্ছিল চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ে। তবে মার্কিন-চীন দ্বন্দ্বে স্মার্টফোনে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারের সুবিধা হারিয়ে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়েছে কোম্পানিটি। ২০২০ সালে হুয়াওয়ে মেট এক্সএস নামে ফোল্ডিং ফোন ছেড়ে তাক লাগিয়ে দেয়। এর আগে কোম্পানিটি বাজারে ছেড়েছিল মেট এক্স ডিভাইস। ৮ ইঞ্চি ও ৬ ইঞ্চি পর্দার মেট এক্সএসে রয়েছে কিরিন ৯৯০ ফাইভজি সিপিইউ, ৮ জিবি র‌্যাম ও ৫১২ জিবি স্টোরেজ। ৪৫০০ এমএএইচ ব্যাটারি সমৃদ্ধ ডিভাইসটির পেছনে রয়েছে ৪০ এমপি, ৮ এমপি ও ১৬ এমপি ক্যামেরা সেটআপ। বড় পর্দা, স্থায়িত্ব এবং ফ্যাশনেবল ডিজাইনের কারণে দ্রুতই গ্রাহকপ্রিয় হয়ে ওঠে ডিভাইসটি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কোম্পানিটি বাজারে আনে পি ৫০ পকেট নামে ফোল্ডিং ডিভাইস। তবে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়ে ফোল্ডিং ফোনের আর কোনো সংস্করণ আনতে পারেনি হুয়াওয়ে।

ফোল্ডিং ফোনের বাণিজ্যে টক্কর দিতে চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা অপোও শামিল হয় ২০২১ সালে। ওই বছরের শেষের দিকে কোম্পানিটি উন্মোচন করে প্রথম ফোল্ডিং ফোন অপো ফোল্ড এন। গত ২৩ ডিসেম্বর কোম্পানিটি তাদের ফোল্ডিং সিরিজের নতুন ফোন উন্মোচন করেছে। অ্যান্ড্রয়েড ১৩ নির্ভর কালার ওএস ১৩ চালিত ফোল্ড এন২ নামে ডিভাইসটিতে রয়েছে ৫১২ ও ২৫৬ জিবি স্টোরেজ, ১২ ও ১৬ জিবি র‌্যাম, ৪৫২০ এমএএইচ ব্যাটারি, স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ১ প্রসেসর। ডিভাইসটির পেছনে রয়েছে ৫০ এমপি, ৩২ এমপি ও ৪৮ এমপি ক্যামেরা। ৭.১ ইঞ্চি ও ৫.৫৪ ইঞ্চি পর্দার ডিভাইসটিতে সেলফির জন্য থাকছে ৩২ এমপি ক্যামেরা। ফোনটি দেশের বাজারে এখনও উন্মোচিত হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ফোনটি ১ লাখ ২০-২৫ হাজার টাকার মধ্যে কেনা যাবে।

চীনা আরেক স্মার্টফোন জায়ান্ট শাওমি ফোল্ডিং ফোন তৈরির দৌড়ে শামিল হয় ২০২১ সালে। ওই বছর কোম্পানিটি উন্মোচন করে তাদের প্রথম ভাঁজযোগ্য ফোন এমআই মিক্স ফোল্ড। সর্বশেষ কোম্পানিটি গত আগস্টে বাজারে এনেছে শাওমি মিক্স ফোল্ড ২ ডিভাইস। ডিভাইসটির মূল পর্দা ৮.২ ইঞ্চির পাশাপাশি রয়েছে ৬.৫৬ ইঞ্চি কাভার ডিসপ্লে। অ্যান্ড্রয়েড ১২ নির্ভর এমআইইউআই ফোল্ড ১৩ চালিত ডিভাইসটিতে রয়েছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ১ অক্টাকোর প্রসেসর। এটি ২৫৬ ও ৫১২ জিবি স্টোরেজ, ১২ জিবি র‌্যাম এবং এক টেরাবাইট স্টোরেজ ও ১২ জিবি র‌্যাম সংস্করণে মিলবে। এতে রয়েছে ৫০ এমপি, ৮ এমপি ও ১৩ এমপি ক্যামেরা সেটআপ। সেলফির জন্য রয়েছে ২০ এমপি ক্যামেরা। ডিভাইসটি ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে কেনা যাবে।