২০১৪ সালের পর মোহামেডানের শোকেসে নেই কোনো ট্রফি। চলতি মৌসুমে ভুগতে থাকা দলটির কর্মকর্তারা কোচ বদলাতে বাধ্য হন। শফিকুল ইসলাম মানিককে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় সাবেক তারকা ফুটবলার আলফাজ আহমেদের কাঁধে। কোচের চেয়ারে বসার পর তাঁর হাত ধরেই বদলে যেতে থাকে সাদা-কালো জার্সিধারীরা।

প্রিমিয়ার লিগে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা ক্লাবটিকে সেরা চারে নিয়ে আসেন তিনি। আলফাজের অধীনে মোহামেডানের সাফল্যের গল্পের শুরুটা ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে জয়টি। মঙ্গলবার ফেডারেশন কাপের ফাইনালে কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে প্রথমার্ধে দুই গোল হজমের পরও ভেঙে পড়েননি তিনি।

বরং বিরতির পর একসঙ্গে তিনটি বদলি করে ম্যাচের কৌশলে আনেন পরিবর্তন। তাঁর উজ্জীবিত মন্তব্যে সুলেমান দিয়াবাতেরা হয়ে ওঠেন ভয়ংকর। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ৪-৪ গোলে সমতার পর টাইব্রেকারে আবাহনীকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপের শিরোপা জেতে মোহামেডান। সাদা-কালো জার্সিধারীদের সাফল্যের নায়ক আলফাজ আহমেদকে শূন্যে ভাসিয়ে উচ্ছ্বাস করেন কামরুল-বিপুরা।

নিজের খেলোয়াড়ি জীবনে অনেকবারই আবাহনীর বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পেয়েছেন মোহামেডানের সাবেক তারকা আলফাজ। এবার কোচ হিসেবে পেয়েছেন আবাহনীকে হারানোর স্বাদ। তবে খেলোয়াড় নয়, কোচ হিসেবে পাওয়া জয়কে এগিয়ে রাখছেন আলফাজ, ‘এর আগেও আবাহনীর বিপক্ষে এমন ফাইনাল মোহামেডান খেলেছে, আমি নিজেও সেই ম্যাচে খেলেছি, কিন্তু আমি সেই ম্যাচটিকে এগিয়ে রাখব না। বাংলাদেশের ফুটবলে মোহামেডান-আবাহনীর লড়াই … । এই ম্যাচের জয়ে মোহামেডানের জয় হয়নি, জয় হয়েছে বাংলাদেশের ফুটবলের। অবশ্য এটা আমার জীবনের স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হলাম। স্মৃতি হয়ে থাকবে। এই ট্রফির মাধ্যমে মোহামেডান এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।’

বিরতির মধ্যে খেলোয়াড়দের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শুনিয়েছেন। নতুন পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। তার ফল পেয়েছে দল। তবে আলফাজ নিজের নয়, কৃতিত্ব দিচ্ছেন ফুটবলারদের, ‘বিরতির সময় ড্রেসিংরুমে ছেলেদের বলেছি তোমরা মাথা ঠান্ডা রেখে খেল। ফরমেশনে পরিবর্তন এনেছিলাম। তারা সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে। প্লেয়ার বদলই আমি মনে করি পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। সুজনকে বদল করার সময় একটু টেনশন ছিল। তবে আমাদের আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল বিপুকে টাইব্রেকারে নামানোর। আজকে মোহামেডানের খেলা আমার কাছে মনে হয়েছে বিশাল একটা ফুটবল ম্যাচ। যেভাবে ব্যাকফুটে থেকে সমতায় ফেরা, এগিয়ে যাওয়া, আবার সমতা ফেরা, আবার লিড নেওয়া, সমতা ফেরা, টাইব্রেকারে যাওয়া– আসলে সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছিল না ম্যাচটি কে জিতবে। সুলেমান দিয়াবাতের পারফরম্যান্স অসাধারণ। মুজাফ্ফরভের হাত ভেঙে গেলেও সে দলের জন্য খেলেছে। আসলে আমি বলব, এই প্রশংসার দাবিদার খেলোয়াড়রা। তারা তাদের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে মোহামেডানের জন্য খেলেছে এবং চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’