অবনমনের শঙ্কায় থাকা ভ্যালেন্সিয়ার কাছে ১-০ গোলে হেরে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে রিয়ালের এই হারের চেয়েও বড় খবর হলো, বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। চলতি বছর এই নিয়ে পঞ্চমবার এমন আচরণের শিকার হলেন ব্রাজিলিয়ান এ তারকা। এবারের ঘটনায় পুরো ক্রীড়া দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। ভিনির সঙ্গে হওয়া এমন নিন্দনীয় আচরণের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। স্পেনের বিচার বিভাগের একটি সূত্রের উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, দেশটির পাবলিক প্রসিকিউটর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন। স্পেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর ভ্যালেন্সিয়ার প্রসিকিউটর অফিস সম্ভাব্য ‘হেইট ক্রাইম’ হিসেবে ঘটনাটিকে বিবেচনা করে তদন্ত শুরু করেছে।

ভিনির পাশে ব্রাজিল

স্পেন কিন্তু এ ঘটনায় প্রথমে নীরবই ছিল। পুরো ক্রীড়া বিশ্বে এ ঘটনার তুমুল প্রতিক্রিয়া দেখে শেষ পর্যন্ত তারা অনেকটা তড়িঘড়ি করেই তদন্তে নামে। ভিনির দেশ ব্রাজিলে তো তোলপাড় পড়ে গেছে। ব্রাজিলের বিভিন্ন ফুটবল ক্লাব তো বটেই, সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক দলগুলো এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ফেনোমেনন রোনালদো থেকে শুরু করে নেইমাররা এ লড়াইয়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা এখন জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিতে জাপানের হিরোশিমায় আছেন। সেখান থেকে প্রেসিডেন্ট সিলভা আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ভিনির পাশে থাকার বার্তা দেন, “যে তরুণ রিয়াল মাদ্রিদের সেরা ফুটবলার, তাকে ‘বানর’ বলে আক্রমণ করা হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমাদের এসবের মুখোমুখি হতে হচ্ছে! আসলে বিশ্বের অনেক ফুটবল স্টেডিয়ামেই জঘন্য বর্ণবাদী ঘটনা ঘটছে। ভিনি যে স্টেডিয়ামে যাচ্ছে, সেখানে এমন আচরণ করা হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমি ফিফার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, এ ঘটনার কঠোর ব্যবস্থা নিতে।’ 

ভিনির পাশে ফিফা

এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিয়াল মাদ্রিদের সব ফুটবলার তো বটেই, সাবেক ইংলিশ ডিফেন্ডার রিও ফার্দিনান্দ, কিলিয়ান এমবাপ্পের মতো তারকারাও ভিনিসিয়ুসের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ইনস্টাগ্রামে ভিনির ছবি দিয়ে এমবাপ্পে লিখেছেন, ‘ভিনি, তুমি একা নও। আমরা তোমার সঙ্গে আছি এবং তোমাকে সমর্থন জানাচ্ছি।’ কঠিন এ সময়ে ফিফাকেও পাশে পাচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। এক বিবৃতিতে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেন, ‘ভিনিসিয়ুসের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি। ফুটবলে বর্ণবাদের স্থান নেই। যেসব খেলোয়াড় এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে, তাদের সবার পাশে রয়েছে ফিফা।’ ফুটবল মাঠে বর্ণবাদ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক ম্যাচে কঠিন নিয়ম অনুসরণ করে ফিফা। সব ধরনের ম্যাচেই এ নিয়ম অনুসরণ করা উচিত বলেও মনে করেন ফিফা প্রেসিডেন্ট। 

কী ঘটেছিল ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে 

ম্যাচের ৭০ মিনিটে ভ্যালেন্সিয়ার সীমানায় ভিনিসিয়ুসের দিকে গ্যালারি থেকে একটি বল ছুড়ে মারা হয়। ভ্যালেন্সিয়ার ডিফেন্ডার এবার কুমার্ট সেই বলটি আবার কুড়িয়ে ব্রাজিলিয়ান তারকার দিকে ছুড়ে মারেন। কুমার্টকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে রিয়ালকে ফ্রি কিক দেন রেফারি। এখানেই বাধে বিপত্তি। ফ্রি কিকের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ভ্যালেন্সিয়ার গোল পোস্টের পেছন থেকে একজন দর্শক বর্ণবাদী মন্তব্য করেন। তখন ভিনিসিয়ুস উত্তেজিতভাবে ছুটে যান সে দর্শকের দিকে। তিনি রেফারিকেও গ্যালারির সে অংশ দেখান। তখন মাঠ ছেড়ে যেতে চাইছেন কোচের অনুরোধে থেকে যান ভিনি। যদিও শেষ দিকে লাল কার্ড দেখেন তিনি। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেন, “পুরো স্টেডিয়াম একজন খেলোয়াড়ের প্রতি ‘বানর’ বলে চিৎকার করছে। আমি কখনও এমনটি দেখিনি।” 

ভিনিকেই কাঠগড়ায় তুললেন লা লিগা সভাপতি 

রোববার ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লা লিগা কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেন ভিনিসিয়ুস। ইনস্টাগ্রামে ২২ বছর বয়সী এ তারকা লেখেন, ‘লা লিগায় বর্ণবাদ স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদ কর্তৃপক্ষ ও স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন এটি মনে করে এবং সমর্থকদের দলগুলোকে সাহস জোগায়। যে চ্যাম্পিয়নশিপ আগে রোনালদো, রোনালদিনহো, ক্রিশ্চিয়ানো, মেসিদের দখলে ছিল, সেটি এখন বর্ণবাদের দখলে। বলতে বাধ্য হচ্ছি, স্পেন আজ ব্রাজিলিয়ানদের কাছে বর্ণবাদী দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।’ এর পর লা লিগা তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বের করার কথা বলছে। তবে লা লিগা সভাপতি হ্যাভিয়ের তেবাসের কণ্ঠে ছিল ভিন্ন সুর। ভিনিসিয়ুসকে পাল্টা টুইট করে তিনি লেখেন, ‘বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লা লিগা কী করে ও করতে পারে, সেটা আমরা আপনাকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিজের অনুরোধ করা নির্ধারিত দুটি তারিখে আপনি উপস্থিত হননি। লা লিগার সমালোচনা করার আগে নিজের সম্পর্কে সঠিকটা জানা উচিত।’