
কভিড-পরবর্তীকালে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরাতে গঠিত ‘নিরাপদ ইশকুলে ফিরি’ ক্যাম্পেইন নতুন নামে যাত্রা শুরু করেছে। এ ক্যাম্পেইন সবার জন্য একীভূত ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে কাজ করবে
কভিড মহামারি চলাকালে ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পরিচালিত বিভিন্ন জাতীয় প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এবং বয়স, লিঙ্গ, প্রতিবন্ধিতা, নৃতত্ত্ব জাতিসত্তা, অর্থনৈতিক অবস্থা, স্কুল ও ভৌগোলিক বৈচিত্র্য ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে মূলত সাম্যতা ও একীভূত শিক্ষার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো বোঝার জন্য গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণা কার্যক্রমে সারাদেশের ৯টি জেলা থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
সাম্যতা ও একীভূত শিক্ষার ৮টি মূল বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে–সক্রিয় অংশগ্রহণ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠন প্রবেশগম্যতা, শিখনভিত্তিক অর্জন এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিবেচনা করে গবেষণা প্রশ্নগুলো করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে গবেষণা পদ্ধতি অনুযায়ী সাম্প্রতিক সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, প্রাক-কভিড এবং কভিড-পরবর্তী সময়ে সক্রিয় অংশগ্রহণের হার
lপ্রাথমিক পর্যায়ে ৯০% এবং
lমাধ্যমিক স্তরে ৮০% বেশি ছিল।
একইভাবে মূল গবেষণা তথ্য সংগ্রহ করেও দেখা গেছে যে, করোনার সময়ে অংশগ্রহণের হার ছিল ৮০%।
২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল ৮৭% এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল ৭৫%। শহর-গ্রাম, চর-হাওর এবং নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের শতাংশের হারও প্রায় একই ছিল।
বিভিন্ন শিখন মাধ্যমে বিভিন্ন পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করতে পারার তথ্যে দেখা যায় যে,
l৬০% শিক্ষার্থী টিভিভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পেরেছে
lশুধু ৫৭% আংশিকভাবে ওয়েবভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে পেরেছে
lগবেষণালব্ধ তথ্যের শতাংশের হার, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রকাশিত জাতীয় প্রতিবেদনে প্রদত্ত তথ্যের শতকরা হারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ।
lবিভিন্ন শিখন মাধ্যমে অংশগ্রহণের বিষয়ে শহরের শিক্ষার্থীরা গ্রামের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি অংশগ্রহণ করতে পেরেছে।
lপ্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরেই ছাত্ররা ছাত্রীদের চেয়ে অংশগ্রহণের বেশি সুযোগ পেয়েছে।
এ গবেষণা তথ্য থেকে আরও দেখা গেছে, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রক্রিয়ায় অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। উল্লেখযোগ্য ছিল–
lবিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি যেমন টেলিভিশন, কম্পিউটার, আধুনিক মোবাইল ফোন প্রভৃতি উপকরণের ঘাটতি,
lকভিড পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতার অভাব
lইন্টারনেট সংযোগ এবং আর্থিক সমস্যা।
lছাত্রীদের কম অংশগ্রহণের কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য ছিল গৃহস্থালির কাজে ব্যস্ততা, বাল্যবিয়ে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা।
এছাড়া, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরেই কভিড-১৯ চলাকালীন বিকল্প শিখন মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার হার ছিল ৮০% এর বেশি। শিখন প্রক্রিয়াতে অংশগ্রহণ ও শিখনে সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাড়িতে, স্কুলে এবং পাড়া-প্রতিবেশী থেকে পাওয়া সহায়তার হার ছিল ৫০% এর বেশি।
সাম্যতা ও একীভূত শিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণায় পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে যে, বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য এই বিকল্প মাধ্যমে শিখন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও শিখনের বিষয়টি ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। যেমন
lদৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা কভিড-১৯ এর পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে বলে তাদের জন্য বিকল্প শিক্ষার কার্যক্রমে অংশ নিতে সুবিধাজনক হয়েছে।
lশারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিখন মাধ্যমগুলোতে অংশগ্রহণ ও প্রবেশগম্যতার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক ছিল, যা শারীরিক চলাচলের মাধ্যমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জপূর্ণ হয়ে থাকত।
lলিখতে ও পড়তে প্রতিবন্ধিতা আছে এমন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেও কভিডকালীন বিকল্প শিখন মাধ্যমগুলো ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
lবিভিন্ন সহায়ক প্রযুক্তিগুলোর ইতিবাচক ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পড়ার দক্ষতার পাশাপাশি সাক্ষরতা ও গাণিতিক দক্ষতাও উন্নত করেছে।
lকরোনাকালীন শিখন মাধ্যমে ৭০% নারী শিক্ষার্থী স্কুলে অনুপস্থিত ছিল এবং ৮০% ছাত্রীরা বাড়িতে সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যা কভিড পরিস্থিতিতে শিখন কার্যক্রমে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিখন অর্জন নির্দেশক তথ্যগুলো বিবেচনা করে দেখা গেছে যে, শিখন ঘাটতি শুধু কভিড মহামারিজনিত কারণে নয়। বরং, শিক্ষাব্যবস্থা-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফলে, শিখন ঘাটতি পূরণে
lশিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তরে জাতীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
lশিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ সম্পর্কিত জরুরি অবস্থায় পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট গবেষণা কাঠামো
lবিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনার জন্য নমনীয় ও শিথিলযোগ্য ব্যবস্থাপনার নীতিমালা
lডিজিটাল বৈষম্যকে চিহ্নিত করে প্রবেশগম্যতার ক্ষেত্রে ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং ইন্টারনেট ও ডিজিটাল যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ সুবিধা তৈরি করা।
শিশুদের স্কুলে ফেরা
২০২১ বনাম ২০২২
‘নিরাপদে ইশকুলে ফিরি’ ক্যাম্পেইনের সদস্য সংস্থা ‘ব্র্যাক’ বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল কভিড মহামারি শেষে বিদ্যালয়গুলো ফের খোলার পর ২০২১ সালের উপস্থিতির তুলনায় ২০২২ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের উপস্থিতির হার মূল্যায়ন করা। বাংলাদেশের ছয়টি বিভাগের ২৬৮টি বিদ্যালয় থেকে একটি জরিপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০২১ সালে মোট বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৩২৮টি। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ২৬৮টি। উভয় জরিপে মোট তিন সপ্তাহের উপস্থিতির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল।
জরিপে দেখা গেছে, ২০২২ সালে সামগ্রিক উপস্থিতির হার আগের বছরের (২০২১) তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। উভয় বছর চতুর্থ এবং নবম শ্রেণিতে উপস্থিতি কম ছিল, যা পঞ্চম শ্রেণি এবং দশম শ্রেণিতে ভর্তির আগে ঝরে পড়ার হারকে নির্দেশ করে। ২০২২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন উপস্থিতি চতুর্থ শ্রেণিতে (৮৩ শতাংশ)। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২০২২ সালে নবম শ্রেণিতে সর্বনিম্ন উপস্থিতি ৬৬ শতাংশ, যা ২০২১ সালের তুলনায় বেড়েছে, যখন নবম শ্রেণিতে সর্বনিম্ন উপস্থিতি ছিল ৫৭ শতাংশ।
২০২২ সালে ছেলেমেয়ে উভয়ের সামগ্রিক উপস্থিতি বেড়েছে। তবে, ২০২১-২২ উভয় সালেই মেয়েদের সামগ্রিক উপস্থিতি ছেলেদের তুলনায় বেশি। চতুর্থ শ্রেণিতে ৮১ শতাংশ বনাম ৮২ শতাংশ। পূর্ববর্তী বছরের (২০২১) তুলনায় ২০২২ সালে গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলে সামগ্রিক উপস্থিতি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় ধরনের বিদ্যালয়ে বেড়েছে। তবে নবম শ্রেণিতে শহরের উপস্থিতি কমেছে।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সমন্বিত উদ্যােগ
২৫ জানুয়ারি ২০২৩ অনুষ্ঠিত এডুকেশন সামিটে ‘স্কুলে সমপর্যায়ের শিশু, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের অংশগ্রহণে মানসিক স্বাস্থ্য প্রোগ্রাম’ বিষয়ক একটি উপস্থাপনা করেন ড. মেহজাবীন হক– অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি শুরুতেই এই ধরনের একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সেভ দ্য চিলড্রেনকে ধন্যবাদ জানান। এরপর তিনি স্কুলভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য প্রোগ্রামের আওতায় কী করে সমপর্যায়ের শিশু, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য এবং ফলপ্রসূ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা চর্চা এবং প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, সে বিষয়ে একটি গবেষণার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য কী হতে পারে তা জানান। কেন এই গবেষণাটি করা প্রয়োজন তা ভালোভাবে বোঝাতে তিনি কিছু সহায়ক তথ্য এবং উপযোগিতা তুলে ধরেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য–
lমাধ্যমিক স্কুলে পড়ে এমন কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সামাজিক, শারীরিক এবং আবেগীয় পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়ে থাকে।
lবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, বিশ্বে ১০-২০ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর মাঝে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং এ সংখ্যা প্রায় ১৫০ কোটির মতো।
lবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় আরও পাওয়া গেছে, প্রায় ৫০% মানসিক রোগীর মাঝে রোগ শুরু হয় তাদের ১৪ বছর বয়সে।
l২০১৯ সালে বাংলাদেশে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি জরিপের পাওয়া তথ্যমতে, দেশের ১৩.৬% শিশু কোনো না কোনো ধরনের মানসিক রোগে ভুগছে এবং এর মধ্যে ৯২.৩% কোনো চিকিৎসা পায় না।
আশঙ্কাজনক এই তথ্য আমাদের ভাবতে বাধ্য করে, মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাব এবং সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার কীভাবে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে বাধা দিতে পারে বা বাধা তৈরি করে।
এ বয়সের কিশোর-কিশোরীর মাঝে আবেগীয় জটিলতা (বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা, রাগ, শুচিবাই, প্যানিক অ্যাটাক ইত্যাদি), আচরণগত সমস্যা (অতিচঞ্চলতা, অমনোযোগিতা, ভাঙচুর করা, মারধর করা, আইন অমান্যকারী আচরণ করা ইত্যাদি), আত্মহত্যা ও নিজের ক্ষতি করা (১৫-১৯ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুও তৃতীয় বড় কারণ), ক্ষতি হবে জেনেও যে আচরণ করা (মাদকদ্রব্য সেবন, যৌন সহিংসতা বা আগ্রাসন, পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়া এবং অপরাধমূলক আচরণ করা) এবং সাইকোসিস (অতিমাত্রার মানসিক রোগ: হ্যালুসিনেশন, প্রতিদিনের জীবনযাত্রা ভীষণভাবে ব্যাহত হওয়া)-সহ বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন মাত্রার মানসিক রোগ বা লক্ষণ পাওয়া যায় বলে ড. মেহজাবীন হক বলেন। এ ছাড়াও তিনি কভিডকালীন শিশুরা স্কুল বা ঘরের বাইরে যেতে না পারার কারণে যেসব জটিল এবং বাধাময় পরিস্থিতি পার করেছে এবং এর প্রভাবে শিশুর মনে যে প্রভাব পড়েছে, তাও উল্লেখ করেন। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, অতিমারির সময়ে শিশুদের মানসিক অসুস্থতার মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছিল।
তিনি স্কুল পর্যায়ে মনের প্রাথমিক সেবা কতটা কার্যকর, সে বিষয়ে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাঁর কিছু ব্যক্তিগত কাজের এবং উদ্যোগের মাধ্যমে পাওয়া প্রমাণিত তথ্য উপস্থাপন করেন। সেখানে প্রশিক্ষিত মনোবিজ্ঞানীরা ১৮টি জেলার ২৪২টি স্কুলের ২৪২ জন ছাত্রছাত্রীর ‘মনো প্রাথমিক সেবা’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন এবং এর মধ্য দিয়ে প্রায় প্রত্যেকের মাঝে স্কুলে মানসিক সেবাদানকারী একটি পদের চাহিদা উঠে আসে। এ ছাড়াও তিনি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে পাওয়া যায় এমন সাধারণ লক্ষণগুলোও তুলে ধরেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে এবং চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে সেভ দ্য চিলড্রেন যে গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনার জন্য ড. মেহজাবীন হক এবং তাঁর সহযোগী দলকে নির্বাচন করেছে, তার পেছনের কারণগুলো, কেন এই গবেষণাটি প্রয়োজনীয় এবং এ বিষয়ক সম্ভাব্য ধারণাগত ধাপ কী কী হতে পারে তা জানানোর মাধ্যমে ড. মেহজাবীন হক তাঁর উপস্থাপনাটি শেষ করেন।
রাশেদা কে চৌধুরী
এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, সিএএমপিই
উদ্যোক্তা সংগঠন যারা তারা সবাই প্রায় গণসাক্ষরতা অভিযানের সদস্য। এটি ২৩২টি এনজিওর সংগঠিত নেটওয়ার্ক। এখানে ৫৯ জন গবেষক শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন। আমরা সংগঠিত হয়ে কাজ করছি, সেটিই বড় উদ্দেশ্য। আমরা আদিবাসী নিয়ে কাজ করতে পারিনি বা হয়ে ওঠেনি। এটা খুব দুঃখজনক। আসলে প্রতিবন্ধিত্বটা আমাদের মস্তিষ্কেই, প্রতিবন্ধীদের মধ্যে না। করুণার দৃষ্টিতে দেখি বলে আমরা নিতে পারি না। একই সঙ্গে জেন্ডারের ক্ষেত্রেও নারী নারীর কথা বলে, পুরুষ কেন বলবে না। আমরাই কেন আমাদের জন্য মাঠে নামব। এ বিষয়গুলো এক ধরনের ডিজঅ্যাবল জিনিস মানসিকভাবে। সবাই যদি কথা বলি, তাহলে একীভূতকরণ হবে। পুরুষকেও বলতে হবে। সবাইকে নারী অধিকার নিয়ে বলতে হবে। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্য হয়েছে, সেটি নিয়ে আদালতে রিট করা যেত। শুধু কাগজে-কলমে করলেই কার্যক্রম হয় না। এই শিক্ষাক্রম সংস্কারে ২৮টি সংগঠনসহ ক্যাম্পে শিক্ষা সংলাপ করে মতামত দিয়েছিল এবং ৭০ শতাংশ গৃহীত হয়। আমরা সঠিক পরামর্শ দিতে পারলে সরকার নেবে। স্বার্থান্বেষী মহলের পাল্লায় পড়লে হবে না। এখানে ধর্মীয়, কোচিং বাণিজ্য আছে, যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যাম্পেইন করে এই কারিকুলামকে ধ্বংস করতে চায়। এ জায়গায় আমাদের সচেতন হতে হবে। সবাই লক্ষ্য ঠিক রেখে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে হবে। আমরা প্রতিবন্ধীদের ডাটা গ্যাপের কারণে কাজ করতে পারি না। তিনটি বিষয় আছে– ডাটা গ্যাপ, ডাটা কনফিউশন, ডাটা হেজিটেন্সি। তথ্যগুলো পাবলিক করতে হবে, বৈজ্ঞানিক হতে হবে। তথ্যের জাতীয় গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। আমরা যদি প্রমাণভিত্তিক অ্যাডভোকেসি না করতে পারি, তাহলে কোনো লাভ হবে না। এগুলো সরকার গ্রহণ করে না। তাহলে আন্দোলন করতে হবে, মাঠে গিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিবন্ধী ফোরাম কেন এই নিয়োগ নিয়ে আদালতে রিট করেনি। বিদ্যালয়ে বেশি ভর্তি নেওয়ায় আমি এটির বিরুদ্ধে কাজ করেছি। আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে টেকসই ক্যাম্পেইন করতে হবে। শিক্ষার প্রয়োজনে শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদেরও আত্মসম্মানের জায়গা দেখতে হবে। উদ্দেশ্যের মধ্যে অ্যাডভোকেসি ক্যাম্পেইন আনতে হবে। শিক্ষা বাজেট নিয়ে কথা বলতে হবে। বাজেট বাড়াতে হবে। যথাস্থানে ব্যয় হচ্ছে কিনা মনিটর করতে হবে। সরকারের জবাবদিহিতা নিয়ে আমাদের কাজ করা দরকার। একাডেমি গবেষণা আমরা কাজে লাগাতে পারি, ক্যাম্পেইন ফোকাসড মানে বিশ্ব শিক্ষা দিবসকে কাজে লাগানো। মূলধারা মিডিয়ার মাধ্যমে ক্যাম্পেইন অ্যাডভোকেসি করতে হবে।
প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম
চেয়ারম্যান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)
আমরা এমন একটি খারাপ সময় পার করছি। এ জন্য বলছি ইনক্লুসিভ, জেন্ডার শিক্ষা এ রকম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, এ বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করে একটি সুন্দর, আধুনিক সময়োপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা করার জন্য এবং সে অনুযায়ী আমরা শিক্ষাক্রম করেছিলাম। একই সঙ্গে প্রথম, ষষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যক্রম প্রবর্তন করেছিলাম।
শিক্ষা একটি বিজ্ঞান, একটি নীতি অনুসরণ করে আমরা পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করি। আমি হ্যাপি ফিল করছি, আমার এত সহযোগী, শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এনসিটিবি অ্যাপেক্স অর্গানাইজেশন। অনেকেই পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করছেন, আমরা কিছু বলছি না। বলছি না এ জন্য যে, শিক্ষা অগ্নিশিখা। অনেক সহযোগী শিক্ষা একসঙ্গে হলে শিক্ষা প্রসার হয়।
আমি আদিবাসী গ্রুপ নিয়ে কিছু বলি। আমরা কেন তাদের পাঁচটি ভাষার বই দিয়েছি, ৪০টি কেন না? আমরা দিতে চাই, কিন্তু সহজভাবে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বেশ কষ্টসাধ্য। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অনেক কথা এখানে আসছে। এটি বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি, আমরা সেটি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব। আমরা জেন্ডার নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছি, আগের এবং বর্তমানের বইগুলো দেখেন। ইন্টারমিডিয়েটে গার্হস্থ্যবিজ্ঞান নামে একটি বই দিয়েছি। একটি মেয়েকে কালো মেয়ে বলা যাবে না, খাটো বলা যাবে না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসেনি। এটি অন্যভাবে বলা যায়। আমরা অনবরত শিখছি। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে। পাঠ্যপুস্তকেও তার প্রতিফলন হচ্ছে। কিছু এনজিও আমাদের ইন্টারমিডিয়েটের বইয়ে জেন্ডার নিয়ে কথা বলছিল। আমাদের ধরে নিতে হবে মাধ্যমিক লেভেলের ছেলেমেয়েরা বাংলা, অন্যান্য বই পড়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করবে। তাকে শেখাতে হবে প্রাচীন, মধ্যযুগ, আধুনিক সাহিত্য। প্রাচীন ও মধ্যযুগে কোনো নারী সাহিত্যিক ছিলেন না। আমরা নারীকে প্রাধান্য দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ– তাঁদের এমন গল্পগুলোকে নিয়ে পাঠ্যক্রম সাজিয়ে থাকি। আরেকটা বিষয় হলো, ইনক্লুসিভনেস। এটিতেও সংজ্ঞা পরিবর্তন হয়েছে। এবারের শিক্ষাক্রমে আমরা ব্যাপকভাবে ইনক্লুসিভনেসের কথা বলেছি। এটির মানে কী– এমন নয় যে, একটি ছেলে ১ম হবে। আমরা চাচ্ছি, একটি ক্লাসে সবাই সমানভাবে ২য় শ্রেণিতে যাবে। আরেকটি হলো, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষা হয় প্রতিটি জেলায়। আমি এটির চেয়ারম্যান হয়েও দুঃখপ্রকাশ করছি।
বাজেট কম, আমাদের টেন্ডার মূল্য বেড়ে গেছে– এ জন্য আমরা বইগুলোকে ফোর কালার করার চেষ্টা করেছি। আরেকটি হলো, টিভ্যাট নিয়ে কথা বলা হয়েছে। আমরা চাই একজন শিক্ষার্থীর নলেজ প্লাস পারফরম্যান্স সক্ষম করে তুলতে। এই আলোকে আমরা শিক্ষাক্রম সাজাচ্ছি। পাঠ্যপুস্তক হতে হবে নির্ভুল। আমরা যেগুলো ভুল পাচ্ছি, তা সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করছি। আমরা সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে চাই।
অনো ভ্যান ম্যানেন
কান্ট্রি ডিরেক্টর, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ
আমরা একটি লক্ষ্য নিয়ে এই নেটওয়ার্ক করেছি। এ নেটওয়ার্কের লক্ষ্য একসঙ্গে কাজ করা, যাতে আমরা আরও বেশিসংখ্যক শিশুর কাছে পৌঁছাতে পারি, যাদের আমাদের সহায়তা প্রয়োজন। আমরা এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিশুদের কণ্ঠস্বর তুলে আনতে চাই। শিক্ষায় আরও বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন, এই দাবি জানানো আমাদের দায়িত্ব। মানসম্পন্ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই নেটওয়ার্ক সরকারকে সহায়তা করবে। এটি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে জনপ্রিয় করার জন্য কাজ করবে। টেকসই শিক্ষা ব্যবস্থায় আনন্দদায়ক শিক্ষার পরিবেশের বিকল্প নেই। এ জন্য শিক্ষা সংস্কারকদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সরকারকে সহযোগিতা করবে এই নেটওয়ার্ক। করোনাকালীন ১৭ মার্চ, ২০২০ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর শহর ও গ্রামীণ উভয় ক্ষেত্রেই স্কুল থেকে শিশুদের ঝরে পড়ার হার বাড়তে থাকে। শিশুশ্রম এবং বাল্যবিয়ে বেড়ে যায়। এ প্রবণতা ঠেকাতে জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান শুরু করার প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে কাজ করা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো একসঙ্গে কাজ করেছে ‘সেফ ব্যাক টু স্কুলের’ অধীনে। সেফ ব্যাক টু স্কুলের সচেতনতামূলক প্রচারণা, গবেষণা অধ্যয়ন এবং সরকারি কর্মকর্তা এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি-সংক্রান্ত আলোচনা বাংলাদেশের সব শিশুর শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
মো. নুরুজ্জামান শরীফ
পরিচালক, ব্যুরো অব নন-ফরমাল এডুকেশন (বিএনএফই)
বাংলাদেশে ৬৪টি জেলায় ৩২৫টি উপজেলা, ১২টি সিটি করপোরেশন ও ৩২৮টি পৌরসভা। আমরা ৩৬০টি ইউনিটে প্রায় ২৪ হাজার লার্নিং সেন্টারের মাধ্যমে লিমাদের মতো ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কাজ করছি। গত বছর আমরা ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প’ নিয়ে কাজ করেছি। এখন আমরা আউট অব চিলড্রেনে (৮-১৪ বছর) বয়সী ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাজ করছি। এটি সরকারি ও দাতা সংস্থার সহযোগিতায় চলছে। যদিও আমাদের পিডিপি-৪ এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট, যেটির বাজেট ৩৮ হাজার কোটি টাকা। পুরোটাই আমরা প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে করছি। ২.৫ শতাংশ আউট অব চিলড্রেন নিয়ে কাজ করছি। আমরা উপজেলাভিত্তিক স্থায়ী সেটআপের মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম চালাব।
খন্দকার জহুরুল আলম
নির্বাহী, সিএসআইডি
প্রতিবন্ধীরা এখনও সব জায়গাতে তাঁর অধিকার ভোগ করতে পারছেন না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নাগরিক অধিকার থেকে এখনও তাঁদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এবার ৩৭ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নেওয়া হয়, এর মধ্যে ২০২ জন প্রতিবন্ধী লিখিত পরীক্ষায় পাস করেন।
সঞ্জীব দ্রং
সাধারণ সম্পাদক, আদিবাসী ফোরাম
আমাদের দেশে বড় সমস্যা হলো প্রতিবন্ধী, হাওর, চা বাগান ও পাহাড়ি এলাকার মানুষ, গরিব, অধিকারহীন মানুষ– এই সমাজ-রাষ্ট্র তাদের করুণার চোখে দেখে। আমি খাসিয়া হই, সাঁওতাল হই, গারো হই, নারী হই, তৃতীয় লিঙ্গ হই, প্রতিবন্ধী হই, হাওর অঞ্চলে থাকি নাকি পাহাড়ে থাকি, আমি বেদে নাকি দলিত– আমি প্রথমে মানুষ। এই চিন্তা যদি আমাদের না থাকে, তাহলে কোনো দিন আমরা আমাদের রাষ্ট্রকে ইনক্লুসিভ করতে পারব না। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা অনেক কিছু অর্জন করছি। একটি নীতি হোক বাংলাদেশে– আমরা আদিবাসী পলিসি করতে পারি। ২০১১ সালে হাজংদের জনসংখ্যা সরকারিভাবে দেখানো হয়েছিল ১১ হাজার আর ২০২২ সালে জনশুমারি অনুসারে ৯ হাজার। ১১ বছরে দুই হাজার মানুষ কমে গেল। তাহলে বুঝতে হবে ডাটাতে কোনো ভুল আছে নতুবা তারা দেশান্তর হয়ে চলে গেছে। আমাদের গারো ভাষা আছে, সেখানে কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। এটাতে ৫০ নম্বর থাকবে কি থাকবে না, কোনো কিছু বলা হয়নি। তবুও আমি মাতৃভাষায় কথা বলি। এ দেশের মানুষ ৪১টি ভাষায় কথা বলে। এর মধ্যে ৩৯টি ভাষাই আদিবাসীদের। ভাষা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী ১৪টি মাতৃভাষা এ দেশে বিলুপ্ত। আমাদের দেশে আদিবাসীদের ভাষার জন্য একটা নীতিমালা করা হোক।
ড. এ কে এম রেজাউল হাসান
সদস্য, প্রাথমিক পাঠ্যক্রম (এনসিটিবি)
বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতির রিপোর্টে আমি বিমুগ্ধ হয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আশ্চর্য হই, অনেক ধরনের প্রতিবন্ধী কাজ করেন। আমরা আদিবাসীদের জন্য পাঁচটি ভাষায় তাঁদের পাঠ্যক্রম ভাষান্তর করে দিচ্ছি। শিক্ষক নিয়োগের জন্য অন্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। যেভাবেই হোক, সেটি করতে হবে। কভিডের কারণে আমরা কিছুটা পিছিয়ে গেছি। আপনাদের মধ্যে চেঞ্জ এজেন্ট যাঁরা আছেন, তাঁদের কথা বলতে হবে, তথ্যগুলো দিতে হবে। আপনারা কমিউনিটির মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করতে পারেন। আমি শুনেছি, কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে অনেক তথ্য প্রচার করা হয়। এগুলো অ্যাডভোকেসি করা দরকার সরকারের সঙ্গে।
রুমা খন্দকার
উপদেষ্টা, মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সহায়তা, এসসিআইবিডি
আমরা যদি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও মনোবিজ্ঞানীদের জায়গা থেকে চিন্তা করি, তাহলে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যের পেশাদার ব্যক্তিত্ব খুবই কম। যদিও সরকারি হাসপাতালগুলোতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আছে, তবে তাঁদের সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বোঝার জন্য মাঠপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অভাব রয়েছে। শিক্ষায় সম্পৃক্ত শিশু, অভিভাবক ও শিক্ষক– তাঁদের নিয়ে আমরা যদি চাহিদামতো শিক্ষা কার্যক্রম সাজাতে না পারি ও মানসিক জায়গায় পৌঁছাতে না পারি; তাহলে শিক্ষায় দূরত্ব, বৈসাদৃশ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যের যে অবনতি রয়েছে, তা আরও আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাবে। সম্মিলিত প্রোগ্রামের মাধ্যমে সঠিক পেশাগত দায়িত্ব ও পর্যবেক্ষণে নিয়ে আসা যায়, তাহলে শিশু ভালো থাকার পাশাপাশি শেখার গুরুত্ব ও মননশীলতা– এগুলো বুঝে এগিয়ে যেতে পারব।
শিক্ষা সম্মিলন ২০২৩
শিক্ষা জোটের নির্দেশিকা ও ঘোষণাপত্র
জোটের নতুন নাম : এডুকেশন অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ
সামগ্রিক উদ্দেশ্য
বাংলাদেশে সবার জন্য মানসম্মত ও একীভূত শিক্ষার পক্ষে কথা বলা।
সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য
ক. মানসম্মত এবং একীভূত শিক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে সহায়তা করা।
খ. শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সরকারের সঙ্গে কাজ করা।
গ. চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং স্মার্ট বাংলাদেশের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন শিক্ষা মডেলকে জনপ্রিয় করা।
জোটের স্লোগান
সবার জন্য একীভূত ও মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতকরণ
ঘোষণা
l সব শিশুর জন্য শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশাধিকারের জন্য একসঙ্গে কাজ করা।
l শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং একটি রূপান্তরমূলক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে কাজ করা।
l দারিদ্র্যপ্রবণ ও দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী শিশুদের এবং বিশেষ করে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়াতে কাজ করা।
l শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শিশুদের ঝরে পড়া বন্ধে কাজ করা। শিশুশ্রম এবং বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য কাজ করা, যা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কমাতে সাহায্য করবে।
l কভিড-১৯ মহামারি চলাকালে বিকল্প পদ্ধতি এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগ করে চ্যালেঞ্জ কমানোর শিক্ষা কাজে লাগিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন করে ভাবার ক্ষেত্রে এবং নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে সিস্টেম পরিবর্তনে কাজ করা।
l লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য কমাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সংগতি রেখে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি গ্রহণে কাজ করা।
l তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করা এবং সারাদেশে বিদ্যালয়গুলোর আরও ভালো ডিজিটাল প্রস্তুতির জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া।
l নতুন পাঠ্যক্রমের পাইলটিং পর্বে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক শিক্ষা পদ্ধতি প্রয়োগ করা এবং ভুল-ত্রুটি দূর করতে কাজ করা।
l স্কুল পরিচালনা কার্যক্রমে অভিভাবকদের আরও অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে কাজ করা।
l চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং স্মার্ট বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং নতুন শিক্ষা মডেলের বাজেট বাড়াতে কাজ করা।
l বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানের জন্য অ্যাডভোকেসি করা।
l সামাজিক, মানসিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে বিদ্যালয়ে শিশুদের সহযোগিতা করা।
l দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার জন্য সরকারি বাজেট বৃদ্ অ্যাডভোকেসি করা।
মন্তব্য করুন