- সমতা
- বাল্যবিয়ে :এক সামাজিক ব্যাধি
বাল্যবিয়ে :এক সামাজিক ব্যাধি

বহুল প্রচলিত সামাজিক ব্যাধির নাম বাল্যবিয়ে। বহুল প্রচলিত এই অর্থে যে, গত দুই দশকে এ বিষয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে এর কুফল নিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাল্যবিয়ে যে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, তা এখন বেশিরভাগ মানুষ জানে। কিন্তু পরিস্থিতি কি বদলেছে? বিশ্বে প্রতি ৭ সেকেন্ডে ১৫ বছরের কম বয়সী এক কন্যাশিশুর বিয়ে হয়।
ইউনিসেফের 'বাল্যবিয়ে বন্ধ করা :বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রোফাইল, ২০২০' প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ৭০ কোটি মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার। এ ধারা চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা বেড়ে ৯৫ কোটিতে পৌঁছাতে পারে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৫ বছরের কম বয়সী বিবাহিত মেয়ের ২০ শতাংশ ২৪ বছর বয়স হওয়ার আগেই দুই বা তারও বেশি সন্তানের মা হচ্ছেন। ফলে প্রসূতি মৃত্যুর হার এবং অপুষ্টিজনিত সমস্যা প্রকট হচ্ছে। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এক দশক ধরে বাংলাদেশে ৬৬ শতাংশ ক্ষেত্রে ১৯ বছর বয়সের আগেই বাল্যবিয়ের শিকার নারীরা অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের করা ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২১ জেলার ৮৪টি উপজেলায় 'র্যাপিড অ্যানালাইসিস অব চাইল্ড ম্যারেজ সিচুয়েশন ডিউরিং কভিড-১৯ ইন বাংলাদেশ' শিরোনামের জরিপে ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিয়ের তথ্য পাওয়া যায়। এ জরিপে মেয়েদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বয়স ১৬-১৭ বছর, ৪৮ শতাংশের ১৩-১৫ বছর এবং ২ শতাংশের বয়স ১০-১২ বছর ছিল। প্রায় ১৪ হাজার বাল্যবিয়ের মধ্যে ৫ হাজার ৮৯টি মেয়ে অপরিকল্পিত গর্ভধারণের শিকার হয়েছে।
বাল্যবিয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা স্বাস্থ্যঝুঁকি। এর সঙ্গে প্রজনন স্বাস্থ্য ও বয়ঃসন্ধির সম্পর্ক রয়েছে। ইউএনএফপির ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ বিষয়ে প্রতিবেদনের তথ্যমতে, জন্মনিয়ন্ত্রণ ও মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজেদের মতামত প্রকাশের হার মাত্র ৬৪ শতাংশ। দেশের নারীরা শুরু থেকেই অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছেন। করোনাকালে তা আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে এ সময়ে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নারীর প্রতি সহিংসতা ও অপরিকল্পিত গর্ভধারণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাল্যবিয়ের কারণে নারীর অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণ, গর্ভপাত ও অনিরাপদ সন্তান প্রসবের ঘটনা বাড়ছে। ফলে সন্তান ও মায়ের অপুষ্টিজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোমা দে বলেন, 'বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আমরা কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে এখনও কাজ করতে পারিনি। যৌতুক এবং নারীর ওপর যৌন হয়রানি ও সহিংসতা প্রতিরোধে অনেক আইন হলেও এর প্রয়োগ নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে অভিভাবককে আমরা সচেতন করছি; তিনি যেন মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ না করেন। কিন্তু একটি মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের পর আদৌ কোনো কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে পারবে কিনা, সেটি নিশ্চিত করছি না। বাল্যবিয়ের আরেকটি কারণ হলো দারিদ্র্য। ফলে পরিবারটি দারিদ্র্যচক্রে পড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।'
বাড়ির পুরুষ সদস্যদের সচেতন করার বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সোমা দে বলেন, 'শুধু মেয়ের বাবা না, যে ছেলেটি বাল্যবিয়ে করতে চাইছে সেই ছেলে এবং তার অভিভাবকদের এর কুফল ও আইন সম্পর্কে জানাতে হবে। সেই সঙ্গে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি যে ধরনের কর্মকাণ্ড রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।'
মন্তব্য করুন