নাটক, গান, কবিতা, নৃত্য- সবকিছুর পরিবেশনা থাকবে। বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীদের অংশগ্রহণে এ আয়োজন চলবে ১১ দিন। অংশ নেবেন দুই দেশের ১২২টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রায় ৪ হাজার শিল্পী। গতকাল শুক্রবার শুরু হয়েছে সংস্কৃতির এই মহামেলা 'গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব'। সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে মৌলবাদ ও কূপম ূকতার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণের লক্ষ্যে দশমবারের মতো বসেছে আসর। সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন করেন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, আসাদুজ্জামান নূর, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, লিয়াকত আলী লাকী, আহ্‌কাম উল্লাহ্‌ ও আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্‌ আলম সারোয়ার।

সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও উৎসবের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছ বলেন, সংস্কৃতির সব ধারার মিলনস্থল এ আয়োজন। এর মধ্য দিয়ে আমরা মানুষের কাছে যেতে চাই। সংস্কৃতি আদান-প্রদানের মাধ্যমে দুই দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করতে চাই। এ আয়োজন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রধান হাতিয়ার।

মঞ্চসারথি আতাউর বলেন, শিল্প, সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে মানবজনম ঋদ্ধ হয়। বিনোদন ছাড়াও এতে আছে জীবন গঠনে শিক্ষণীয় অনেক কিছু। এ চর্চার মাধ্যমে সংস্কৃতি আদান-প্রদান করতে পারি।

নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, এ উৎসবে সবচেয়ে বেশি সাংস্কৃতিক ব্যক্তি যুক্ত হয়েছেন। দু'দেশের মানুষের মধ্যে সংস্কৃতির বন্ধন দৃঢ় হচ্ছে। তিনি বলেন, সংস্কৃতি চর্চাকে দেশব্যাপী স্কুল-কলেজে ছড়িয়ে দিতে হবে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম আরও জোরদার করতে হবে।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, সাংস্কৃতিক জাগরণ হচ্ছে না। তরুণদের অনেকেই সঠিক ধর্মীয় চর্চা করছেন না। উগ্রতায় জড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, ৫১ তরুণের হদিস নেই, তারা জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়েছে। তাদের ফেরাতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। নূর বলেন, সংস্কৃতি চর্চায় আমাদের অনেক ঘাটতি আছে। সেগুলো পূরণ করতে হবে। এ ধরনের উৎসব আরও বেশি আয়োজন করতে হবে। তরুণ-কিশোরদের মধ্যে বিভাজন তৈরি না করে সংস্কৃতিমনস্ক করে গড়ে তুলতে হবে।

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও মিলনমেলা হবে নাটকের মাধ্যমে। এ ধরনের উৎসব সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে সবার মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে যায়।

নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, এ বছর বাংলাদেশে নাটকের দেড়শ বছর উদযাপিত হবে। ১৮৭২ সালে কলকাতায় প্রথম মঞ্চনাটকের যাত্রা শুরু হয়। নানা বাধা-বিপত্তিতে নাটকের কাজ এগিয়ে চলছে। নাটকের দেড়শ বছর উদযাপনের আগে এ আয়োজন দুই দেশের সংস্কৃতিকে আরও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করবে।

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, বিশ্বকে মানবিক রাখতে শিল্পীদের ভূমিকা অনেক। শিল্পকে বড় অস্ত্র করে বিশ্বজয় করতে হবে।

সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আহ্‌কাম উল্লাহ্‌ বলেন, গঙ্গা-যমুনা অববাহিকায় এ আয়োজন দুই দেশের মানুষকে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করবে।

এবারের গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তন, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তন, পরীক্ষণ থিয়েটার হল, স্টুডিও থিয়েটার হল, সংগীত আবৃত্তি ও নৃত্য মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। নাটক, কবিতা, নাচ-গান, আবৃত্তিতে ৪ হাজার শিল্পী এতে অংশ নেবেন।

উদ্বোধনী সন্ধ্যায় গতকাল জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চস্থ হয়েছে থিয়েটার প্রযোজনা নাটক 'পোহালে শর্বরী'। ওয়ার্দা রিহাবের পরিচালনায় উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করে নর্তনালয়। মঞ্চের দু'পাশে ছবি আঁকেন রাগীব আহসান ও ক্রিটি রঞ্জন বিশ্বাস। পরে তাঁদের শিল্পকর্মটি মঞ্চসারথি অতিথির হাতে তুলে দিয়ে সবার দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটার প্রযোজনা 'অভিশপ্ত আগস্ট'; স্টুডিও থিয়েটার হলে মানিকগঞ্জের নিরাভরণ থিয়েটারের প্রযোজনা 'জুঁইমালার সইমালা'। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত অভিনেতা গৌতম হালদার গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসবে অংশ নিয়েছেন। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ২৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের নয়ে নাটুয়া প্রযোজিত 'মরমিয়া মন' নাটকে তিনি পারফর্ম করবেন। ২৮ অক্টোবর জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে গৌতম হালদার অভিনীত 'নকশিকাঁথার মাঠ' এবং ২৯ অক্টোবর 'বড়দা বড়দা' মঞ্চস্থ হবে। আগামী ৩১ অক্টোবর এ উৎসবের পর্দা নামবে।