
হাওরপাড়ের ঘরে ঘরে ধান পচার গন্ধ
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২২ । ০০:০০ | আপডেট: ১৮ জুলাই ২২ । ০৩:০১ | প্রিন্ট সংস্করণ
পঙ্কজ দে, সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম। গেল বোরো মৌসুমে আবাদ করা জমিতে ধান হয়েছিল দুই হাজার মণেরও বেশি। বাড়ির গোলায় রেখেছিলেন দুইশ মণ। বাকি ধান রেখেছিলেন বাড়ির পাশের অটোরাইস মিলে। বন্যার পানিতে বাড়ির গোলা ডুবেছে। মিলে রাখা ধানও তলিয়ে গেছে। পানি নামার পর দেখতে পান- গোলায় রাখা ধান পচে গেছে। এখন চারদিকে সেই পচা ধানের দুর্গন্ধ।
সরকারি হিসাব মতে, এবারের বন্যায় সুনামগঞ্জের ৬৮ হাজার কৃষকের গোলার ধান ভেসে গেছে। তাঁদের মধ্যে ছোট কৃষকরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন। কৃষি অফিস থেকে বড় কৃষকের সংখ্যা দুইশর বেশি হবে না দাবি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে সেই সংখ্যা আরও বেশি। অনেক কৃষক এখনও বাড়ি ফেরেননি।
কৃষক আব্দুস সালামের বাড়ির কৃষি শ্রমিক বাচ্চু মিয়া ও মোমিনা বেগম ছাড়া ১৬ জুন গভীর রাতের পর বাড়ি ছেড়ে যাওয়া অনেকেই এখনও ফেরেননি। মোমিনা বেগম বললেন, 'মাথার ওপর দিয়ে ঢেউ গেছে। গোলা ঘরের ইটের দেয়াল ভেঙে ভেসে গেছে ধান। বন্যার পানি চাল ছুঁয়েছে। জান লইয়া কোনো লাখান গেছি আমরা। চাইর জন বছরচুক্তির শ্রমিক আছিল, এরা যে গেছে, আর ফিরছে না। ধান বার করার কোনো উপায় আছিল না। বাড়ির ধান, মিলের ধান, সব পইচ্ছা গন্ধ বারাইছে। মালিকের মাথায় চৌরঙ্গী (মাথা ঘুরতেছে) মারছে। মালিক আর বাড়িত আইছইননা (আসেননি)। গরু-বাছুর মরেছে, যেগুন (যেগুলো) আছে, খাওয়াইবার কোনতা নাই। চাষের ট্রাক্টর, মাড়াইকল ১০-১২ দিন ডুইব্বা আছিল। মালিক আর সামনেরবার চাষবাস করব কিনা জানি না।'
কৃষক আব্দুস সালামের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়। তিনি বলেন, খেতের ধান বন্যায় আগেও গেছে। তবে এত ক্ষতি ৬০ বছর বয়সে দেখিনি। গোলার ধান এভাবে কোনো সময় গেছে না। বাড়িতে কিছুই নাই, সুনামগঞ্জ শহরের বাসায় আছি, ওখানে গেলে ধৈর্য ধরা কঠিন, এজন্য যাচ্ছি না।
আব্দুস সালামের ভাই মতিউর রহমান জানালেন, তাঁর ১৬ হাত লম্বা কংক্রিটের পিলারের খড়ের ঘর প্রথম ধাক্কায় ভাসিয়ে নেয়। রাত ১২টায় পানি গোয়ালঘরে কোমর সমান হয়। ১৭টি গরু দু'তলায় নিয়ে তুলতে তুলতে দুটি মারা গেছে। এই কয়েকদিনে আটটি গরু অর্ধেক মূল্যে বিক্রি করেছেন। যেগুলো আছে, সেগুলোও ঘাসের অভাবে বিক্রি করতে হবে। এক হাজার মণ ধান গেল বোরো মৌসুমে গোলায় তুলেছিলেন। এর মধ্যে চারশ মণ পচে যাওয়ায় শ্রমিক দিয়ে দূরে হাওরে নিয়ে ফেলেছেন। ৬০০ মণ ধান আছে। সেগুলো থেকেও পচা গন্ধ বের হচ্ছে। এই কৃষক দাবি করেন, বড় কৃষককে রক্ষা করতে হলে, পুরোনো ব্যাংক ঋণ পরিশোধের চাপ না দিয়ে নতুন ঋণ দিতে হবে। না হলে চাষাবাদে ফেরা কঠিন।
গ্রামের অন্য বাসিন্দারা জানান, হাওরপাড়ের আব্দুল্লাপুর, সাধকপুর, দরিয়াবাজ, ছনপুর, গোয়াছড়া, ইছাগড়ি, ভবানীপুর ও লালপুরের ছোটবড় কৃষকের বাড়িতে একই চিত্র। বড় কৃষকের বাড়ির পাশ দিয়ে গেলেই ধান পচার গন্ধ আসছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানালেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬৮ হাজার ৫১১ জন কৃষকের তালিকা করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা পেলে তাঁদের প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের জমির পরিমাণ অনুযায়ী কৃষি ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ ও প্রত্যয়ন করা হবে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com