- মতামত
- রমজানে রহমত থেকে বঞ্চিত যারা
রমজানে রহমত থেকে বঞ্চিত যারা

রমজানের প্রথম দশক রহমতময়। রহমতের এই দশকে আল্লাহতায়ালা অজস্র রহমতের বারিধারায় সিক্ত করেন বান্দাদের। আজ রহমতের দশকের সমাপ্তি হতে যাচ্ছে।
মহান আল্লাহ দয়া করে রমজান মাসে আমাদেরকে অগণিত রহমতপ্রাপ্তির বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন। তবুও কিছু মানুষ আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। তারা দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় দুর্ভাগা।
রোজা রেখে যারা ফরজ নামাজ আদায় করে না তারা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত। নামাজ এমন এক ইবাদত, যা মুসলিম ও অমুসলিমের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসেবে গণ্য। যে নামাজ আদায় করে না, সে যেন মুসলমানই না। এমন ব্যক্তির দায়িত্ব মহান আল্লাহ নেন না। আর আল্লাহ যার দায়িত্ব নেন না, সে নিরাপদ নয়। সে যেকোনো সময় যেকোনো দূরাবস্থায় পতিত হতে পারে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে ফরজ নামাজ পরিহার করো না। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ফরজ নামাজ পরিহার করলে তার ওপর থেকে আল্লাহর দায়িত্ব উঠে যায়। ইবনে মাজাহ: ৪০৩৪
মা-বাবার সেবা-যত্ন করা সন্তানের ওপর আবশ্যক। সন্তানের জন্য তা ইবাদততুল্য। মা-বাবার সেবা-যত্নের মাধ্যমে মানুষ জান্নাত লাভ করে। যারা মা-বাবাকে সেবা-যত্ন থেকে বঞ্চিত করে তারা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর তোমার প্রভু আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে উফ শব্দও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বলো, হে আমার প্রভু! তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে লালন-পালন করেছেন। সুরা বনি ইসরাইল: ২৩-২৪
আজকাল অনেক সন্তান মা-বাবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না। অনেকে অমানুষের মতো বাবা-মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুন। মা-বাবার সঙ্গে কখনোই উঁচু গলায় কথা বলা ঠিক নয়। তাদের সঙ্গে সবসময় শ্রদ্ধা ও সম্মানপূর্ণ ভাষায় কথা বলতে হবে। তাদের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই মেজাজ দেখানো ঠিক নয়। এটি একটি জঘন্য বদঅভ্যাস। রমজান মাসে তো নয়ই, সব সময়ই এই বদঅভ্যাস থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। রমজানে যদি এই বদঅভ্যাসের চর্চা করা হয়, তাহলে আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির অনন্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হবে।
ভয়াবহ এক অসুখের নাম অহংকার। রোজা রেখে অহংকার থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। অহংকারের কারণে মানুষ সবকিছুতেই নিজেকে অনেক বড় ভাবে। নিজের বড়ত্ব ও আমিত্ব প্রকাশ করে। আর অন্যদেরকে দেখে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের চোখে। অহংকার ধীরে ধীরে মানুষের মনোজগতে ক্ষত সৃষ্টি করে। অপরকে তুচ্ছজ্ঞান করার অসুখ দিন দিন বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে এমন মানুষ অহংকারবশত পরম সত্য থেকেও মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। দুনিয়াতে তাদের শান্তি নষ্ট হয়ে যায়। আর পরকালে তাদের জন্য থাকে কঠিন শাস্তি।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার প্রকাশ করে তাদেরকে অবশ্যই আমি আমার নিদর্শনাবলী থেকে বিমুখ করে রাখব। সুরা আরাফ: ১৪৬
অনুগ্রহ করে খোঁটা দেওয়া, মিথ্যা কসম খাওয়া এবং পুরুষের টাখনুর নীচে ইজার পরিধান করা ভয়াবহ গোনাহের কাজ। রোজা রেখে এসব কাজ পরিহার করা আবশ্যক। যারা এসব কাজ করে তারা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। কেয়ামতের ময়দানেও আল্লাহ তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। কেয়ামতের ময়দানে যাদের প্রতি মহান আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি পড়বে না তারা দুর্ভাগা। তারা সেখানে লাঞ্ছিত হবে। তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাদেরকে গোনাহ থেকে পবিত্র করবেন না। বরং তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন। রাসুল (সা.) তিনবার এ কথা বললেন। তখন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এসব ব্যক্তি কারা? রাসুল (সা.) বললেন, যারা নিজেদের লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে রাখে, যারা অনুগ্রহ করে খোঁটা দেয় এবং যারা মিথ্যা কসম খেয়ে নিজেদের মাল বিক্রি করে। মুসলিম: ২৯৪
কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। সামর্থ্য থাকার পরও যারা অসহায় দরিদ্রের প্রতি দয়া করে না আল্লাহতায়ালাও তাদের প্রতি দয়া করে না। দানশীলতায় আছে মহান আল্লাহর রহমত। দানশীলতায় আছে প্রশান্তি। দানশীলতায় যে প্রশান্তি মেলে সেই প্রশান্তির ছোঁয়া কৃপণ ব্যক্তি পায় না। কৃপণতার গুণ বান্দাকে উদাসীন ও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
মোদ্দাকথা, রমজানে যাবতীয় পাপাচার পরিহার করতে হবে। পাপাচার পরিহার করতে না পারলে রোজাপালন সওয়াবহীন হবে। রোজা যদি সওয়াবহীন হয় তাহলে আল্লাহর অশেষ রহমত থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তাই আমাদের রোজা যেন সওয়াবহীন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে আল্লাহর রহমত ছাড়া মানুষ ভীষণরকম অসহায়। প্রতি মুহূর্তে সকল সৃষ্টিজীবের প্রতি মহান আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে। তবে যারা আল্লাহর অবাধ্য হয় এবং বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত থাকে তারা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। আর যারা রহমতের এই রমজানেও নিজেদেরকে শোধন করে করুণাময় আল্লাহর অপার রহমতে সিক্ত হতে পারে না, তারা বড়ই হতভাগা।
লেখক: ধর্মীয় নিবন্ধকার
মন্তব্য করুন