- মতামত
- সীতাকুণ্ডে অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড হয়েছে: বাম জোট
সীতাকুণ্ডে অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড হয়েছে: বাম জোট

রাজধানীর পল্টনে মৈত্রী মিলনায়তনে বাম জোটের সংবাদ সম্মেলন।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণকে ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড’ বলেছে বাম জোট। আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন জোটের নেতারা। সীতাকুণ্ডের ঘটনার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে বাম জোট রাজধানীর পল্টনের মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
গত শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে রাত সোয়া ৯টার দিকে একটি কনটেইনারে আগুনের সূত্রপাত। তার দেড় ঘণ্টা পর রাত পৌনে ১১টার দিকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ৯ জন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন পরিদর্শন টিমের সদস্য ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই এই বিস্ফোরণকে দুর্ঘটনা বলে প্রচার করা হচ্ছে। ‘নাশকতা’সহ নানা কথা বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। এই বিস্ফোরণ শুধু দুর্ঘটনা নয়: এটি অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড।
ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন এবং ওই কমিটিতে বেসরকারি বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেন রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, মালিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অনুমোদন না নিয়ে বা যথাযথ নিয়ম না মেনে এই ডিপোতে বিস্ফোরক রাখা, এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি সংস্থার যেসব কর্মকর্তা দায়িত্ব¡পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেসব সরকারি কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, কাজের নিশ্চয়তা, আইএলও কনভেনশনের ১২১ ধারা অনুযায়ী নিহত ব্যক্তিদের আজীবন কাজের মজুরির সমান ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। রাসায়নিক দূষণ দূর করতে বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, ফায়ার ব্রিগেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই জানতেন না এই ডিপোতে রাসায়নিক বা বিস্ফোরক পদার্থ আছে। বিস্ফোরণের ঘটনার পরপর তাঁরা এসেও মালিকপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাউকে না পাওয়ায় কোন কনটেইনারে কী আছে, তা জানতে পারেনি। এজন্য আগুন নেভানো ও উদ্ধারকাজে সমস্যা হয়েছে। যথাসময়ে কনটেইনার সরানো যায়নি। এখনো অনেক কনটেইনার আছে, যেকোনো সময় সমস্যা হতে পারে। প্রকৃত তথ্য পেলে হয়তো ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীসহ এত মানুষের প্রাণহানি হতো না।
সংবাদ সম্মেলনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তার বলেন, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার ক্ষমতায় থাকলে এ অবস্থা হতে পারত না। তিনি বলেন, সারা দেশ অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। চলমান আওয়ামী সরকারের দুঃশাসন এই অনিয়মকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মালিক ও শোষকরা সরকারের কাঁধে ভর করে এই অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছে। এর বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
পরিদর্শন টিমের সদস্য বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, অতীতে অনেক তদন্ত কমিটি হয়েছে, অনেক সুপারিশ শুনেছি কিন্তু কোনোটাই কার্যকর হয়নি। তিনি বলেন, কোনো তদারকি সংস্থাই ভূমিকা পালন করে না। এদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ডা. হারুন উর রশীদ বলেন, রাষ্ট্রের সীমাহীন অবহেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তিনি চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন। তবে আগুনে পোড়া রোগীদের আলাদা রেখে চিকিৎসা করাটা জরুরি। যাতে নতুন কোনো সংক্রামণ না হয়, এটাও নজরে রাখতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্ক্সবাদী) নেতা বিধান দাস।
মন্তব্য করুন