ঢাকা শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩

খাদ্য অপচয় ‘স্মার্টনেস’ নয়

অন্যদৃষ্টি

খাদ্য অপচয় ‘স্মার্টনেস’ নয়

.

মিনহাজ বিন মাহবুব

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:১৮ | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৩ | ১৬:১২

বেঁ চে থাকার জন্য প্রতিটি প্রাণীর খাবার প্রয়োজন। মানুষের সুস্থ-সবল থাকার জন্য প্রয়োজন সুষম খাবার। তবে বর্তমান সমাজে মানুষের মধ্যে একটি বিকৃত প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সেটি হলো খাবারের অপচয়। অবাক করা বিষয়, খাবার অপচয় করাকে তারা মনে করছে স্মার্টনেস। বিয়ে কিংবা কোনো বড় আয়োজনে যে পরিমাণ খাবার নষ্ট করা হয়, তা দিয়ে প্রায় সমপরিমাণ আরও একটি বিয়ে বা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা সম্ভব। এসব অপচয় করা খাবারের বেশির ভাগ চলে যায় ভাগাড়ে। যেখানে বিশ্বের বিশাল একটি জনসংখ্যা এখনও না খেয়ে জীবন পার করছে, সেখানে খাবারের এমন অপচয় মানবতার চরম পরিহাস।

এক যুগ আগেও গ্রামীণ জনপদে খাবারের অপচয় বলতে কিছু ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামেও তথাকথিত আধুনিকতার হাওয়া লেগেছে। খাবার শেষ পর্যন্ত খাওয়ার সেই চিরায়ত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। খাবারের এক-তৃতীয়াংশ খেয়ে বাকিটুকু উচ্ছিষ্ট বানানো হচ্ছে। অথচ হয়তো গরিব কোনো প্রতিবেশী এক টুকরো মাংস খাওয়ার স্বপ্ন দেখে রোজ। সে খবর আমরা কয়জন রাখি? গ্রামীণ একটা প্রবাদ আছে, ‘সতিনের ছেলে হোক পড়শির ভাত হোক’। বর্তমানে দেখা যায় তার উল্টো।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি মাসে ১০ হাজার শিশু খাবারের অভাবে মারা যায়। অথচ বিশ্বে উৎপাদিত খাবারের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ নষ্ট করে, যা পরিমাণে ১৩০ কোটি টন।
খাবার অপচয়ে পিছিয়ে নেই স্বল্প আয়ের দেশ বাংলাদেশও। জাতিসংঘের তথ্যমতে, বাংলাদেশের পরিবারগুলোয় বছরে খাবারের অপচয় হয় গড়ে ৬৫ কেজি; গৃহস্থালি থেকে অপচয় হয় ১ কোটি ৬ লাখ টন। দেশের রেস্টুরেন্টগুলোয় প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার টন খাবার। বিয়ে, আকিকা, খতনা, জন্মদিনসহ বড় বড় উপলক্ষে চলে খাবার অপচয়ের প্রতিযোগিতা। অতিথি আপ্যায়নের নামে হরেক রকম খাবারের যে থালা সাজানো হয়, এর বেশির ভাগ খাবার যায় ভাগাড়ে। তথাকথিত স্মার্টনেস প্রদর্শনের জন্য আমরা যে খাবার অপচয়ের উৎসবে মেতে উঠেছি, এতে যেমন বর্তমানের এক শ্রেণির মানুষ অভুক্ত থেকে যাচ্ছে, তেমনি অদূর ভবিষ্যতে দেখা দেবে পৃথিবীব্যাপী খাবারের তীব্র সংকট। খাবারের জোগান কমে এলে টাকা থাকলেও খাবার কিনতে পারা সম্ভব হবে না। আমরা চাইলেই প্রয়োজনমতো খাবার কিনতে পারি; চাইলেই পারি কেনাকাটার ক্ষেত্রে একটু সচেতন হতে। খাবার অপচয়ের মতো এমন বদ অভ্যাস সহজেই চাইলে এড়াতে পারি।

ক্ষুধামুক্ত দেশ এবং ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার জন্য সবার উচিত খাবার অপচয়ে সচেতন হওয়া। খাবার অপচয় করে তথাকথিত স্মার্টনেস প্রদর্শনের মতো মানসিক বিকৃতি পরিহার করা অবশ্য কর্তব্য। আপনার-আমার প্রচেষ্টাই পারে আগামীর ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়তে। আসুন, নিজে সচেতন হই, 
অন্যকে সচেতন করি; ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ি।

মিনহাজ বিন মাহবুব: শিক্ষার্থী, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম 
minhazbinmahbub@gmail.com

আরও পড়ুন