কৃষিবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ
চারদিক

.
আব্দুল হাই রঞ্জু
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩:৩৫
কুড়িগ্রাম নদীবিধৌত জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, জেলায় ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদনদীর অববাহিকায় সাড়ে চার শতাধিক চরের ৪৬ হাজার ৪২৮ হেক্টর জমির মধ্যে বর্তমানে আবাদি জমির পরিমাণ ৩৫ হাজার ৮৭ হেক্টর। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় ১৪০ একর জমিতে দেশের প্রথম কৃষিবান্ধব বাণিজ্যিক সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ভূমি লিজসহ শুরু হয়েছে সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এমএ গ্রিন এনার্জি লিমিটেড। ফুলবাড়ী উপজেলার সোনাইকাজির চরের ১৪০ একর জমির ওপর সৌরবিদ্যুতের এই প্রকল্প স্থাপিত হলে এখান থেকে উৎপাদিত ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে, যা কুড়িগ্রাম জেলার চাহিদা মেটানোর পর অন্য এলাকারও বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্তিতে অনন্য ভূমিকা রাখবে। উল্লেখ্য, ২৭ বছরের জন্য ১৪০ একর জমি লিজ নিয়েছে এমএ গ্রিন এনার্জি লিমিটেড। স্বস্তির বিষয়, ফসল উৎপাদনের সুযোগ রেখেই এসব জমি চাষিদের কাছ থেকে লিজ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতি একর জমির জন্য প্রথম দুই বছর পর্যন্ত ৭ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারিত হলেও পরে তা বেড়ে বছরপ্রতি ৩০ হাজার টাকা হবে। সুবিধা হচ্ছে, চাষিরা ভাড়া পাওয়ার পাশাপাশি এসব জমিতে ছায়াযুক্ত ফসল চাষাবাদ করে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। একদিকে কৃষক পাবেন জমির ভাড়া, অন্যদিকে ছায়ায় যেসব ফসল উৎপাদন হয়, তা চাষাবাদ করতে পারবেন। এতে কুড়িগ্রামের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন যেমন হবে, তেমনি এলাকাও অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হবে। বলা যায়, এ প্রকল্প সম্ভাবনার এক দিগন্ত উন্মোচন করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কৃষির সমৃদ্ধিসহ এ জেলার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
যখন গোটা বিশ্ব পরিবেশ দূষণের কারণে বিপর্যস্ত, তখন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকট মেটাতে ইতোমধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যখন পরিবেশ রক্ষায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন থেকে সরে আসছে, তখন আমাদের সরকার সেই পথেই হাঁটছে। যদিও সরকার এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে হাঁটছে। অবশ্যই নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে সৌরবিদ্যুতের পথেই আমাদের এগোতে হবে। কারণ বাংলাদেশে বলতে গেলে সারাবছর সূর্যালোক থাকে। এটি সৌরশক্তি উৎপাদনের জন্য একটি অনুকূল অবস্থান তৈরি করেছে। ফলে উচ্চ সৌর বিকিরণ মাত্রা উন্নত ও দক্ষ এবং উৎপাদনশীল সৌর প্যানেল স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছে। সম্ভাবনার দিক হলো, আমাদের দেশে নদনদী নাব্য হারিয়ে এখন সংকুচিত হওয়ায় ব্যাপক চরাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চলে আরও এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হলে পশ্চাৎপদ জেলা হিসেবে কুড়িগ্রামের অর্থনীতি ভবিষ্যতে গতিশীল হবে এবং বিদ্যুতের সহজলভ্যতায় বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হলে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
আব্দুল হাই রঞ্জু: সাবেক ছাত্রনেতা