ঈদের দিন এগিয়ে এলেও শেরপুরের পশুর হাটগুলোতে নামি-দামি ষাঁড়ের ক্রেতা নেই। অনেক খরচ করে কোরবানির পশু হাটে নিয়ে বিক্রি করতে না পেরে বাড়িতে ফিরিয়ে নিচ্ছেন খামারিরা। ক্রেতা না থাকায় 'ইউটিউবার' 'রাজা-বাদশা' ও 'চিরকুমারদের' ,মতো বড় ষাঁড় নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে খামারিদের।

গত মঙ্গলবার ১২ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া করে সদর উপজেলার পশ্চিম কুমড়ী গ্রাম থেকে ১০ জন লোক নিয়ে খামারি সুমন মিয়া ৩০ মণ ওজনের ষাঁড় 'ইউটিউবার'   নিয়ে  হাজির হন নালিতাবাড়ী উপজেলায় বড় পশুর হাটে। তিনি ষাঁড়ের দাম নির্ধারণ করেছিলেন ৭ লাখ টাকা। কিন্তু সারাদিনে একজন ক্রেতাও পাননি। এদিন সন্ধ্যে ৬টার দিকে সুমন মিয়া বলেন, খুব বিপদে আছি,হাটে বড় ষাঁড় কেনার মত কোনো ক্রেতা নেই।  লোকজন ও গাড়িভাড়াসহ হাটে সাঁড়টি আনতে তার খরচ হয়েছে  প্রায় ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু ষাঁড়টি বিক্রি করতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ি ফেরত যাচ্ছি।  তিনি জানান, পাঁচ লাখ টাকার নিচে হলেও ইউটিউবারকে বিক্রি করে দেবেন। বুধবার ওই খামারি জানালেন, শেরপুর জেলার হাটে মোটা-তাজা ষাঁড়ের ক্রেতা পাওয়া যাবে না। রাজধানীতে নিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করছেন। তার শঙ্কা, এত খরচ করে নিয়ে যদি ষাঁড়টি বিক্রি না হয় তাহলে তার বিপদ আরও বেড়ে যাবে।

মুদিপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম মিয়া বাড়িতে রেখেই ৩১ মণ ওজনের ষাঁড় 'চিরকুমার'কে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করার পরও কিনতে ইচ্ছুক ক্রেতা পাননি। তিনি বলেন, 'আমি চিরকমুারকে হাটে নিমু না। কারণ অনেক খরচ। আবার ফিরায়া নিয়া আইলে দাম আরও কমে । তাই বাড়ীতেই রাখমু'। কয়েকদিন আগে কয়েকজন ক্রেতা  ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত ওই ষাঁড়ের দাম করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন,এখন কেউ দাম করে না। জানি না চিরকুমারকে বিক্রি করতে পারবো কি না।

শেরপুর  পৌর শহরের কান্দাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা অনার্স পড়–য়া তাহমিদ ইসরাক অলিদ। বাড়তি আয়ের চিন্তা করে তিনটি ষাঁড় কিনে কয়েক বছর ধরে লালন পালন করছেন। বড় ষাঁড়টির নাম দিয়েছেন 'জমিদার'। এর ওজন প্রায় ৩১ মণ। এছাড়া তার 'রাজা' নামের একটি  ২৫ মণ এবং 'বাদশা' নামে একটি ২২ মণ ওজনের ষাঁড় আছে। তিনটি  ষাঁড়ই তিনি মঙ্গলবার শহরের নৌহাটা পশুর হাঁটে বিক্রির জন্য এনেছিলেন। ক্রেতা ও দাম একেবারেই কম দেখে তিনিও তার তিনটি ষাঁড় হাট থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। বৃহস্পতিবার আবার এদের হাটে তুলবেন। ইসরাক অলির ভাষ্য- একজন ক্রেতা জমিদারের দাম ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বলার পর দ্বিতীয়বার আসেননি। আরেকজন বাদশার দাম ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে চলে যান। তিনি বলেন- গরুর বাজার অনেক কম।  এক বস্তা ভূষি কিনতে লাগে আড়াই হাজার টাকা। তিনদিনে তা শেষ হয়ে যায়। তাই  যে খরচ করে  লালন-পালন করেছি সে খরচ উঠছে না। 'জমিদার'কে সাড়ে ছয় লাখ টাকায় বিক্রি করলেও লোকসান হবে বলে তিনি জানান।

শেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঢাকার ক্রেতারাই মূলত বড় গরু কেনে।  গতকাল থেকে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে হাট বসেছে। দু’ একদিনের মধ্যে জেলা থেকে কমপক্ষে ১৫- ২০ হাজার গরু ঢাকা চলে যাবে। এসময় ঢাকার পার্টিও শেরপুরে আসবে। তখন বড় গরু বিক্রি হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ওজন করে গরু বিক্রি করলে খামারি লাভ পাবে । এতে ক্রেতাও প্রতারিত হবেন না।  

তিনি আরও বলেন, এই প্রক্রিয়া ঢাকায় শুরু হয়েছে। জেলা পর্যায়ে শুরু হলে কেউ ঠকবে না। তবে এ পদ্ধতি চালু হতে কিছুটা সময় লাগবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, শেরপুরে কোরবানির পশুর চাহিদা ৫৫ হাজার ৪৬৫টি। এর বিপরীতে জেলায় পশু রয়েছে ৮৪ হাজার ৪৯৭টি।  জেলার পাঁচ উপজেলায় এ বছর ২৭টি কোরবানির হাঁট ও ছয়টি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গরু বেচা-কেনা হবে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের ২৩টি ভেটেনারি টিম সুস্থ পশু বিক্রি ও ক্রয় করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এবছর জেলায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পশু বেচাকেনা হবে বলে ধারণা প্রাণিসম্পদ বিভাগের।