জুন মাসের শেষ রবিবার, ঢাকার এক অন্ধকার গলির শেষ প্রান্তে, বড় একটা ভবনের সামনে আমাকে নামিয়ে দিল উবার ড্রাইভার। আশেপাশে মানুষ তো দূরে থাক, কোনো কাকপক্ষীও নেই। দুপুরবেলা হলেও দিনের আলো গিলে ফেলেছিল চারপাশের উঁচু গাছগুলো। একঝলক চারপাশে তাকিয়েই ব্যাক ডালা থেকে টানতে টানতে বের করলাম আমার বড় লাগেজ দুটো। উচ্চ ভাড়া গুনতে ব্যস্ত ড্রাইভার কোনো সাহায্য করল না। সুটকেস দুটো নামিয়ে, ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিয়ে ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে বড় একটা নিঃশ্বাস ফেললাম।
শহরে নিজেদের বাড়ি থাকার পরেও কেন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ফ্ল্যাটে উঠতে চাইছি তা বাসায় বোঝাতে বেগ পেতে হয়েছিল। এখন আর ছেলেমেয়েরা খুব বেশি হোস্টেলে বা ফ্ল্যাটে থাকে না। বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী নিজের বাসা থেকে অনলাইনে ক্লাস করে। গ্রাম থেকে আসা অল্প কিছু ছেলেমেয়ে ডর্মে থাকে। কেউ সশরীরে ক্লাস করতে চাইলে পেরিগ্রিন ফ্যালকনে চড়ে আকাশপথে ক্যাম্পাসে আসে।
যানজটে দুর্বিষহ সময়। পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে না পেরে আত্মহত্যা করছিল স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা। অফিস মিস করার কারণে যত্রতত্র ছাঁটাই হচ্ছিল লোকজন। হতাশাগ্রস্ত হবার ভয়ে অনেকেই বাসা থেকেই বের হওয়া বন্ধ করে দিল। ফলে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হলো অনলাইনে বেচাকেনার। অসুস্থ হতে থাকল ডেলিভারি সার্ভিসের লোকগুলো। শহরজুড়ে কালো ধোঁয়া, হতাশা, ট্যাক্সি ও উবার-চালকদের মারামারি, সড়ক অবরোধ। হঠাৎ দেশের নতুন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল থেকে প্রচারিত হয়েছিল পেরিগ্রিন ফ্যালকনের বিজ্ঞাপন।
শহরের মানুষের জন্য কিছু আকাশযান ছাড়ল পেরিগ্রিন ফ্যালকন, যাতে মানুষ কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারে। শহরের আকাশে এখনও যেহেতু যানবাহনের কোনো জট নেই। তাই খুব সহজেই এই সার্ভিস জনপ্রিয় হয়ে গেল। তবে কারা এই সার্ভিসের মূল প্রবর্তক তা পুরোপুরি জানা যায় না। এই শহরে পিঁপড়ার মতো গিজগিজ করে মানুষ। রেস্তোরাঁয়, পার্কে, শপিংমলে তিল পরিমাণে জায়গা থাকে না। কোটি কোটি জনসংখ্যার শহরে কয়েকজন কিংবা কিছু মানুষের বড় কোনো উদ্যোগ নেওয়ার ঘটনা তাই অনেক সময়ই নজর কাড়ে না।
প্যারি ফ্যালকনে আমি নিজে দু’বার চড়েছি। অভিজ্ঞতা ভালোই, তবে অ্যাক্রোফোবিয়া আছে বলে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারিনি। অ্যাক্রোফোবিয়ার ভোগান্তি মনে করিয়ে দিয়ে বাসায় বলতে পেরেছি যে ক্যাম্পাসের পাশেই ফ্ল্যাটে থাকতে চাইছি। এমনিতেই ক্যাম্পাসে যেতে আমার ভালো লাগত না। গত তিন বছরে খুব প্রয়োজনে দুই একজন ক্লাসমেট বাদে আমার কারও সাথে কথাও হয়নি, বন্ধুত্ব তো দূরের কথা। কুকুরের কানের মতো লটপট করা ছেলেমেয়ের মতো সহজলভ্য হতে পারি না বলেই হয়তো কখনও প্রেম কিংবা বন্ধুত্বের স্বাদ পাইনি। বাড়িতে বসে অনলাইনেই বেশির ভাগ কোর্স নেওয়ার চেষ্টা করে এসেছি। তবে এই সেমিস্টার থেকে আর এমনটা করতে চাই না। বাসায় জানিয়েছি এবারের কোর্সগুলোর জন্য সরাসরি ক্লাস করতে হবে।
আসল কারণ হলো, এবার আমার সাথে দুটো কোর্সে নিকোলাস আছে। পৃথিবীর সবকিছু নিয়েই যখন আমি আগ্রহ বোধ করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম, যখন বেঁচে থাকা নিয়ে পাকাপাকিভাবে আমার মনের সব ইচ্ছের মৃত্যু ঘটছিল, ঠিক তখনই ভার্সিটির ক্যান্টিনে নিকোলাসের সাথে আমার পরিচয় হয়। মাত্র মিনিট বিশেকের আলাপ। তাও আমি একা-একটা টেবিলের কোণে বসে চুপচাপ ব্লু মকটেলে চুমুক দিচ্ছিলাম, নিকোলাস এসে বলল–
“একটু বসতে পারি?” হাতে ধরা একটা স্যান্ডউইচ।
কোর্স আর ক্লাস নিয়ে টুকটাক কথা বলে চলে যাবার আগে ও বলেছিল, “তোমার ব্যাকপ্যাকের ওয়াচার-ব্যাজটা দারুণ!”
ব্যস, আমার বাকি দিনটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল! মনে হচ্ছিল বছর তিনেক পর কেউ একজন আমাকে দেখেছে, জেনেছে আমার অস্তিত্ব আছে। যেন এর আগে আমি অদৃশ্য কেউ ছিলাম কোনো এক আত্মার মতো।
আমার বিশ্বাস, নিকোলাসের সাথে ক্লাস করলে আমার মানসিক যন্ত্রণাগুলো অনেকটাই সহনীয় হয়ে আসবে। হয়তো ওর জন্যই  বেঁচে থাকার স্পৃহা বাড়বে। অর্থহীন ভেবে আসা জীবনকে সুন্দর মনে করব। মুখে যে যা-ই বলুক, সবারই আসলে জীবনকে উপভোগ করার একটা সুপ্ত ইচ্ছে থাকে। সবাই চায়, বিস্কুটের মতো ভঙ্গুর জীবনে অন্তত কেউ একজন তার পাশে থাকুক। সেজন্যই ঢাকার ফ্ল্যাটে যাওয়ার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া।
এ ছাড়া আমার মনের কোথাও খুব ক্ষীণ একটা আশা আছে, যে ফ্ল্যাটে আমি ওঠার জন্য পরিকল্পনা করছি নিকোলাসও সেখানে উঠবে। শুনেছি, এবারের সেমিস্টারে অনেকেই সেই বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন ফ্ল্যাট একসাথে বুকিং দিচ্ছে। তবে সমস্যা হলো, আমি এর আগে কখনও বাসার বাইরে থাকিনি।
বেশ কিছুদিন পর আকাশজুড়ে লঞ্চ করা হলো আরও কিছু ফ্যালকন। আরও উন্নতমানের ও অতিকায়। শহরজুড়ে মানুষ মেতে উঠল আনন্দে। তবে সেই আনন্দ খুব বেশিদিন স্থায়ী হলো না। কিছু মানুষের টনক নড়ল, যেদিন মেগা ফ্যালকন নামের আস্ত একটা বাস উধাও হয়ে গেল। সেই বাসে ছিল একজন মন্ত্রীর ছেলে আর এক জনপ্রিয় ইউটিউবার। ইউটিউবার ভদ্রলোকের লাইভের মাঝপথে হঠাৎ সব উধাও!
সেই ঘটনার পর থেকেই ফ্যালকন নিয়ে কিছু মানুষের মাঝে চাপা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তবে অল্প কিছুদিনের মাঝেই প্রাইভেট চ্যানেলগুলো ফ্যালকনে চড়া যাত্রীদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রচার শুরু করে, যেখানে একটু পরপর দেখানো হয় কীভাবে মানুষের জীবনের গতি ফিরিয়ে এনেছে ফ্যালকন সার্ভিস। অনেক দিন কারও গায়েব হবার কথা শোনা যায় না। বেশির ভাগ মানুষ ভুলে যায় হারিয়ে যাওয়া বাসটার কথা, ভুলে যায় প্রিয়জন হারানোর ভয়। খুব সম্ভবত হলুদ ও লাল সিগন্যালে আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে থাকা দুঃসহ জীবনে কেউ চায় না ফ্যালকন নামের স্বস্তির নিঃশ্বাসটুকু বন্ধ হয়ে যাক। আমি যেমন চাই না নিকোলাস আমার চোখের আড়ালে চলে যাক।
আমার ধারণা, নিকোলাসও আমার মতো করেই সব উপলব্ধি করছে আর ফ্ল্যাটে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন মনে হবার কারণের পেছনে আছে দুটো অদ্ভুত ঘটনা। এক বিকেলে বাসায় ফিরে দেখি দরজার সামনে একটা ছোট্ট বাক্স পড়ে আছে। কে এমন বাক্স পাঠাতে পারে তা আন্দাজ করতে পারলাম না। প্রেরকের কোনো নাম ছিল না। বাক্স খুলে দেখলাম। ভেতরে ছিল একটা ডিজিটাল স্ক্রিন। সেখানে আঙুল দিয়ে স্লাইড করা মাত্রই ভেসে উঠেছিল একটা বাক্য–
“অপেক্ষায় আছি …”
অদ্ভুত না? প্রায় দু’রাত ধরে কালো স্ক্রিনে সাদা অক্ষরে ভেসে থাকা বাক্যটার অর্থ আমি খুঁজে গিয়েছি। একবার মনে হয়েছিল স্ক্রিনসহ পুরো বাক্সটাকেই জঞ্জালে ফেলে দেই। কিন্তু পরক্ষণেই মনে জেগেছে এই বেনামি মেসেজটা নিকোলাস পাঠায়নি তো? আমি যে ফ্ল্যাটে ওঠার জন্য নানা জায়গায় খোঁজখবর নিচ্ছি সেটা তো ওর জানারই কথা। হয়তো ও খুশি হয়েছে। আমি কল্পনায় দেখতে পেলাম, ছোট্ট একটা বাসায় থাকছি। ঘরে বিশাল একটা জানালা আছে। সেই জানালার পাশে বসে নিকোলাস আমাকে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া সব গানের নাম বলছে।
সাত দিন পর আরেকটা বাক্স আমার বাসার সামনে চলে এলো। লাফাতে থাকা হৃৎপিণ্ড নিয়ে দ্রুত হাতে বাক্সটা খুলে, পেয়েছিলাম আরেকটা ডিজিটাল স্ক্রিন। লেখা–
“কখনও আসবে না …”
এবারের বাক্যটাও বেশ বিভ্রান্তিকর। আমাকে আসতে মানা করা হয়েছে? নাকি বোঝাতে চেয়েছে– আমি কি কখনোই আসব না? হয়তো নিকোলাস দ্বিতীয় মেসেজের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিতে ভুলে গিয়েছে।
জুন মাসের শেষ রবিবার দুটো লাগেজ আর একটা ব্যাকপ্যাক হাতে ঢাকায় আগমন। বেঁচে থাকার অসহ্যকর ভ্রমণে নিকোলাসের পিছু নিয়ে আশ্চর্য সুন্দর কিছু অন্বেষণের, অনুভবের চেষ্টা। তাই এই গলিটুকু যতই ম্লান হয়ে থাকুক, ভবনটা যতই থাকুক থম মেরে, জ্যোৎস্নায় মাখামাখি হওয়া রাতের মতোই আমার এই যাত্রাটুকু সুন্দর ভাবতে হবে।
হাতে ধরা লাগেজ দুটো টানতে টানতে ধীর পায়ে আবছা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা ভবনটার দিকে এগিয়ে যাই। ভেতরে শীতকালের সন্ধ্যার মতো কুয়াশা ও হালকা অন্ধকার। কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই। চারপাশ নীরব। যেন কেউ শীতনিদ্রায় গিয়েছে বলে ক্ষীণ শব্দও করা যাবে না। আমি ব্যাকপ্যাকটা পিঠে নিলাম। ভারী সুটকেস দুটো লিফটে তুলে তৃতীয় তলার কাঙ্ক্ষিত ফ্ল্যাটে যাবার জন্য লিফটের ডিসপ্লেতে আঙুল ছোঁয়ালাম। লিফট চালু হওয়ামাত্রই কেমন টলে উঠল শরীর। মাথার ভেতরটা ধোঁয়াটে লাগতে শুরু করল। কোনোক্রমে লিফটের দেয়াল ধরে নিজেকে স্থির রাখলাম।
তৃতীয় তলায় পৌঁছে দেখি, একটা মাত্র ফ্ল্যাট। ভেতরে যাবার দরজাটা খোলাই ছিল। ব্যাকপ্যাক কাঁধে ঘরে ঢুকতেই দেখি ঘরে কোনো আলো জ্বলছে না। আবছা অন্ধকার ঘরজুড়ে। খুব ভালো করে লক্ষ করলে বোঝা যাবে, লিভিং রুমে অনেকগুলো চেয়ার রাখা। আর সেখানে বসে আছে বেশ কিছু মানুষ। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছে না। ছায়া ছায়া অন্ধকারে শুধু সবার শারীরিক গঠন বোঝা যাচ্ছে। আমি ঘরের এক কোনায় জড়সড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। এমন সময় একটি ছেলে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
“আমাদের অপেক্ষা অবশেষে শেষ হয়েছে। আমরা আমাদের শেষ সহযাত্রীটিকে খুঁজে পেয়েছি। থাকার জায়গা ভাগাভাগি করে নেওয়ার আগে, আসুন আমরা পরস্পরকে দেখে নিই।”
ঘরে বসে থাকা বাকি সবাই কেমন এক ধরনের গুঞ্জন তুলে সেই কথায় সায় জানাল। আর ফিসফিস করে বলতে থাকল, “ও এসেছে, ও এসেছে! অপেক্ষার পালা শেষ!”
আমার কেমন গা শিউরে উঠল। এমন কোথাও তো আমার আসার কথা ছিল না। এরা কারা?”
“আমি রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিচ্ছি”, বলল ছেলেটা। খুট করে শব্দ তুলে সুইচ অন করার শব্দ হলো। কিন্তু কোথাও কোনো আলো জ্বলল না বরং আগের চেয়েও গাঢ়, ভারী অন্ধকারের পর্দা একটু একটু করে নামতে শুরু করল চারপাশে। যেন এ ঘরে থাকা সবগুলো মানুষকে কালিগোলা আঁধারে কেউ ডুবিয়ে দিতে চায়।
অথচ ঘরে থাকা বাকি সবাই প্রায় একসাথে হালকা হাসির মতো শব্দ করে উঠল। তারপর আগের মতোই একত্রে ফিসফাস করছে, “হ্যাঁ। এখন সবাইকে বেশ দেখা যাচ্ছে।”
প্রথমে নিজেকে নিয়ে কিছুটা দ্বিধা কাজ করলেও ঘরের বাকি সবার অঙ্গভঙ্গি আবছাভাবে দেখে টের পেলাম আসলে কেউই কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু সবাই এমন আচরণ করছে যেন ঘরে আলো জ্বলেছে। সবাই কেন মিথ্যা বলছে?
“আমরা একটু পরই আমাদের যাত্রা শুরু করব।” বহু দূর থেকে কে যেন বলে উঠল কথাটা। এবারের কণ্ঠটা প্রথম জনের কণ্ঠের মতো গম্ভীর নয়। বরং কেমন শান্ত আর বিষাদমাখা।
চমকে উঠলাম। এত চেনা লাগছে কেন এই কণ্ঠ? আগে কোথায় শুনেছি, মনে করার চেষ্টা করলাম। শুধু টের পেলাম কেউ একজন গভীর অন্ধকারে দক্ষিণ দিকে হেঁটে গেল। মাথাটা কেমন ভারী হয়ে উঠল। অনুভব করলাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটা চেয়ার এলো আমার পেছনে আর দুটি যান্ত্রিক হাত আমাকে টেনে বসাল সেখানে।
“সবাই সিট বেল্ট বেঁধে নিন!”
প্রথম ছেলেটি নির্দেশ দেবার সুরে বলে উঠল। আমি অস্ফুট স্বরে প্রতিবাদ করতে গেলাম কিন্তু গলা দিয়ে কোনো স্বর বের হলো না। সবাইকে চেয়ারগুলোতে বেঁধে ফেলেছে। ঘরময় সিটবেল্ট বাঁধার খুটখুট শব্দ হতে থাকল। ঠিক তখনই কাছেই কোথাও ভারী ইঞ্জিনের গুমগুম শব্দ শুরু হলো। আর বিদ্যুৎ চমকের মতো আমার মনে পড়ল দ্বিতীয় কণ্ঠস্বরটা আসলে আমি অজস্রবার শুনেছি। শুধু সামনাসামনিই নয়, অসংখ্যবার শুনেছি আমার চিন্তায়, কল্পনায়। এই গলার স্বর নিকোলাসের। এই বিষাদমাখা, থেমে থেমে কথা বলা– নিকোলাস ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। মাথার ভেতর সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে উঠল। এই নির্জন ভবন, মানুষ নিয়ে উধাও আকাশযান, পেরিগ্রিন ফ্যালকন;  করোটির ভেতর যেন কেউ চিৎকার করে বলে উঠল, “বাঁচতে চাইলে পালাও এখনই!”
বেঁচে থাকা নিয়ে আজীবন অনাগ্রহী আমিই এবার ভেতরে ভেতরে ছটফট করে উঠলাম মুক্তি পাবার জন্য। আর আঁধারে ডুবে থাকা বাকি মানুষগুলোর তখনও চেয়ারে বসে একটু একটু করে দুলতে থাকল। শিরদাঁড়া দিয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল আমার। চেয়ারটা থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলাম প্রাণপণে, পারলাম না। ওদিকে গুমগুম শব্দটা বেড়ে চলল আর ধূসর ধোঁয়া এসে সমস্ত ঘরটা ঢেকে দিতে থাকল। ঘন কুয়াশায় ঘরের প্রতিটি মানুষ হয়ে উঠতে থাকল মহাশূন্যের অনন্ত গ্রহনিচয়ের মতো বিচ্ছিন্ন ও একা। 

বিষয় : গল্প মাহরীন ফেরদৌস

মন্তব্য করুন