ঢাকা শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩

মধুমিতা ও দেয়াল

অনুগল্প

মধুমিতা ও দেয়াল

শিল্পকর্ম :: শহীদ কবির

পাভেল পার্থ

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৩ | ২২:৩২

মধুমিতা বরফকল

কিছু কিছু মেলামেশা প্রকাশ্যেও হয়, কিছু কিছু খুনাখুনিও তাই। চন্দ্রাবতীর রামায়ণ পাঠে নুয়ে পড়া অঘোর ভাটি থেকে থইথই কাঁপন ভাসে পোয়াতি ঝিনুকের খোলে খোলে। সুনামগঞ্জ থেকে মোহনগঞ্জ রাতের লঞ্চে তারা সাতজনা যেন সাতখান অকূল আফাল, জগডম্বা তল অতল মন্থন করে যারা আর্জি করেছে ভাসান পাথারে ছিটাবে আরাধনার সঞ্জীবনী। তারা ভালোবেসেছে, করেছে কদর, আধা কাঁচা ধানের মায়া কি হাঁসের ডিমের বড়া বা বুয়ালের রসা সব টান মেরে খুলে খুলে রেখে এসেছে মানুষের কোলাহলে। তারা গতর খাটাতে জানে, বুদ্ধি রাখে কোঁচড়ে, সাহস আছে দেদার। কৃষ্ণপক্ষ লঞ্চের আওয়াজ ঝিমিয়ে উঠলেই সাতজনা লম্বা টান ধরে, কুন্ মিস্তরি নাও বানাইল কেমন দেখা যায়? ঝিলমিল ঝিলমিল করেরে ময়ূরপঙ্খি নায়। মেঘালয়ের নংজিরি গ্রাম থেকে ভেসে আসা বাউণ্ডুলে কয়লা টুকরার মানত, বরুণ ফলের ঘষটানো ঝাঁজের মানত, বর্ষায় নাও হেমন্তে পাওয়ের মানত, গচি আর লাখাই ধানের মানত, নানিদ মাছের হলুদ নাভির মানত, ললিতা আর বিসখার মানত করতে করতে হুইসেল বাজায় রাতের লঞ্চ। পেছনে পড়ে থাকে হাটিবান্ধা বসতের শরীরের তরতাজা কসরত। আমাদের শরীরের রক্ত লাল বলে আমরা কসম করেছি যেখানেই সুযোগ মিলবে সেখানেই নেমে যাব আমরা, প্যাদপ্যাদানি কাদাপানির হরণ আমরা মানি না। আমরা সাতজনা লঞ্চ মাস্টারকে বলি, আমরা এই ঘোলা জলেই নেমে যাব, আমাদের গন্তব্য নির্দিষ্ট করে এমন সাধ্যি কার? হিজলহাটি নলবনের পাশে আমাদের নামিয়ে দেয়া হয়। চান সুরুজের বাপ পয়লা খেয়াল করে আমাদের চারপাশ জুড়ে মধুমিতা বরফকল, মিনাই মিয়া কনুইয়ে বরফের চাঙ লাগিয়ে কানা হিরালীর বিলাপ করে। গিরিধর আমাদের কায়কারবারের একটা জুত করে আসে। রাংতা কাগজের ঝিলিক দিয়ে শিশিরদানা ছলকায় রান্দিবুড়ার গীতল চামড়ায়, অবা বরফের মেশিন দেখতায়নি? বরফকল দেখে দেখে আমাদের দিন নুন ছাড়ে গতরময়। লম্বা লম্বা নল দিয়ে হাওরের পানি টেনে তুলে বরফ বানাই আমরা, এইসব বরফ চাঙর মাছের আড়তে বিক্রি হয়। ছিক্কু বেশ জমিয়ে তুলেছে বরফের ভেতর, দাঁতে কোনো কটমট না করেই একটা পর একটা বরফের দলা ভাঙতে পারে দেদার। এই বরফকলে সব পানি বরফ হয়, আবার মাছের আড়তে বরফ গলে গলে জল জমে হাওরের তলায়। সন্ধ্যার লেমবাতির আলোতে সিরাজ কি ভানুর হাত পায়ের দগদগে আওয়াজ জানান দেয় জল জমানোর জ্বালা। মানুষ কি করে জলকে বরফ, বরফকে পানি বানায়? এখানে ধর্মের নামে গ্রামের সবচে লম্বা মিনারটি ভেঙে ফেলা হয়, গলাকাটা মানুষের লাশে ভরে যায় পদ্মপুকুর। তাই এখানেই কলের ভেতর মানুষ বরফ বানায়, বরফের কোনো জাত নাই, বরফের কোনো জল বা পানি নিয়ে ভাগাভাগি নাই। কটর আলী যেমন বলে, বরফ অই গেলে আর জল কিতা পানি কিতা। ঘুড়ির মতো আন্দাজ টপ্পা খায় আসমান কি আসমান। আমরা কেউ চাই না মধুমিতা বরফকল বন্ধ হয়ে যাক। এইতো ভালো কারও কোনো সন্দেহ নেই, কোনো বোমা হামলা নেই, কোনো ঝলমলানি নেই। এখানে যা আছে তা স্বোপার্জিত এবং বিরান। সনধীরকে আমরা কোনোমতেই ধরে রাখতে পারছি না, বরফকলে তার নাকি দম বন্ধ হয়ে আসে, পুটকির বীন হা করে থাকে। আমরা ছয়জনাই ঝনঝন চাঁদের ফলায় মধুমিতা বরফকলের ছায়ায় সিদ্ধান্ত নিই সনধীরকে ক্ষিপ্ত করে তোলার। এ যেন বরফপুরীতে নাটকের শুরু, জলের ঋণ শোধের জাদু, পানির ঋণ শোধের জাদু। শনৈ শনৈ করে আমরা সনধীরকে জাগিয়ে আনি, যেন সে শিশুকাল থেকে কৈশোর যৌবন ডিঙিয়ে আসা এক তীব্র প্রৌঢ়। আমরা তার সামনে তার বিগত দিনের কর্মফলের হিসাব তুলে ধরি। সনধীর হাঁটুর তলায় বরফের মায়া আটকে রেখে আমাদের তত্ত্বতালাশের জবাব দেয়, মধুমিতা বরফকলে পানি কি জল জমে জমে বরফ হয়। কিন্তু কোনো তালাশেই তার কিছুই আসে যায় না, সনধীর কোনোভাবেই বরফের দিকে গলে না। চান সুরুজের বাপ, মিনাই মিয়া, গিরিধর, রান্দি বুড়া, ছিক্কু, কটরালি আমরা কেউ তারে মধুমিতায় আটকাতে পারলাম না। আমাদেরও ছেড়ে দিতে হল বরফকলের আসনবসন, মালিক কল বিক্রি করে দিল। আমরা আবার হাওরের গোঙানি উৎরে ঘাটের কিনারায় এসে দাঁড়ালাম, লঞ্চমাস্টার আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে দক্ষিণের লঞ্চে জায়গা দিল। আজ রাতে আমাদের একটাই কাজ, পরের গন্তব্য ঠিক করা। রাতের জন্মনালিকে রক্ত পিছল করে উথালপাথাল হয়ে ওঠে সনধীরের কলিজার গীত। কর্মফল ধইরাছে গো এতদিনে, বিষবৃক্ষ করলে রোপণ অমৃত ফল না ধরে কখন ...। যেন এক সর্বংসহা বরফের চৌহদ্দি আমাদের কর্মফলের হিসাবগুলোকে আরও সশস্ত্র কায়দায় সনধীরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে তুলছে, যেখানে জল বা পানির নিজ নিজ আবরণ আছে, আমরা চাই বা না চাই বরফের যে পানি বা জল হয়ে উঠবার খেয়াল আছে সনধীর তা বরফ জন্মের আগেই হয়তো জেনে গিয়েছিল। 
 

ঘিয়ের দেয়াল

সকাল বা রাত্তিরে আসা-যাওয়ার পথে বাসের ভেতর আমি মানুষের শরীরে শরীর লাগিয়ে বসি। এ ছাড়া সস্তায় উত্তাপ রোজগারের আর কোনো উপায় আমার জোটেনি। গুঁড়া দুধের একটি পুরোনো কৌটা আছে আমার, উত্তাপ জমানোর। গেল দশ বছরে এটি বেশ ভারী আর উত্তপ্ত হয়েছে। একেক জনের উত্তাপ তো একেক কিসিমের, কত সাবধানে জোগাড় করতে হয়। আমি কোনো বাছবিচার করি না, সত্যি করে বললে আমার পক্ষে তা সম্ভবও নয়। পুরো শীতকাল উত্তাপের কৌটাটাই বাঁচিয়ে রাখে আমাকে। এখানে নিরিবিলি কোনো প্রস্থান নেই, রক্তপাতের ভেতরও সন্ধিক্ষণ আছে। ঘুমিয়ে গেলে শহরের নিচু সড়কগুলো আমি বের হই, রাস্তায় বেঘোরে পড়ে থাকা কুঁকড়ে যাওয়া উত্তাপের এক-আধ টুকরা তখন কখনও কখনও কপালে জোটে যায়। তলানির এইসব উত্তাপ রাখার জন্য আরেকটা কৌটা আমি আজও জোগাড় করতে পারিনি। মাঝে মাঝে ভাবি দৈনিক কাগজগুলোতে বিজ্ঞাপন দেব, কোথাও যদি একটি কৌটা খালি থাকে। গ্রাম থেকে আসার পর আমি আর এই শহর ছাড়িনি, ছাড়বার মতো কাহিনিগুলোও তৈরি হয় না আমার ভেতর। একবার যখন ইরাক-মার্কিন যুদ্ধের সময় শহরের ঝলমলে রেস্তোরাঁর সামনে প্রজাপতির একটি ভাগ বিভাগ হওয়া ডানা খুঁজে পেয়েছিলাম, সেই ভাগ বিভাগের ডানার ঝাঁজ গ্রামের পুকুরের ডুবসাঁতারের জাদু দেখিয়েছিল আমায়। কিন্তু তখনই বৃষ্টি শুরু হয় আর কোমরজলে ডুবে যায় শহর। একবুক সমান নালাখন্দ পেরিয়ে তারবাদে না আমার ঘর, ঘর মানে যেখানে আমরা থাকি, কিছু একটা রান্নাবান্না করে খাই আর রাতে কিছুটা সময় ল্যাংটা হয়ে ল্যাপ্টালেপ্টি করি। আমার বউ কি বাচ্চা বা কাজের বেটি উত্তাপের কৌটায় হাত দেয় না, আমি যে নিষেধ করেছি তা নয়, ও নাকি তাদের ধাতে সয় না। আমার বউ রাতে পান খায়, ডগডগে সবুজ পানের ভেতর ধলা চুনের ডলা দিতেই মনে হয় বারবার বনের ভেতর যেন আছড়ে পড়েছে এক শিলা মেঘের আসমান। আমি ওই আসমান থেকে ভেসে আসা পানের লালায় আর কোনো সন্ধিক্ষণ খুঁজে পাই না, যেন আমারে সে ভাসাইয়া নেয় আসমানের পাতালে। যেখানে দুনিয়ার সব উত্তাপ উবুড় হয়ে আছে, আমার উশখুশ সেখানে পাত্তা পায় না। আমার বাচ্চারা আবদার করে একটা বার্গার খাবে। তো আমি বাসের ভেতর আরও চেপে চেপে বসি, যেন কোনো ফোকর না থাকে, কোনো আলগা তৈরি না হয়। কেউ কেউ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়, কেউ কেউ পেচ্ছাপ করে দেওয়ার ভয় দেখায়। আমি জানি এভাবে কখনও কোনো রক্তপাত হবে না, এভাবে কোনো সারাৎসারও তৈরি হয় না। আমার বাচ্চারা আবদার করে একটা বার্গার খাবে। শহরের উঁচু ল্যাম্পপোস্ট থেকে আলোর শিরশির বড় হাসপাতালের বারান্দা ডিঙিয়ে জাদুঘরের দিকে যায়। জাদুঘরে বউ বাচ্চাদের নিয়ে যাব ভাবি, কঙ্কাল কি কাগজের সাথে তাদের একটা সাক্ষাৎ হবে। শহরের ভেতর তো কোনো ছুটি নেই। আমাদের বসত ডিঙিয়ে গেছে বাদানুবাদের সড়কগুলো। শুনেছি পরের বার যিনি নগরকর্তা হবেন, তিনি আমাদের বসত সরিয়ে একটা পুষ্প-উদ্যান তৈরি করবেন। আমাদের সরিয়ে নেয়া হবে বিমানবন্দরের কাছাকাছি, যাতে আমরা বিমানের ওঠানামা হিসাব করতে পারি। মসলা ভাঙানোর কলে কাজ দেয়া হবে আমাদের, বাচ্চাদের জন্য থাকবে এক প্রশস্ত ময়দান। আর যদি আমরা তাকে নির্বাচিত না করতে পারি তবে আমাদের নাকি কোনো গোরস্তান কি শ্মশানও জুটবে না। আমি নিশ্চিত কেউ যদি নির্বাচিতও না হয় তবুও কোনো রক্তপাত হবে না। আমার বাচ্চারা আবদার করে একটা বার্গার খাবে। বউয়ের সাথে এ নিয়ে আমার বছরভর বিবাদ হয়েছে, আমি কি নগরকর্তার বাড়ি চিনি যে সেখানে তাকে নিয়ে যাব? সে আমাকে বিশ্বাস করে না, আমি জানি খানাখন্দের ভেতর কোনো বিশ্বাস-অবিশ্বাস নেই। এখানে কেউ প্রবহমানতার ধারণা নিয়ে জন্মায়নি, এখানে কেউ বুকের করতলে জিইয়ে রাখে না প্রবীণ রক্তজবা। এখানে সবাই উত্তাপের কাঙাল, আসলে এই একটি বিবেচনাই আমার বানানো। এটি আমি নিজে কল্পনা করেছি। আমার আরেকটা কৌটা না হলেই না, এক কৌটায় আর কত উত্তাপ ধরে, একজীবনে আর কত উত্তাপ কাজে লাগানো যায়? রাতটা পার হলেই ভাবছি রাস্তাগুলো খুঁজে বের করব, ঘর থেকে বের হওয়ার রাস্তাগুলো, আমাকেও শহরে ওঠে আসতে হবে, আমাকেও নগরকর্তার হিসাবের কাছাকাছি আসতে হবে, আমাকেও দৈনিক কাগজগুলোর দাগাদাগি জোগাড় করতে হবে। হয়তো তেলের দাম আর বাড়বে না, আমরা একটিবারের জন্য গ্রামে যেতে পারব, মনে হয় সরকার আমাদের গ্রামে ফেরার ভাড়া মওকুফ করে দেবে। শুনি লোকে এইসব বলাবলি করে, গুনগুন করে, কারে কত ভাড়া দিব সরকার। এইসব হুল্লোড়ের ভেতর কোনো উত্তাপ আর আস্ত থাকে না, থ্যাঁতলে যায় সব, ঝুরঝুর হয়ে পড়ে। আমি কি এতটাই নাদান যে অমন হাপিত্যেশ উত্তাপও হাতড়ে বেড়াব? রাত শেষ হয়ে এলেই হয়তো একটা ঘোষণা আসবে, আমরা গ্রামে যেতে পারব, যেখানে ডুবসাঁতারের ভেতর আটকে আছে মায়ের ওলানে কামড় দেয়া বাছুরের উঠতি দাঁতের ঝিলিক। আমার বাচ্চারা আবারও আবদার করে একটা বার্গার খাবে। ঘোষণা আসবার সময় হয়েছে, আমাদের তৈরি হয়ে নেয়া জরুরি, কে কী রেখেফেলে যাবে, কার কী হারিয়ে যায়, এ নিয়ে শেষতক কত কী হবে। হয়তো দেখা গেল, গেল বছরের চেয়ে তেলের দাম বেড়ে গেল হাজার গুণ। কিন্তু কোনো রক্তপাত হবে না আমি নিশ্চিত, শহরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত আমি জানি। এখানে তারাই থাকে, যাদের যাওয়ার আর কোনো নালা নেই, আর কোনো গুহা নেই, আর কোনো ছই নেই। রাত শেষ হয়ে আসছে, আমি উত্তাপের কৌটা বুকের মাঝামাঝি চেপে ধরেছি। এই তো ঠিক এই সময়টাতেই এখনই ঘোষণা আসবে, একটা কিছু নির্ধারণ হবে। চোখ কচলে শহরের ঘুম ভাঙে, কাকদের সংসার জানান দেয় মানুষ জন্ম-মৃত্যু-প্রেম-বিরহ-হিংসা-যুদ্ধ-সংগ্রাম-লীলা নিয়েই হয়তো কোনো নির্ধারণীর ধারে কি দূরে অস্তিত্বময়তার প্রহর গুনছে। আমাদের ঘর ছাড়িয়ে ঘর, ঘরের ওপর ঘর, ঘরের ভেতর ঘর, ঘরের বাইরে ঘর, ঘরের মুণ্ডু কেটে ঘর, ঘরের কলিজা ভেঙে ঘর, ঘরের ঘুণ মাড়িয়ে ঘর, ঘরের জঞ্জাল পেরিয়ে ঘর, ঘর কি বাহির কি ঘর কি বাহির কি ঘর আমি জানি না বা আমার জানা হয়নি বা আমার জানা হয়ে ওঠেনি বা আমার জানা সম্ভব না বা আমার আমাদের নগরপ্রশাসক শহরের সবটা মাখন ছেনে ছেনে আমাদের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল এক দশাসই ঘিয়ের দেয়াল। আমি এখন কোন উত্তাপ দিয়ে এই ঘিয়ের দেয়াল গলাই? আমরা কোনো সন্ধিক্ষণের আশা তো করিনি, যতই দেয়ালের ঘোর অঘোর তৈরি হোক না কেন, আমি নিশ্চিত কোনো রক্তপাত শুরু হয়নি, হয়তো হবেও না। কোনো ঘোষণা না পেয়ে হতচ্ছাড়া আমিই চিৎকার করি, সারাজনমের এই এক কৌটা উত্তাপ দিয়ে এই দেয়াল গলানো যাবে না বউ, আমাদের আরও কিছু দরকার, আয় জোগাড় করি। কেন যেন এই ডবকানো শহরের তলানিতে থাকা আমার বাচ্চাদের বার্গারের আবদার আর শোনা যাচ্ছে না। u

আরও পড়ুন