অতীতে রাজনীতি বা নির্বাচনের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও শুধু ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতেই মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। তিনি বলেছেন, তাঁর ছেলেকে তিনি সারাজীবন সততার শিক্ষা দিয়েছেন। সৎপথে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে বলেছেন।
জায়েদা খাতুন আরও বলেন, নির্বাচিত মেয়রকে সরিয়ে দিয়ে তাঁর ছেলের সঙ্গে এবং গাজীপুরের মানুষের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। তাঁর দাবি, রাজনীতি থেকে তাঁদের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। সহায়-সম্পদ যা আছে, তা দিয়ে বাকি জীবন তাঁদের ভালোভাবেই কেটে যাবে। কিন্তু শহরের মানুষের জন্য তাঁর মন কাঁদে।  জাহাঙ্গীর আলম মানুষকে অতিরিক্ত বিশ্বাস করে বলেই আজ বিপদগ্রস্ত– মনে করেন তিনি।

সমকালের সঙ্গে মায়ের প্রার্থিতা বিষয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দেন ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, এটি আমার মায়ের জন্মভূমি। আমি মেয়র হওয়ার তিন বছর পর বিনা কারণে অন্য জেলার মানুষের চিঠি দিয়ে মন্ত্রণালয় মেয়রের পদ স্থগিত করেছে। সম্পূর্ণ একতরফাভাবে এই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধিকে এভাবে বাদ দেওয়া যায় না বলেই মাকে নিয়ে মাঠে নেমেছি। মা ও ছেলে মিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটা ভালো ও পরিচ্ছন্ন শহর উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সাবেক এ মেয়র। 

অবশ্য জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেছেন, তাঁর মা অতীতে কোনো রাজনীতির অভিজ্ঞতা বা কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও মানুষের সেবার অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে। তিনি বলেন, শুধু তাঁর ক্ষতি করা হয়নি, শহরের প্রতিও অন্যায় করা হয়েছে। এর প্রতিবাদেই মাঠে নেমেছেন। এই শহর থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলে গেছে।
ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে ইঙ্গিত করে জাহাঙ্গীর বলেন, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হলেও মেয়র পদ খালি ছিল না। কেউ না কেউ পদে বসে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা বিদেশে সেটেল হয়ে গেলেও এই শহরের একটা কাজও করেননি। একটা টেন্ডারও হয়নি। এটি মানুষের প্রতি অন্যায়।
তিনি আরও বলেন, তাঁর মা বিজয়ী হলে সন্তানের বাকি কাজগুলো করবেন। সরকার, দল এবং নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই সুন্দরভাবে করপোরেশন পরিচালনার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবেন। তিনি মনে করেন, করপোরেশনের মেয়র এবং কাউন্সিলর পদ হলো স্বাধীন। এটি সব দলের নাগরিকদের সেবা দেওয়ার প্রতিষ্ঠান। এক দলকে সেবা দেওয়ার প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশন নয়।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র হলেও দায়িত্ব পালনকালে সিটি করপোরেশনের করারোপসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনা আমলে নেওয়া হয়নি। ব্যক্তির সিদ্ধান্তে করপোরেশন পরিচালনা করা হয়েছে– এমন অভিযোগের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী করপোরেশন পরিচালনা করতে হয় কাউন্সিলরদের পরামর্শে, সেটাই করা হয়েছে। এককভাবে করপোরেশন পরিচালনার অভিযোগ সঠিক নয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আইন মেনেই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা করপোরেশনের অনেক সভায় উপস্থিত ছিলেন। করপোরেশনের অনেক কাজ তাঁর পরামর্শ নিয়ে করা হয়েছে। রাস্তাঘাটসহ টেন্ডারের কাজে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর বাড়ির সামনের সড়কটি করপোরেশনের রাজস্ব থেকে করে দেওয়া হয়েছে। ১৮ বছরে তিনি নিজে তাঁর বাড়ির সামনে রাস্তাটি করতে পারেননি। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের বাবা শহীদ আহ্‌সান উল্লাহ্‌ মাস্টারের কবরস্থানের পাশের সড়ক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ির সামনের রাস্তাটি পাকা করা, বিরোধী দলের সাবেক মেয়র অধ্যক্ষ এম এ মান্নানের বাড়ির সড়ক, বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী যাঁকে হারিয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দীন সরকারের বাড়ির সামনের সড়ক, বিএনপির সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিন সরকারের বাড়ির পাশের রাস্তাটিও পাকা করা হয়েছে।

মহানগরীতে চাঁদাবাজির বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা দলের লোক। তাঁদের নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। প্রশাসন রয়েছে, তারাই সেটা দেখভাল করব। তাঁর দায়িত্ব পালনের তিন বছরে কেউ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি বলে দাবি তাঁর।
সরকারি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকায় আগের দুই মেয়র কাজ করতে না পারলে করপোরেশনের বাসিন্দারা আবার কেন একজন সরকারবিরোধী প্রার্থীকে ভোট দেবেন– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই অন্যায়ের প্রতিবাদেই আজ হাজার হাজার মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। এই শহর জনগণের। আপনি হয়তো কালো আইন করে রাখতে পারবেন; কিন্তু এই আইন থেকে এক দিন মুক্তি দিতে হবে। তারই প্রতিবাদে আজকের এই ভোট।

শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা পেয়ে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়ানো বা প্রচারে অংশ নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। গাজীপুরের মানুষের কাছে বিচার চাইতে এসেছি। মা নির্বাচিত হলে আবারও আওয়ামী লীগে ফেরার ইচ্ছা আছে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মা সন্তানের জন্য প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থীর সন্তান হিসেবে তিনি তাঁর নির্বাচনে আছি। এখানে দলকে টানা ঠিক হবে না।

বিষয় : সাক্ষাৎকার : জায়েদা খাতুন জাহাঙ্গীর ও জনগণের সঙ্গে অবিচার হয়েছে

মন্তব্য করুন