যুক্তরাজ্যে আসন্ন শীতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়ার পাশাপাশি গ্যাস সংকটও থাকতে পারে। আর এই সংকট মোকাবিলায় শিল্প-কারখানা এবং গৃহস্থালি পর্যায়ে কয়েকদিন লোডশেডিংয়ের পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাজ্য। 

যুক্তরাজ্য সরকারের পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বিবেচনা’ করে আসন্ন শীতে মোট চাহিদার ছয় ভাগের এক ভাগ বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এমনকি জরুরি প্রয়োজনে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর পরও এই ঘাটতি দেখা দিতে পারে। খবর ব্লুমবার্গের। 

তারা আরও বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে গড় তাপমাত্রা কমে আসা এবং নরওয়ে ও ফ্রান্স থেকে বিদ্যুৎ আমদানি কমলে জানুয়ারিতে চারদিন ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তখন গ্যাস সংরক্ষণের প্রয়োজনে যুক্তরাজ্যকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। 

এদিকে সরকারের ব্যবসা, জ্বালানি এবং শিল্প কৌশল বিভাগ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতি এমন কিছু না, যা তৈরি হোক আমরা চাই। বাসাবাড়ি, ব্যবসা এবং শিল্প-কারখানা নিজেদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ এবং গ্যাস পাবে এই ব্যাপারে তারা আত্মবিশ্বাস রাখতে পারে।

যুক্তরাজ্যে সাধারণত এমন ঘাটতি দেখা যায় না। তবে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে আগামী মাসে বরিস জনসনের উত্তরসূরি হিসেবে লিজ ট্রাস বা রিশি সুনাক-যেই আসুক না কেন, তার জন্য আসন্ন শীত চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।  যেই আসুক বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিবে এবং জানুয়ারিতে ব্রিটিশদের জন্য গড় বার্ষিক বিদ্যুৎ বিল বেড়ে ৪২০০ পাউন্ডের বেশি হতে পারে। বর্তমানে তাদের ২০০০ পাউন্ডের কিছু কম বিল পরিশোধ করতে হয় এবং এটিই ইতোমধ্যে দেশটির মুদ্রাস্ফীতিকে তরান্বিত করেছে। 

যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো এনার্জি প্রাইস ক্যাপের অনুমানে গড় বার্ষিক বিদ্যুৎ বিল ৪ হাজার পাউন্ড ছাড়িয়ে গেছে। শীতে যদি ঠাণ্ডা বেশি পড়ে তাহলে ব্রিটিশদের হয়তো ইউরোপের মূল ভূখণ্ড থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আনার উপর আরও বেশি নির্ভর করতে হতে পারে। 

যদিও মস্কো সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় ইতোমধ্যে মূল ভূখণ্ডেই গ্যাস সংকট রয়েছে। আর এটাই যুক্তরাজ্যের জন্য বড় সংকটের জায়গা। কারণ দেশটির অভ্যন্তরীণ সংরক্ষণ ক্ষমতা কম থাকায় রেকর্ড পরিমাণ গ্যাস ইউরোপ মহাদেশকে দিয়েছে। তাই সামনের শীতে তাপমাত্রা খুব কমে গেলে দেশটি সেখান থেকে সুবিধা পেতে চাইবে। 

এদিকে যক্তরাজ্য বিদ্যুৎ ঘাটতিতে পড়তে যাচ্ছে এমন প্রতিবেদন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর দুই সপ্তাহের মধ্যে ইউরোর বিপরীতে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে পৌঁছেছে পাউন্ড। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে পূর্বের বাড়া ১ দশমিক ২০৮০ ডলারও ইতোমধ্যেই কমে গেছে। 

প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। মস্কোর এই পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে পাশ্চাত্যের দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নানান বিধিনিষেধ আরোপ করে। প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়াও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে দেশটি ইউরোপে তেল-গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে আনে। যার ফলে ইউরোপে জ্বালানি ঘাটতি দেখা দেয়।

এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান এই যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসহ খাদ্য পণ্যের মূল্য ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন দেশে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি। তবে এই যুদ্ধের প্রভাব বেশি পড়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশগুলোকে নিতে হয়েছে নানান পদক্ষেপ। এসবের মধ্যে জ্বালানি ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ উল্লেখযোগ্য। বড় ধরনের বিপর্যয় এড়াতে পরিকল্পিত লোডশেডিং করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পর্যাপ্ত রাখতে কম প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিতেও কয়েকটি দেশ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।