ঢাকা শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩

নবজাতকের যত্ন

নবজাতকের যত্ন

.

অধ্যাপক ডা. শাহীন আক্তার

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:০৫ | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩ | ১২:৪৮

নবজাতকের যত্নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হচ্ছে জন্মের পরপরই বুকের দুধ পান করাতে শুরু করা। 

আমরা জানি, নবজাতকের জন্মের পরপরই প্রথম এক-দু’দিন মায়ের বুকের দুধ নামে না। তখন ঘন হালকা হলুদ রঙের যে শালদুধ বের হয়, সেটি পুষ্টিগুণে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অত্যন্ত উচ্চমানসম্পন্ন। জন্মের পরপরই শিশুকে মায়ের বুকে নিতে হবে এবং দুধ খাওয়াতে হবে। এতে মায়ের বুকে দুধের প্রবাহ বাড়বে এবং শিশুটিও দ্রুত দুধ খাওয়া শিখে যাবে।

শিশুর যত্নে দ্বিতীয় যে জিনিসটি লক্ষ্য রাখতে হবে তা হচ্ছে শিশুকে উষ্ণ রাখা। শিশুকে একটি মোটা তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে না রেখে কয়েক স্তরে নরম সুতি কাপড় দিয়ে পেঁচাতে হবে। 

পরবর্তী যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো নাভির যত্ন। চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত ধাত্রী বা সেবিকা যে-ই থাকুন না কেন, প্রসবের পরপরই বাচ্চার নাভিটিকে একটি জীবাণুমুক্ত ব্লেড দিয়ে কাটবেন এবং দুটি জীবাণুমুক্ত ক্ল্যাম্প বা সুতা দিয়ে নাভিটি বেঁধে দেবেন। এরপর নাভিতে একবার একটি ঘন স্পিরিট লাগিয়ে দিতে হবে।
নাভিতে কোনো ধরনের যাতে সেঁক দেওয়া না হয়। কোনো মলম বা স্পিরিট দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। নাভি শুকনো  ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নাভি ঝরে পড়ে যাওয়ার পরও নাভিমূলে কোনোরকম সেঁক বা মলম দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

এর পর যে বিষয়টি আসে তা হচ্ছে নবজাতকের ত্বকের যত্ন। সরিষার তেল নবজাতকের ত্বকের জন্য উপকারী নয়। অলিভ অয়েল শিশুর ত্বকের যত্নে সবচেয়ে ভালো তেল। শিশুকে যে কোনো একটি বেবি সোপ দিয়ে গোসল করাতে পারেন এবং গোসলের আগে বা পরে অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করাবেন। নবজাতকের চোখে বা ভ্রুতে কাজল দেওয়াটা পরিহার করতে হবে; কেননা এতে চোখে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হলো নবজাতকের বিপদ চিহ্নগুলো। তার মধ্যে প্রথম লক্ষণটি হলো নবজাতকের শরীর গরম হয়ে যাওয়া বা জ্বর আসা (১০০ ডিগ্রি বা তার বেশি) অথবা শিশুর শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া (৯৭ ডিগ্রির কম)। এ ছাড়া আমরা যদি দেখি, শিশু খেতে পারছে না, ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে প্রতি মিনিটে ৬০ বারের বেশি, বুকের খাঁচা ভেঙে যাচ্ছে অথবা শিশুটি নিস্তেজ হয়ে পড়ছে, কোনো রকম নড়াচড়া করছে না বা খিঁচুনি হচ্ছে অথবা শিশুর শরীরে জন্ডিস দেখা যাচ্ছে,

যাতে হাত-পায়ের তালু হলুদ হয়ে গেছে– তখন বুঝতে হবে শিশুটি ভীষণ অসুস্থ এবং তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।

লেখক : নবজাতক, শিশু-কিশোর বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর-১০, ঢাকা।
 

আরও পড়ুন