প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এ সমাজেরই অংশ। তাদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নের মূল স্র্রোতে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। দক্ষতা উন্নয়ন করে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তাদের জীবন-জীবিকার পথ সম্প্রসারিত করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্মানের সঙ্গে সমাজে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সবাইকে সমন্বিতভাবে চেষ্টা চালাতে হবে। তাহলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। গত ১৪ জুলাই ভার্চুয়ালি ব্র্যাক, এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, সেন্স ইন্টারন্যাশনাল, লাইট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল, সিডিডি ও দৈনিক সমকালের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত 'ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুসিভ ভোকেশনাল ট্রেনিং অ্যান্ড ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট' শীর্ষক প্রকল্পের পরিচিতি ও আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ব্রিটিশ সরকারের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ ডেভেলপমেন্ট অফিসের ইনক্লুসিভ ফিউচারস ইনিশিয়েটিভের অধীনে সাইটসেভার্সের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন জেলায় ১১৩০ জন যুব প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী প্রিভোক-১ ও ২-এর প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে আয়মূলক উৎপাদনের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপযুক্ত কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারকে প্রয়োজনীয় নীতিগত পরামর্শ দেওয়া হবে।
মুস্তাফিজ শফি
প্রত্যেক মানুষের ভেতরেই অন্তর্নিহিত শক্তি রয়েছে। প্রতিবন্ধীরাও তার বাইরে নয়। তাদের ভেতরের সেই শক্তিকে বের করে আনতে হবে। তাদের জন্য কর্মপরিবেশ তৈরি করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বর্তমান সরকার অত্যন্ত প্রতিবন্ধীবান্ধব। বিশেষ করে যারা প্রতিবন্ধিতার শিকার, তাদের জনগোষ্ঠীর মূল স্রোতে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যাতে সমাজে নিজের মতো করে বাঁচতে পারে- এটাই আমাদের চাওয়া। এই বিশ্বাস আমাদের আছে এবং এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাই। সরকার যথেষ্ট কাজ করছে। তার সঙ্গে সামাজিক উদ্যোগগুলো যুক্ত হয়েছে। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমরা এগিয়ে যাব। সবার সমন্বিত উদ্যোগে প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজের পরিবেশ ও দক্ষতা তৈরি হবে।


এস এম শাহজাহান
দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ, অর্থাৎ এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ প্রতিবন্ধী। তাদের বাদ দিয়ে এ দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাদের নিয়েই চলতে হবে, তাদের উৎপাদক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সরকারের স্কিল ডেভেলপমেন্ট পলিসি ২০১১ অনুমোদন হয়। সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার একটি নির্দেশনা দেওয়া আছে। এটি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করে দেওয়ার পর আমরা কাজ শুরু করি। সে অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষায় ৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা রয়েছে। ৪৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারীর কারিগরি শিক্ষা নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা আছে, আমরা তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১৭টি পেশার বিষয় নির্ধারণ করেছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কাছে এ বিষয়ে ট্রেনিংয়ের মডেল প্রস্তুত আছে। এ মডেল অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা উপকৃত হবেন। শিক্ষকদের জন্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রতিবন্ধীদের পাঠদানের জন্য একটি গাইডলাইন করে দেওয়া হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন দেশের পাঁচটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অ্যান্ড কলেজে সুইং মেশিন অপারেশনের ট্রেনিং দিয়েছি। শুধু প্রতিবন্ধীদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারখানাগুলো প্রশিক্ষিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মদক্ষতায় সন্তুষ্ট হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া ৬৩ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা ভালোভাবে কাজ করছে। ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুসিভ ভোকেশনাল ট্রেনিং অ্যান্ড ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট প্রকল্পের সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমরা উদারভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কাজ করছি। ভোকেশনালকে মূলধারায় আনার চেষ্টা করছি। কারখানার চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে ১৩টি সিলেবাস যুগোপযোগী করেছি, সামনে অন্য সিলেবাসগুলোও চাহিদা অনুযায়ী করব।
এম. মাহজুজ আলী
আজকে আলোচিত প্রজেক্টটিতে ব্র্যাক, এডিডি ইন্টারন্যাশনাল, সেন্স ইন্টারন্যাশনাল (এসআই), সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি) এবং লাইট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড- পাঁচটি সংগঠন মিলে 'ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুসিভ ভোকেশনাল ট্রেনিং অ্যান্ড ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট' প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন শুরু করেছি। ইউকে এইডের ইনক্লুসিভ ফিউচারস ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে সাইটসেভার্সের একটা অংশীদারিত্ব হয়। এর আলোকে বাংলাদেশের স্কিলস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট সেক্টরে প্রজেক্ট পরিচালনা করার জন্য তারা পাঁচটি সংগঠনকে নিয়ে একটি জোট বানিয়ে কাজ করছে। আমাদের কাজ করা সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান হলো প্রতিবন্ধিতা নিয়ে সঠিক তথ্যের অভাব। প্রতিবন্ধীদের কাজ করা বা শেখার প্রতিবন্ধীবান্ধব ব্যবস্থারও অভাব রয়েছে। এ ছাড়া তারা সমাজ, পরিবার ও পারিপার্শ্বিকতার কাছ থেকেও বিভিন্ন ধরনের বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হোন। এ সমস্যাগুলো দূর করার লক্ষ্যে আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে চাইছি। তার মধ্য দিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
এই প্রজেক্টটির তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য আছে। এক. ২০১২ সালে চালু হওয়া ব্র্যাকের স্টার মডেল অনুযায়ী আগে ১০ ভাগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছিল। বর্তমানে চালু হওয়া প্রজেক্টটির মাধ্যমে ব্র্যাক শতভাগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করবে এবং ১১৩০ জনকে দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ প্রদান করে চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে কাজ করবে; দুই. এডিডি, এসআই ও সিডিডি দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। এডিডি ৫০ জনকে এবং সিডিডি ৩০ জনকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে; তিন. এ দুটি কাজ করার পাশাপাশি এই জোট বাংলাদেশ স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্টরদের মধ্যে প্রতিবন্ধীদের তথ্যগুলো বিতরণ করবে এবং তাদের মধ্যে পলিসি ও প্রসেসগুলো আরও ইনক্লুসিভ করে গড়ে তোলার ব্যাপারে সহযোগিতা করবে।
স্টার মডেলের আওতায় এ পর্যন্ত ৬০ হাজার ৪৫২ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রায় ছয় হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। তাদের মধ্যে ৯৫ ভাগ প্রশিক্ষণ শেষে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন এবং উপার্জন করে পরিবারে অর্থনৈতিকভাবে অবদান রাখছেন।
জয়দীপ সিনহা রায়
স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে এসে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে ব্র্যাক। এখন আমরা যে প্রতিবন্ধী ভাইবোনদের নিয়ে কাজ করছি, এটা ব্র্যাকের নীতির সঙ্গে খুব ভালোভাবেই যায়। সেইসঙ্গে আমাদের যারা অংশীদার আছেন, তারাও এ বিষয়ে অভিজ্ঞ। এ রকম আরও প্রজেক্ট যদি আমরা ভবিষ্যতে করতে পারি, তাহলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আমরা আরও বেশি প্রশিক্ষণ দিয়ে শ্রমবাজারে যুক্ত করতে পারব। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরির বাজারে নিয়ে আসায় বাংলাদেশ সরকারের যে লক্ষ্য আছে, আমার মনে হয় এ ধরনের প্রজেক্টগুলো সে লক্ষ্য অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে।


মো. শফিকুল ইসলাম
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ ও সংযোগের প্রচেষ্টা ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুসিভ ভোকেশনাল অ্যান্ড ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে চলছে। আশা করি, এটি বাস্তবায়ন হলে দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে আরও যারা কাজ করছেন, তারাও বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ধ্যানধারণা পরিবর্তন করা জরুরি। আশা করি, এই ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে সামনে আরও বড় পথ খুঁজে পাব। এ প্রকল্পে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা শুধু প্রশিক্ষণ কিংবা চাকরির দক্ষতা অর্জন করবেন না- ব্যবসা, কারিগরি, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির এবং নিজেকে প্রতিনিধিত্ব করার দক্ষতাও অর্জন করবে। যাতে কোথাও চাকরি না পাওয়া গেলেও ব্যবসা শুরু করতে পারে। নিজেদের আয়মূলক পথ নিজেরাই সৃষ্টি করতে পারে, সে রকম একটি পথ তৈরির কথা এ প্রকল্পে বলা হয়েছে। কারিগরি ও জীবন দক্ষতাকে গুরুত্ব দিয়ে এর সমন্বয় করা দরকার। এটি এ প্রকল্পের মাধ্যমে করার চেষ্টা করছি। সুযোগ পেলে সবাই বিকশিত হতে চায়। সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। যাদের জন্য এ সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, তাদের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে। এ মডেল আরও ছড়িয়ে গেলে সবার জন্য কাজে লাগবে।
খন্দকার জহুরুল আলম
দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যদি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়নে মূল ভূমিকা পালন করে, তাহলে আমাদের অনেক শঙ্কা কমে যাবে। স্টার মডেলটি খুব চমৎকার এবং এর বাস্তবায়ন হওয়া খুব জরুরি। একটা সময় বলা হতো, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে শিক্ষিতের সংখ্যা খুব কম। আমরা কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, কথাটা ঠিক নয়। দেশে অন্তত এক লাখের বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছেন, যারা এসএসসি থেকে শুরু করে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়েছেন। তাদের কাজ করার ক্ষেত্রটিই এ ক্ষেত্রে অনেক বড় বাধা, আমরা সবাই তাদের স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারি না। এটি দূর করতে আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি ডিজিটাল মাধ্যমের দক্ষতা উন্নয়নকাজে এ পর্যন্ত আমরা দুই হাজার ছয়শ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। আমরা যাদের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম, করোনার কারণে তাদের অনেকেরই চাকরি চলে গেছে। তবে বাসায় বসে কাজ করার সুবিধা পাওয়ায় আইসিটি সেক্টরে যারা কাজ পেয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগই এখনও ওই চাকরিতেই আছেন। আইসিটি ডিভিশন ইম্পোরিয়া নামে তারা একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে। এখানে তারা ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ও জব পোর্টাল বানিয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিটের ৪১৩টি কনটেন্ট আছে। কাজেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা চাইলে বাসায় থেকেও এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারে। একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যদি সামান্যতম আয়ও করতে পারেন, তাহলে পরিবার ও সমাজে তার মর্যাদা বেড়ে যায়। আমাদের প্রতিবন্ধতা হলো, নারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আমরা খুব বেশি সম্পৃক্ত করতে পারিনি। এই সংখ্যাটা মোটের ৩০ শতাংশেরও কম। তবে যেসব নারী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তারা বেশ ভালো আয় করতে পারছেন।
আশরাফুন্নাহার মিষ্টি
মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। তাদের নিরুৎসাহিত করা হয়। এ বাধাটি কিন্তু আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে; তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের যে দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা রয়েছে, সেখানে প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ কোটার কথা বলা হয়েছে, যার অর্ধেক নারী। কিন্তু বাস্তবতা একটু ভিন্ন। প্রশিক্ষণে প্রতিবন্ধী নারীর সংখ্যা একদম কম। কারণ প্রতিবন্ধী নারীরা এত বেশি বাধার মধ্যে নিমজ্জিত যে, তাদেরকে ওই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য কাউন্সেলিং প্রয়োজন। সেই সঙ্গে মেন্টাল সাপোর্টেরও। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের জায়গা ও পদ্ধতি, যারা প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন এবং আরও যারা সহযোগী থাকবেন তারা যেন জেন্ডার সংবেদনশীল হন। কারণ আমাদের প্রতিবন্ধী নারীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করে যে, টেকনোলজি ব্যবহার করতে গিয়ে না আবার সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন! প্রতিবন্ধী নারীরা যারা আজকে নেতৃত্বে এসেছেন, তাদের অনেকেই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন এবং তাদেরকে এ জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়েছে।
অখিল পাল
যত জটিল প্রতিবন্ধিতা, তত বেশি তারা সমাজ থেকে দূরে চলে যায়। প্রধানত চারটি জায়গা থেকে তাদের উপেক্ষা করা হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম রাজনৈতিক জায়গাটি। কারণ, এটি তাদের অধিকারগুলোকে অস্বীকার করার এবং সমান সুযোগ না দেওয়ার বিষয়। এর মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণসহ সব অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হয়। এই প্রজেক্ট এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে এই চারটি প্রেক্ষাপটকে চিহ্নিত করা যায় এবং সেগুলোতে গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসা যায়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে প্রধান বাধাটা আসে আমাদের সমাজ-সংস্কৃতি থেকে। আমি মনে করি, এ প্রজেক্টের লক্ষ্য হওয়া উচিত 'কাউকে পেছনে ছেড়ে না আসা'। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মবাজারে ঢুকতে অনেক ক্ষেত্রেই বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তারা যদি নিজেরা আয় করতে পারে, তাহলে পরিবারেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। বাংলাদেশ সরকার যেভাবে তাদের নীতি ও কাজ করার ধরন সময়োপযোগীভাবে পরিবর্তন করে নিচ্ছে, আমি দিন দিন তাদের ভক্ত হয়ে উঠেছি। বাংলাদেশ সরকার সব সময় এক কদম এগিয়ে থাকে। আমি নিশ্চিত, এই প্রজেক্টের উদ্দেশ্যগুলো সত্যিকার অর্থেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নত করে তাদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
দুলাল কৃষ্ণ সাহা
প্রকল্পটিতে ভোকেশনাল ট্রেনিং অ্যান্ড ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্টের বিষয় এসেছে। দুটি বিষয়ই বেশ প্রাসঙ্গিক। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক ও পারিবারিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। আমি একটি পরিবারকে জানি, যাদের দুটি প্রতিবন্ধী সন্তান আছে, তাদের ঘর থেকে বের তো করা হয়ই না বরং বেঁধে রাখা হয়। কিন্তু ওই পরিবারের সবাই শিক্ষিত। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বের করে আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নতুন প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক কাজ করার মধ্য দিয়ে আমরা এগোনোর চেষ্টা করছি। ১৬০টি প্রতিষ্ঠানকে রেজিস্ট্রেশন দিয়েছি। এ দেশে সরকারি-বেসরকারি অনেক সংস্থা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছে। কিন্তু কাজটি সমন্বিতভাবে হচ্ছে না। আমাদের কাজ হচ্ছে সমন্বয় করা। আমরা গুণগত মান নিশ্চিত করব; শিল্প সংযোগ প্রতিষ্ঠা করব।
একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কারখানায় পাঠানোর পর কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে নিচ্ছে না। আবার জনসংখ্যার বড় একটি সংখ্যা শিক্ষিত বেকার, তাদের স্থান পূরণ করছে বিদেশ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরা। এ অবস্থায় দক্ষতা উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে সরকার। বিশাল জনগোষ্ঠীকে সমন্বিত করে দক্ষতার পর্যায়ে নিয়ে আসা বড় চ্যালেঞ্জ। দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে না পারলে আমাদের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা যাবে না। বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্যও দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। সরকার সবাইকে নিয়েই দেশকে এগিয়ে নিতে চায়। এ জন্য সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সব গোষ্ঠীকে একত্র করে নিয়ে আসতে হবে। সুন্দর একটি প্রয়াস দরকার। সে ক্ষেত্রে ভিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুসিভ ভোকেশনাল ট্রেনিং অ্যান্ড ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট প্রকল্প অত্যন্ত আশাপ্রদ।
ড. এম তারিক আহসান
উন্নয়নের ধারাকে ধরে রাখার জন্য প্রতিবন্ধীদের সক্রিয়ভাবে সমাজে অন্তর্ভুক্ত করাও গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জগুলোকে আমি পাঁচটি প্রধান ক্যাটাগরিতে ভাগ করতে চাই। এর একটি আমাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। কারণ, কর্মবাজারে প্রয়োজনীয় দক্ষতার ধরন প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। সেইসঙ্গে আমাদের বর্তমান করোনাকালীন অবস্থাকেও এই ক্যাটাগরিতে ফেলা যায়। অন্য আরেকটি ক্যাটাগরি 'অ্যাটিচিউট অ্যান্ড বিলিভ সিস্টেম', যেটি কিনা সব সময় একটি অন্যতম বাধা হিসেবে কাজ করে আসছে। নিউ নরমাল জীবনকে আলাদা ক্যাটাগরিতে রাখা যায়। সবশেষে থাকবে আমাদের এই পরিকল্পনা, অনুশীলন ও মডেলগুলো মূল স্রোতের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার বিষয়টি। এ পাঁচটি ক্যাটাগরিকে মাথায় রেখে চ্যালেঞ্জগুলো চিন্তা করলে দেখব, প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনার সময়ে আমাদের শুধু অংশগ্রহণকেই প্রাধান্য দিলে হচ্ছে না। আমাদের চারটা প্রধান ধরন আছে, যেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ইন্ডিকেটর সেট করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবন্ধীদের কাছে পৌঁছানো যেমন একটা অন্যতম প্রধান ইন্ডিকেটর, সেইসঙ্গে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণও গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিশ্চিত করতে গেলে কারিকুলাম নমনীয় করতে হবে। তৃতীয়ত, প্রশিক্ষণার্থীদের যে দক্ষতা বা জ্ঞান আমরা অর্জন করাতে চাই, সেটি আমরা ঠিকমতো করতে পারছি কিনা, সেটি দেখাও প্রয়োজন। চতুর্থত, দৃষ্টিভঙ্গিজনিত ও পলিসিগত গ্রহণযোগ্যতা।
এ এইচ এম নোমান খান
১২ রকমের প্রতিবন্ধিতাকে আইন দ্বারা আলাদা করা হয়েছে। শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ এখনও ওইভাবে প্রচলিত হয়নি। দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাক- এই তিন ধরনের প্রতিবন্ধিতা থাকা জটিল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া কঠিন। আমরা গত ১২ বছর শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করেছি। তাদের নিয়ে যে কাজ করা সম্ভব, তা গত এক যুগে আমরা দেখিয়েছি। এরই মধ্যে আমরা এক হাজার দুইশর বেশি এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নিয়ে কাজ করেছি। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তি এখন স্কুলে যাচ্ছে। সার্থকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে জটিল প্রতিবন্ধিতা নিয়েও যে কর্মসংস্থান করা যায়, এমন উদাহরণও আমাদের কাছে আছে। শ্রবণ-দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য নয়। এ জোটের মাধ্যমে স্টার মডেলটিকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি, তাহলে সারাদেশেই এটাকে পৌঁছানো সম্ভব হবে। আমাদের সঙ্গে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে, এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষিত করে পরে তারা সহায়তাও দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে আমরা এমন জটিল প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে নির্দিষ্ট একটি পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরেছি।
দেওয়ান মাহফুজ এ মওলা
এডিডি ইন্টারন্যাশনাল দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশে প্রান্তিক পর্যায়ের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠিত করে তাদের উৎপাদনের মূলস্রোত ধারায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে আজ আমরা যে প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা করছি তা এডিডির জন্য অনুরূপ একটি সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে, যার মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় অনানুষ্ঠানিক কাজের ক্ষেত্রসমূহে অনুকূল সহায়ক কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে কাজ করা হবে, যে কাজে এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ১০টি প্রান্তিক পর্যায়ের 'প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন (ওপিডি)'কে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যুক্ত করেছে। ওপিডিদের এ অংশীদারিত্বমূলক অংশগ্রহণের ফলে একটি দিকে ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যাক্টিভিস্টদের কার্যক্রম যেমন আরও গতিশীল করবে সেই সঙ্গে ওপিডির এ অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের অনানুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে বস্তুনিষ্ঠ প্রস্তাবনা প্রদান করা সম্ভব হবে। এডিডি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে আসছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে তা আরও বেগমান ও দৃশ্যমান হবে আশা করি।
মো. হামিদুল হক
ইনক্লুসিভ ভোকেশনাল ট্রেনিং অ্যান্ড ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট প্রকল্প অত্যন্ত সময়োপযোগী। এ প্রকল্প বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হতে চলেছে জেনে আমি আনন্দিত। এ দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে। সরকারি সংস্থার মধ্যে অন্যতম জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনের অন্যতম লক্ষ্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যাতে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে আয়-রোজগার করে সমাজে সম্মানের সঙ্গে বসবাস করার সুযোগ পায়। এ বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে সর্বপ্রথম কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন তৈরি হয়েছে। এ আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুনিশ্চিত হবে। এ আইন বাস্তবায়নে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম এরই মধ্যে গৃহীত হয়েছে। আইনের আওতায় বিধিমালা তৈরি হয়েছে। বিধিমালার আওতায় বিধিমালা সম্পর্কিত সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা এরই মধ্যে গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। এ কর্মপরিকল্পনায় রাষ্ট্রের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়নে কীভাবে কাজ করবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়নে হাজার হাজার এনজিও মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। এসব সংস্থাকে কর্মপরিকল্পনায় সংযুক্ত করা হয়েছে। তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আমাদেরই সমাজের একটি অংশ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জরিপে এরই মধ্যে ২৩ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। এ সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বহু বৃদ্ধি পেতে পারে। কাজেই এ বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল স্রোতে সম্পৃক্তকরণ করতে হবে। শুধু সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের সম্মানের সঙ্গে এ রাষ্ট্রব্যবস্থায় বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। কেবল কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আয়-রোজগারের পথকে সম্প্রসারিত করেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্মানের সঙ্গে সমাজে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব। সে জন্য ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুসিভ ভোকেশনাল ট্রেনিং অ্যান্ড ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এখানে উপকারভোগী এক হাজার ৫০ জনের কথা বলা হয়েছে। সংখ্যায় এটি বেশি না হলেও আমরা মনে করছি, ভালো একটি সূচনা হচ্ছে।
মুরতেজা খান
আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি শ্রমবাজার গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছি। ব্র্যাক তাদের একটি মডেলের মাধ্যমে ৯০ শতাংশ কর্মসংস্থান তৈরি করতে পেরেছে, এটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। আশা করি, ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুসিভ ভোকেশনাল অ্যান্ড ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট প্রকল্পও সফল হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথা এ প্রকল্পে আছে। করোনার প্রভাব আমাদের ওপর এসেছে এবং এটি থাকবে। প্রতিযোগিতাও কর্মবাজারে বেড়ে গেছে। প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা ছাড়া কর্মবাজারে আসা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমরাও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রাইভেট সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দুটি প্রজেক্টে কাজ করছি। করোনার কারণে কিছু কিছু জায়গায় চাকরি হারাচ্ছেন মানুষ। ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুসিভ ভোকেশনাল অ্যান্ড ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট প্রকল্পে লোকাল কমিউনিটিকে ফোকাস করা হয়েছে, ফলে কর্মসংস্থান বেশি হতে পারে। প্রজেক্টে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পরিকল্পনা আছে। হার্ড স্কিলের পাশাপাশি আমরা যেন সফট স্কিলের বিষয়টিও মাথায় রাখি। কারণ, অনেক কর্মী সফট স্কিলের অভাবে চাকরির বাজারে সুযোগগুলো পুরোপুরি নিতে পারছেন না।
মুরালি পদমানাভান
প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তারা প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ দিতে চান, যা বর্তমানে আমাদের সবার জন্যই একটি চ্যালেঞ্জ। তাই দক্ষতা বৃদ্ধির একটি আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আমরা লাইট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড একীভূত সমাজে বিশ্বাস করি। এখানে একীভূত সমাজ বলতে আমরা বুঝি এমন এক সমাজব্যবস্থা, যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তাসহ নানা ক্ষেত্রে কেউ পিছিয়ে থাকবে না। আমরা আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় আমাদের কার্যক্রম বিস্তৃত করেছি। আমরা বিশ্বাস করি যে জনশক্তিকে আমরা উৎসাহিত করি, যেটুকু সম্পদ আমরা ব্যবহার করছি, সবসহ উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে তা হওয়া উচিত একীভূত এবং সবার অন্তর্ভুক্তিসহ। এখনও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছাতে আমাদের অনেক প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। এই জোটে একদম ওপরের সারির কর্মকর্তা থেকে মাঠপর্যায়ে কাজ করা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিতে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে জোটকে পরামর্শ বা অন্য সহায়তা দিতে আমরা চেষ্টা করছি, যাতে তারা এ বাধাগুলো অতিক্রম করতে পারে।
আসাদুজ্জামান চৌধুরী রাসেল
আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে কাজ করছি। কাজ করতে গিয়ে আমরা মাঠপর্যায়ে দেখেছি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা পরিবার ও সমাজে অবহেলিত। এডিডি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ঘরের বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি এবং অনেকেই বাইরে এসেছেন। ফলে অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এখন কর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তারা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তারা স্বাস্থ্যসেবা ঠিকমতো পাচ্ছেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সরকারি, বেসরকারি ও পরিবার থেকে সঠিক গাইডলাইন ও কাজ দেওয়া গেলে তারা দেশের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন। সব ক্ষেত্রে সবার সহায়তা দরকার। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি ট্রেনিং সেন্টারে সব রকম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। কারণ, সেখানে প্রতিবন্ধীদের প্রবেশগম্যতা নেই। হুইলচেয়ার নিয়ে ট্রেনিং সেন্টারে প্রবেশের ব্যবস্থা নেই। এ জায়গায় সবার দৃষ্টি দেওয়া উচিত। শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না, প্রশিক্ষণের পর তাকে ব্যাংক কিংবা সমবায় অধিদপ্তর থেকে পুঁজির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। প্রশিক্ষকদের প্রতিবন্ধীদের ট্রেনিংয়ের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।


সঞ্চালক
মুস্তাফিজ শফি
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
সমকাল

সভাপতি
মো. শফিকুল ইসলাম
কান্ট্রি ডিরেক্টর
এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
প্রধান অতিথি
দুলাল কৃষ্ণ সাহা
নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব)
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
বিশেষ অতিথি
মো. হামিদুল হক
যুগ্ম সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়
পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ)
প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন
এস এম শাহজাহান
ডেপুটি ডিরেক্টর (কোর্স অ্যাক্রিডিটেশন)
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড

প্রকল্প পরিচিতি উপস্থাপন
এম. মাহজুজ আলী
ডেপুটি ম্যানেজার
দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি, ব্র্যাক

আলোচক

জয়দীপ সিনহা রায়
হেড অব অপারেশনস
দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি, ব্র্যাক

অখিল পাল
নির্বাহী পরিচালক
সেন্স ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া

এ এইচ এম নোমান খান
নির্বাহী পরিচালক
সিডিডি
মুরালি পদমানাভান
রিজিওনাল ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুশন অ্যাডভাইজার
লাইট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল
ড. এম তারিক আহসান
অধ্যাপক
ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

খন্দকার জহুরুল আলম
নির্বাহী পরিচালক
সেন্টার ফর সার্ভিস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটি

আশরাফুন্নাহার মিষ্টি
নির্বাহী পরিচালক
উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন

মুরতেজা খান
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বিজনেস ডিজঅ্যাবিলিটি নেটওয়ার্ক

দেওয়ান মাহফুজ এ মওলা
পলিসি অ্যাডভোকেসি কো-অর্ডিনেটর
এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ

আসাদুজ্জামান চৌধুরী রাসেল
সভাপতি
রজনীগন্ধা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা

অনুলিখন
জাহিদুর রহমান ও তন্ময় মোদক
স্টাফ রিপোর্টার, সমকাল

মন্তব্য করুন