
সকাল থেকেই পিহুর বারবার একটা কথাই মনে হচ্ছে- 'ছোটদের পক্ষে বড়দের সব কথা বুঝিয়ে বলা কঠিন।' এই ব্যাপারটা পিহু ছাড়া পৃথিবীতে আর একটিমাত্র মানুষ বোঝেন; তিনি হলেন অঁতোয়ান দ্য স্যাঁৎ একজুপেরি। ছোট্ট রাত্রপুত্র বইটি লিখেছেন যিনি। পিহুর বারবার মনে হয়, এই ভদ্রলোকের দেখা যদি সে পেতো, তবে মন খুলে কতো কথাই না তাঁকে বলতো সে। তিনি নিশ্চয়ই পিহুর কথাগুলো বুঝতেন, বিশ্বাস করতেন এবং তা কোনো প্রমাণ ছাড়াই।
ছোটরা কোনো কিছু, মানে যা-ই করতে যাক না কেন, যা-ই বলতে নিক না কেন, সবই প্রমাণ দিয়ে বুঝিয়ে বলতে হয়। এমনকি গ্লাসের দুধ পুরোটাই খেয়েছে কিনা, সেটাও প্রমাণ দিয়ে দেখাতে হয়। কেন? শুধু 'খেয়েছি' বললে কি হয় না? বাবা বলেছেন, রোজ ২০টা করে অঙ্ক কষতে। 'হ্যাঁ, অঙ্ক কষেছি' এইটুকু বললে কি হয় না? তাতেও প্রমাণ দিতে হয়? বড়রা কেবল বড়দের কথা বিশ্বাস করে। এই তো সেদিন ড্রইং খাতায় একটা দারুণ পদ্মফুল আঁকলো সে। মাকে দেখাতেই বললেন, 'ছাপ দিয়ে এঁকেছো?'
কিন্তু পিহু মোটেও ছাপ দিয়ে আঁকেনি। আরেকদিন চার লাইনের একটা ছড়াও লিখে ফেললো পিহু। মা, বাবা কেউই বিশ্বাস করলেন না, এটা পিহুর লেখা ছড়া! দুপুরে সবাই যখন ঘুমোতে গেলো, পিহু বড় সোফাটার পেছনে বসে কাঁদলো। উফ্ এখানেই শেষ নয়, মায়ের কাঠের ফ্রেমের ছোট্ট একটা আয়না আছে। ওই যে চোখে কাজল পরার সময় লাগে এই আয়না। সেটা কী করে যেন ভেঙেছে, পিহু জানেই না। অথচ মা পিহুকে বারবার বলছিলেন, 'ভেঙেছো তো কী হয়েছে, স্বীকার করো মায়ের কাছে!' কী স্বীকার করবে পিহু? ও তো জানেই না কী করে ভাঙলো সেই আয়না।
পিহু রোজ কাঁদতো, যখন দুপুরবেলায় সবাই ভাতঘুমে থাকতো। ওই বড় সোফাটার পেছনে শুয়ে, কখনও বসে। ভাবতো, আচ্ছা আমি কি সত্যিই ওদের মেয়ে? যদি তাই হয়, তাহলে ওরা আমাকে বিশ্বাস করে না কেন? আমার কথা বোঝে না কেন? ভাবতে ভাবতে পিহুর মনে হলো, না আমি ওদের মেয়ে না। ওরাও আমার মা-বাবা নন। পিহুর চোখের সামনে ভেসে উঠলো লম্বা হলুদাভ গায়ের রঙের এক নারী। ম্যাজেন্ডা রঙের শাড়ি পরা। হাসি হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন পিহুর স্কুলের সামনে। পিহু স্কুল থেকে বেরিয়ে দৌড়ে জড়িয়ে ধরলো সেই ভদ্র মহিলাকে। তিনি পিহুর হাত ধরে এগোচ্ছেন সামনের গাড়ির দিকে। কী নরম সে হাত, সে হাতে বিশ্বাস আছে। পিহুর মনে হলো, এই হাত ছেড়ে দেওয়ার মতো নয়। পিহু বললো- মা জানো, ক্লাস টেস্টে অঙ্কে আমি ১০-এ ১০ পেয়েছি! ম্যাজেন্ডা শাড়ি পরা ভদ্র মহিলা বলে উঠলেন- ওমা তাই! আমার মেয়েটা তো ১০-এ ১০ পাবেই, রোজ ২০টা করে অঙ্ক করে যে! পিহু দেখলো, কী মিষ্টি হাসি তার মায়ের মুখে।
গাড়ির কাছাকাছি আসতেই দরজা খুলে দিলেন বাবা। দুটো পদ্মফুল এগিয়ে দিয়ে তিনি পিহুকে বললেন, তোমার আঁকা পদ্মটা আরও বেশি সুন্দর ছিলো আমার রাজকন্যা! পিহু দৌড়ে বাবার গলা জড়িয়ে ধরলো।
মাগরিবের আজান শুনে ঘুম ভেঙে গেলো পিহুর। দেখলো মা বসে আছেন মাথার কাছে? ভেজা কুশনটার দিকে তাকিয়ে মা বললেন, কেঁদেছো কেন মামণি? কী হয়েছে? আমি কি খুব বেশি বকেছি?
পিহু কিছু না বলেই মায়ের বুকে ঝাঁপ দিলো।
ছোটরা কোনো কিছু, মানে যা-ই করতে যাক না কেন, যা-ই বলতে নিক না কেন, সবই প্রমাণ দিয়ে বুঝিয়ে বলতে হয়। এমনকি গ্লাসের দুধ পুরোটাই খেয়েছে কিনা, সেটাও প্রমাণ দিয়ে দেখাতে হয়। কেন? শুধু 'খেয়েছি' বললে কি হয় না? বাবা বলেছেন, রোজ ২০টা করে অঙ্ক কষতে। 'হ্যাঁ, অঙ্ক কষেছি' এইটুকু বললে কি হয় না? তাতেও প্রমাণ দিতে হয়? বড়রা কেবল বড়দের কথা বিশ্বাস করে। এই তো সেদিন ড্রইং খাতায় একটা দারুণ পদ্মফুল আঁকলো সে। মাকে দেখাতেই বললেন, 'ছাপ দিয়ে এঁকেছো?'
কিন্তু পিহু মোটেও ছাপ দিয়ে আঁকেনি। আরেকদিন চার লাইনের একটা ছড়াও লিখে ফেললো পিহু। মা, বাবা কেউই বিশ্বাস করলেন না, এটা পিহুর লেখা ছড়া! দুপুরে সবাই যখন ঘুমোতে গেলো, পিহু বড় সোফাটার পেছনে বসে কাঁদলো। উফ্ এখানেই শেষ নয়, মায়ের কাঠের ফ্রেমের ছোট্ট একটা আয়না আছে। ওই যে চোখে কাজল পরার সময় লাগে এই আয়না। সেটা কী করে যেন ভেঙেছে, পিহু জানেই না। অথচ মা পিহুকে বারবার বলছিলেন, 'ভেঙেছো তো কী হয়েছে, স্বীকার করো মায়ের কাছে!' কী স্বীকার করবে পিহু? ও তো জানেই না কী করে ভাঙলো সেই আয়না।
পিহু রোজ কাঁদতো, যখন দুপুরবেলায় সবাই ভাতঘুমে থাকতো। ওই বড় সোফাটার পেছনে শুয়ে, কখনও বসে। ভাবতো, আচ্ছা আমি কি সত্যিই ওদের মেয়ে? যদি তাই হয়, তাহলে ওরা আমাকে বিশ্বাস করে না কেন? আমার কথা বোঝে না কেন? ভাবতে ভাবতে পিহুর মনে হলো, না আমি ওদের মেয়ে না। ওরাও আমার মা-বাবা নন। পিহুর চোখের সামনে ভেসে উঠলো লম্বা হলুদাভ গায়ের রঙের এক নারী। ম্যাজেন্ডা রঙের শাড়ি পরা। হাসি হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন পিহুর স্কুলের সামনে। পিহু স্কুল থেকে বেরিয়ে দৌড়ে জড়িয়ে ধরলো সেই ভদ্র মহিলাকে। তিনি পিহুর হাত ধরে এগোচ্ছেন সামনের গাড়ির দিকে। কী নরম সে হাত, সে হাতে বিশ্বাস আছে। পিহুর মনে হলো, এই হাত ছেড়ে দেওয়ার মতো নয়। পিহু বললো- মা জানো, ক্লাস টেস্টে অঙ্কে আমি ১০-এ ১০ পেয়েছি! ম্যাজেন্ডা শাড়ি পরা ভদ্র মহিলা বলে উঠলেন- ওমা তাই! আমার মেয়েটা তো ১০-এ ১০ পাবেই, রোজ ২০টা করে অঙ্ক করে যে! পিহু দেখলো, কী মিষ্টি হাসি তার মায়ের মুখে।
গাড়ির কাছাকাছি আসতেই দরজা খুলে দিলেন বাবা। দুটো পদ্মফুল এগিয়ে দিয়ে তিনি পিহুকে বললেন, তোমার আঁকা পদ্মটা আরও বেশি সুন্দর ছিলো আমার রাজকন্যা! পিহু দৌড়ে বাবার গলা জড়িয়ে ধরলো।
মাগরিবের আজান শুনে ঘুম ভেঙে গেলো পিহুর। দেখলো মা বসে আছেন মাথার কাছে? ভেজা কুশনটার দিকে তাকিয়ে মা বললেন, কেঁদেছো কেন মামণি? কী হয়েছে? আমি কি খুব বেশি বকেছি?
পিহু কিছু না বলেই মায়ের বুকে ঝাঁপ দিলো।
মন্তব্য করুন