সব বিজ্ঞানের আদি বিজ্ঞান জীববিজ্ঞান। এই জীববিজ্ঞানের কল্যাণে মানব সভ্যতার বিবর্তন থেকে শুরু করে জীবন রহস্যের অনেক কিছুই উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে থাকা কৃষকরা আজ এই বিজ্ঞানের কল্যাণে নতুন নতুন জাতের ফসল উৎপাদন করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলছেন। জীববিজ্ঞানের নতুন রহস্য উন্মোচনে থেমে নেই এ দেশের খুদে বিজ্ঞানীরাও। তাই আগামী জুলাই মাসে বিশ্বজয়ের লক্ষ্য নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য ৩৪তম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে তারা।

‘মরুর দেশে বাংলার বাঘ’– এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জীববিজ্ঞানের জ্ঞান ছড়িয়ে দিয়ে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনভর নবম বিডিবিও-সমকাল জাতীয় জীববিজ্ঞান উৎসবের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (বিডিবিও) ও দৈনিক সমকাল যৌথভাবে এ আয়োজন করে; পাওয়ার্ড বাই শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংক। এ ছাড়া আয়োজনের প্রশিক্ষণ সহযোগী হিসেবে আছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি। কারিগরি সহযোগিতা করেছে ল্যাব বাংলা।

চূড়ান্ত পর্বে জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে সারাদেশের ১২টি অঞ্চল থেকে বিজয়ী ১ হাজার ২৫৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে বিজয়ীদের যাচাই করা হয়। এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত সেরা ২০ জন জাতীয় বায়োক্যাম্পে অংশগ্রহণ করবে। তাদের মধ্য থেকে সেরা চারজন শিক্ষার্থী ও জুরি বোর্ডের দুই সদস্যসহ মোট ছয়জন সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত পর্বে এমসিকিউ পরীক্ষার ফলের মাধ্যমে শতাধিক পরীক্ষার্থীকে মেডেল ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।

বিকেলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির অডিটোরিয়ামে চূড়ান্ত পর্বের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। আরও বক্তব্য দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র রায় পোদ্দার, ল্যাব বাংলার চেয়ারম্যান রাখাল রাহা প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিডিবিও সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, শুধু জীববিজ্ঞানই নয়, বরং প্রতিটি অলিম্পিয়াডে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করতে হবে। বিজ্ঞানের চর্চা অব্যাহত থাকলে এ দেশের শিক্ষার্থীরা একদিন না একদিন স্বর্ণপদক জয় করে আনবেই। কেননা, এ দেশের মানুষ অনেক মেধাবী।

মশিউর রহমান বলেন, বিজ্ঞানকে বোঝার পাশাপাশি এ দেশের ইতিহাস ও মূল্যবোধকে জানতে হবে। একই সঙ্গে তা ছড়িয়ে দিতে হবে সারাবিশ্বে। বিজ্ঞানের শুভ প্রয়োগ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

অলোক কুমার পাল বলেন, জীববিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন আমাদের দরকার নিরাপদ খাদ্য। আগামী প্রজন্ম এই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

আবু সাঈদ খান বলেন, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জীববিজ্ঞান। দারিদ্র্য এবং ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এই বিজ্ঞান ভূমিকা রাখবে। আলোচনা শেষে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

এর আগে সকালে একই স্থানে উৎসবের উদ্বোধন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল। কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক সবুজ ইউনুস, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম ও জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের ঢাকা উত্তরের সভাপতি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ।