
রাজধানীর সাতরাস্তা মোড়ে ভালাে কাজের হোটেলের ইফতারি নিয়ে অপেক্ষায় মানুষ-সমকাল
প্রতিদিন রাস্তার প্লাস্টিক, ভাঙাড়ি কুড়িয়ে বিক্রির টাকায় চলেন আব্দুল মান্নান। এক দিন বের হতে না পারলে উপোস থাকতে হয়। নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন। রমজান আসায় ইফতারি নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যান আব্দুল মান্নানের মতো রাজধানীর হাজারো ছিন্নমূল মানুষ। তবে তাঁদের এ চিন্তা দূর করেছে ‘ভালো কাজের হোটেল’। স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনের পক্ষ থেকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন ভালোমানের ইফতার করানো হচ্ছে। এ জন্য অবশ্য শর্ত– একটি ভালো কাজ করতে হবে।
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে ভালো কাজের হোটেলের ইফতারি নিতে লম্বা লাইন দেখা যায়। সেখানে আলাপকালে আব্দুল মান্নান জানান, আগে থেকেই তিনি ভালো কাজের হোটেলে খাবার খান। বৃষ্টির কারণে শনিবার কোনো কাজ পাননি; করতে পারেননি কোনো ভালো কাজও। তবে তা তিনি লুকাননি। আর তাঁর এ সত্য বলাকে ভালো কাজ গণ্য করে ইফতারি দেওয়া হয়েছে বলে জানান। পাশেই ছিলেন রিকশাচালক রাজিব মিয়া। তিনি জানান, গরিবদের জন্য এসব মানুষকে আল্লাহই পাঠিয়েছেন। না হলে দুর্মূল্যের বাজারে একবেলা খেয়েপরে বাঁচাই দায় হতো।
ইফতারি নেওয়ার অপেক্ষায় অন্তত ২০০ মানুষ ছিলেন। সারিবদ্ধভাবে তাঁরা ইফতারির প্যাকেট নেন, কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। হোটেলের পক্ষ থেকে ফুটপাতে লিখে দেওয়া হয়েছে সিরিয়াল নম্বর। সেই অনুযায়ী বসে অপেক্ষা করছেন সবাই। একজন খাবার নেওয়ার পর, অন্যজন আসছেন। প্যাকেট নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে চলে যাচ্ছেন।
অপেক্ষায় থাকাদের মধ্যে ছেঁড়া লাল জামা পরা এক যুবক সবার নজর কাড়েন। খাবার পাচ্ছেন এ আশায় তিনি হাসছিলেন ও হাত তালি দিচ্ছিলেন। আলাপ করতে গিয়ে বোঝা যায়, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। কোনো কথা না বলায় নাম জানাও সম্ভব হয়নি। আশপাশের কেউ তাঁর পরিচয় জানাতে পারেননি। তবে খাবার পেয়ে তাঁর বাড়তি আনন্দের প্রকাশ চোখকে ভিন্ন প্রশান্তি এনে দেয়।
দায়িত্বরত হোটেলের সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক মাহমুদুল হাসান অনিক সমকালকে জানান, রাজধানীর ছয়টি ও চট্টগ্রামের একটি স্থানে একটি ভালো কাজের বিনিময়ে ছিন্নমূল মানুষকে খাবার সরবরাহ করেন তাঁরা। খাবার হিসেবে কখনও ডিম-খিচুড়ি, কখনও চিকেন খিচুড়ি কিংবা তেহারি থাকে। রমজানে ইফতারি হিসেবে বেগুনি, পেঁয়াজু, ছোলা, মুড়ি, ফল ও শরবত দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর একদল তরুণ ভালো কাজকে উৎসাহিত করতে খুলেছেন ব্যতিক্রমী এ হোটেল। প্রতিদিন অসহায় মানুষের অন্তত একটি ভালো কাজের বিনিময়ে একবেলা খাবার সরবরাহ করা হয় হোটেলের পক্ষ থেকে। রমজান বাদে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে এ কার্যক্রম। সপ্তাহের অন্যান্য দিনে বেলা দেড়টা থেকে ৩টা পর্যন্ত খাবার দেওয়া হয়।
এ ছাড়া শুক্রবার খাবার নিয়ে ছোটেন রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ ও এতিমখানায়। মসজিদের সামনে আসা নিম্নআয়ের মানুষদের হাতে যেমন খাবার তুলে দেন, তেমনি এতিমখানায় গিয়ে পৌঁছে দেন প্যাকেট। এভাবে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ জনকে খাবার দেওয়া হয়। ভালো কাজের হোটেলের স্বেচ্ছাসেবকরা ‘ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ’ নামে ফেসবুকভিত্তিক একটি সামাজিক উদ্যোগে যুক্ত। সমাজের বিভিন্ন মানুষের অনুদান থেকেই স্বেচ্ছাশ্রমে এ মহতী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তাঁরা।
মন্তব্য করুন