পিনপতন নীরবতায় চলছিল বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি নিয়ে প্রতিযোগিতা। জ্ঞানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কে কাকে পেছনে ফেলে হবেন চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন– সেই দৌড়ে নেমেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। গতকাল শুক্রবার এ দৃশ্য দেখা যায় রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে। আনন্দঘন এ প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ বায়োলজি অলিম্পিয়াড (বিডিবিও) এবং দৈনিক সমকাল। গতকাল ছিল ‘বিডিবিও-সমকাল বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ২০২৩’ এর ঢাকা উত্তরের আঞ্চলিক উৎসব।

 দুপুরে সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ঢাকা উত্তর আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি এবং শেকৃবির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক হারুন-উর-রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া। এতে আরও বক্তব্য দেন সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, এফএওর টিম লিডার জুলিয়াস সুকেমি, শেকৃবির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. জামিলুর রহমান, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক ড. সৌমিত্র চক্রবর্তী, অলিম্পিয়াডের ঢাকা উত্তরের সহসভাপতি ও মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক রুবেল আহমেদ প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া শিক্ষার্থীদের সামনে জীববিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মানুষের জীবনের সব ক্ষেত্রে জীববিজ্ঞানের ভূমিকা আছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে শুরু করে কৃষিবিজ্ঞান– সব ক্ষেত্রেই জীববিজ্ঞানের প্রয়োজন আছে।

আবু সাঈদ খান বলেন, আমরা বিজ্ঞানের উৎকর্ষের যুগে বাস করছি। এটি আমাদের জীবনকে বদলে দিয়েছে। বিজ্ঞান আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে আবার এর অপব্যবহার অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। তবে যেসব বিষয় মানবকল্যাণে কাজ করে, সেখানে বরাদ্দ কম থাকে। অন্যদিকে, অস্ত্র, পারমাণবিক বোমা তৈরিতে বেশি বরাদ্দ থাকে। মানুষের জ্ঞান সব সময় ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করতে হবে। এর অন্যতম হলো জীববিজ্ঞান। এটি বিজ্ঞানের কল্যাণমুখী ধারা।

জুলিয়াস সুকেমি বলেন, জীবনের সবকিছুর মধ্যেই জীববিজ্ঞান আছে। তাই একে বাদ দিয়ে বিজ্ঞানচর্চা সম্ভব নয়।

অনুষ্ঠানে ‘জুনিয়র’, ‘সেকেন্ডারি’ ও ‘হায়ার সেকেন্ডারি’– তিন ক্যাটাগরিতে ঢাকা উত্তরের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন’ হয়েছেন মনিপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাকিন শাহরিয়ার বিন কবির। এ ছাড়া এই ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ১০ জন, প্রথম রানার্সআপ ৩০ জন এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ ৩৯ জন। সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন’ মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের তাসিন ইন্তিসার। এতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ২৭ জন, প্রথম রানার্সআপ ৫৬ জন এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ ৮০ জন। হায়ার সেকেন্ডারিতে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন’ ঢাকা নৌবাহিনী কলেজের মৌমিতা নাজ। এখানে চ্যাম্পিয়ন ১২ জন, প্রথম রানার্সআপ ২৫ জন এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ ৩৭ জন। বিজয়ীদের মেডেল ও সনদপত্র দেওয়া হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে অতিথিদের সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।

এর আগে সকালে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়। এর পর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া উৎসবের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সমকাল এবং অলিম্পিয়াডের প্রতিনিধিরা শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীরা নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় অংশ নেন। এর পর তাঁদের মৌখিক পরীক্ষা নেন অলিম্পিয়াড কমিটির মনোনীত ব্যক্তিরা।

এদিকে গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক জীববিজ্ঞান উৎসব। এতে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৬০২ শিক্ষার্থী অংশ নেন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ক্যাম্পাসের প্লে-গ্রাউন্ডে বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতিতে পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক জামাল উদ্দিন ভূঞা ও বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড সিলেট অঞ্চলের সভাপতি অধ্যাপক মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডসহ অতিথিরা। এতে তিন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার দেওয়া হয়।

লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ঘোষণা করা হয় ফলাফল। এতে পুরস্কার জিতে নেন ৩২০ শিক্ষার্থী, যাঁরা জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেবেন। হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে সেরাদের সেরা হন যৌথভাবে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের মাহেলা মেহনাজ ও ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সুমাইয়া বেগম। সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে সেরাদের সেরা হন জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের জান্নাতুল মাওয়া রাসিন ও জুনিয়র ক্যাটাগরিতে একই প্রতিষ্ঠানের মাহমুদুল হাসান ফাহাদ। এ ছাড়া এবারের আয়োজনে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সর্বোচ্চ ২৫৩ শিক্ষার্থী অংশ নেওয়ায় এ প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

বিডিবিও সিলেট অঞ্চলের সভাপতি অধ্যাপক মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি সিকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক জামাল।

‘মরুর দেশে বাংলার বাঘ’ স্লোগানে দেশব্যাপী এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সিলেটের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান খান, সিকৃবির অধ্যাপক ড. মেহেদী হাসান, শাবির অধ্যাপক জাকির হোসেন, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস, অধ্যাপক তিলক চন্দ্র, সুনামগঞ্জ কলেজের অধ্যাপক আশরাফুল আলম, অধ্যাপক ড. শরিফুন্নেছা মুনমুন, অধ্যাপক মাদুদুর রহমান, অধ্যাপক অনিমেষ প্রমুখ।