বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নতুন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচ মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর ঠিক ১৪ দিনের মাথায় ২০ ডিসেম্বর রাতে গণভবনে এক বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে কমিটি ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কমিটিতে ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম এ ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নাম ঘোষণা করা হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দ্রুত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে ছাত্রলীগকে অধিকতর সক্রিয় করার ঘোষণা দিলেও আজও পূর্ণাঙ্গ হয়নি কমিটি। তবে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করে এ মাসের মধ্যেই কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে বলে সমকালকে জানিয়েছেন তাঁরা।

গত ১৯ এপ্রিল সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের যৌথ সভায় ছাত্রলীগের এ দুই শীর্ষ নেতাকে ঈদের পর দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে গত ৩০ মার্চ গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন সাদ্দাম-ইনান। সে সময়ও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

পদের আশায় দৌড়ঝাঁপ নেতাকর্মীর নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণার পর থেকেই উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির পদ-পদবি পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন নেতাকর্মীরা। নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণার পর থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটির পদপ্রত্যাশীরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক– দুই ভাগে ভাগ হয়ে যান। তাঁরা নিয়মিত মধুর ক্যান্টিন, ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং সংগঠনের প্রধান কার্যালয়ে যাচ্ছেন নিজেদের নেতাদের ‘সালাম’ দিতে। এ ছাড়া সাদ্দাম-ইনান হলে অবস্থান করায় সালাম দিতে তাঁদের হলের সামনেও রাতদিন অবস্থানও করছেন পদপ্রত্যাশীরা।

সম্প্রতি সরেজমিন সাদ্দাম-ইনানের হলের সামনে দেখা যায়, সালামে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে পদপ্রত্যাশীরা সভাপতির স্যার এ এফ রহমান এবং সাধারণ সম্পাদকের বিজয় একাত্তরে গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করছেন। সাদ্দাম-ইনান হলে এলে তাঁদের সালাম দিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন পদপ্রত্যাশীরা। এমনকি ঈদের আগেই কমিটি হতে পারে– এমন ধারণায় অনেকে ঈদেও বাড়ি যাননি।

দুই নেতার অনুসারী বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয় সমকালের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা জানান, এখনও কমিটি না হওয়ায় নিয়মিত হাজিরা দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকছেন তাঁরা। সক্রিয় না থাকলে পদ না পাওয়ার শঙ্কা তাঁদের।

সার্বিক বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, কমিটি পূর্ণাঙ্গের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কমিটি চূড়ান্ত করে দ্রুতই আমরা এটি প্রকাশ করব। কোন সময়ের মধ্যে কমিটি প্রকাশ হতে পারে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, মে মাসের মধ্যেই কমিটি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেমন নেতৃত্ব আসতে পারে– জিজ্ঞেস করলে সাদ্দাম বলেন, আমরা একটি সমন্বিত কমিটি করার কথা ভাবছি, যেখানে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এ ছাড়া আমরা স্বচ্ছ ইমেজের ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখব। কোনো ধরনের প্রমাণিত বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের নেতৃত্বে রাখা হবে না।