নায়ক ফারুকের ছবি দেখে অভিনয়ে এসেছিলেন অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। তার মতো অভিনেতা এদেশে আর আসবেন কিনা তা নিয়েও ভাবেন ইলিয়াস কাঞ্চন। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে সদ্য প্রয়াত বরেণ্য অভিনেতা ও সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের স্মৃতিচারণ করে এসব কথা বলেন তিনি। 

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‌‘এখন আমরাও মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুণছি। কখন যে চলে যাই বুঝতে পারছি না। বলতে গেলে সবাই চলে যাচ্ছে। রাজ্জাক ভাই, ফারুক ভাই, জাফর ইকবাল- মানুষগুলো যখন ছিলো তখন চলচিত্রের সুদিন ছিলো।’ 

তিনি বলেন, আমি নিজেও ফারুক ভাইয়ের ছবি দেখে চলচিত্রে এসেছি। ফারুক ভাই যেসকল ছবিতে অভিনয় করেছেন সেগুলো সত্যি অসাধারণ। কোনোভাবেই চিন্তা করা যায় না। কথার এক ফাঁকে বলেন, ‘গোলাপি এখন ট্রেনে, নয়নমণি, লাঠিয়াল ছবিগুলো যে আবেদন সেগুলো সত্যি ভীষণ বাস্তব। চরিত্রগুলোকে মানুষ ভালোবাসতো। সেই সময় মানুষ এসব ছবির জন্যই হলে যেতো।’ 



ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, এখন চলচিত্রে উনাদের মতো মানুষের ভীষণ অভাব। ফারুক ভাইয়ের জায়গাতে আরেকজন আসবেন সেটা আমি খুঁজে পাই না। যে তার স্থান নিতে পারবেন। উনার (নায়ক ফারুক) মতো শিল্পী আর তো হলো না এদেশে। কেউই আসলো না। চলচিত্রের উত্থান দেখে যেতে পারবো কিনা জানি না- যোগ করেন তিনি। 

সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসাসেবা নেন অভিনেতা ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ফারুক। সর্বশেষ ২০২০ সালে অক্টোবর মাসের শেষদিকে চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আসেন তিনি। ২০২১ সালের ৪ মার্চ নিয়মিত চেকআপের জন্য আবারও সিঙ্গাপুর যান। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্রের নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ছিল পুরোনো বেশ কিছু শারীরিক জটিলতাও। 

সোমবার সকাল ৮টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান বরেণ্য এই অভিনেতা । তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর আট মাস। 

১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন ফারুক। এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে ঢাকাই সিনেমার তার অভিষেক হয়। প্রথম সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন কবরী। এরপর ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ এ দুটি সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।

পাঁচ দশকের বেশি সময়ের অভিনয় ক্যারিয়ারে অভিনয় করেন বহু দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রে। ‘মিয়াভাই’ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে ‘মিয়াভাই’ হিসেবে খ্যাতি পান। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ নানা সম্মাননায় ভূষিত হন এই নন্দিত চিত্রনায়ক। অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।