- বিনোদন
- ছাত্রলীগের খারাপ ঘটনাই সংবাদের বিষয়বস্তু হচ্ছে
সাক্ষাৎকার : সাদ্দাম হোসেন
ছাত্রলীগের খারাপ ঘটনাই সংবাদের বিষয়বস্তু হচ্ছে

সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নেতিবাচক ঘটনা গণমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচিত। একের পর এক সন্ত্রাসের অভিযোগ এলেও সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের দাবি, ছাত্রলীগই সন্ত্রাসের শিকার। ভিন্নমতের প্রতিপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অনেক অভিযোগ থাকলেও তিনি বলছেন, ছাত্রলীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। বিরোধী মত দমন গণতন্ত্রের জন্য অবমাননা।
সম্প্রতি সমকালের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন তিনি।
তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন সমকালের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাজীব আহাম্মদ ও নিজস্ব প্রতিবেদক মাজহারুল ইসলাম রবিন।
সমকাল : ছাত্রলীগ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। আপনি বলেছেন, গণমাধ্যম ছাত্রলীগের ভালো খবর প্রচার করে না।
সাদ্দাম হোসেন : গণমাধ্যমে ছাত্র রাজনীতির সার্বিক বিষয়, শিক্ষার্থীদের সংকট ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মতামত আসে। এগুলোর আলোকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের কর্মকাণ্ডকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করে। অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো কমিয়ে আনা কিংবা শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচিই হোক– সবই আমরা গণমাধ্যমের কাছ থেকে পাই। বর্তমান বাস্তবতা অনুযায়ী আমাদের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রকাশ যদি করতে পারি এবং এ ক্ষেত্রে যদি গণমাধ্যম অনুপ্রেরণা দিত– তাহলে ছাত্র রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনে আরও উৎসাহ দেওয়া হতো। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গণমাধ্যমে আসে এবং আসবে– এটাই স্বাভাবিক।
সমকাল : যদি ছাত্রলীগ নিয়ে খারাপ ঘটনা কালেভদ্রে ঘটত তাহলে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যেত। ভালো খবর বেশি থাকলে নিশ্চয়ই আসত।
সাদ্দাম হোসেন : ছাত্রলীগ কিংবা অপরাপর কোনো ছাত্র সংগঠন যখন শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া, বেতন-ফি কমানোর কথা বলে কিংবা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেয়, তা গণমাধ্যমে প্রত্যাশিত মাত্রায় আসে না। আমরা কিছুদিন আগে বাউল উৎসব করেছি। হাতেগোনা কিছু গণমাধ্যম সেটি প্রচার করেছে। অর্থাৎ ছাত্রলীগ যখন এই কর্মসূচিগুলো পালন করছে, তখন গণমাধ্যমের মনোযোগ সেদিকে থাকে না। ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, খারাপ ঘটনাটাই বেশি সংবাদের বিষয়বস্তু হচ্ছে।
একজন পাঠক হিসেবে আমিও কিন্তু এই প্রশ্নটি করতেই পারি। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দিকে গণমাধ্যমের মনোযোগ থাকা স্বাভাবিক। গণমাধ্যমের ভূমিকাতেই আমরা অনুপ্রবেশকারী, যারা সংগঠনের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করছে, তাদের চিহ্নিত করতে পারি। তবে ইতিবাচক কর্মকাণ্ড প্রচারে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। ছাত্র রাজনীতি সার্বিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। একে যদি উৎসাহিত না করি কিংবা মেধাবী ও দক্ষ সংগঠকরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তাহলে তা জাতির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
সমকাল: প্রায় প্রতিদিনই প্রতিপক্ষকে দমন-পীড়নের খবর আসছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এতে প্রশ্ন আসে ছাত্রলীগ কি ছাত্র সংগঠন নাকি অন্যকিছু।
সাদ্দাম হোসেন : ছাত্রলীগ ভাষাভিত্তিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া থেকে শুরু করে সার্বিকভাবে এ দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থল ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ যেমন এ দেশের লাখ লাখ নেতাকর্মীর ঠিকানা, তেমনি এ দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীর ভরসার জায়গাও।
সমকাল : এই ইতিহাস সবার জানা। বর্তমান নিয়ে কথা বলতে চাই। গত ১০ ডিসেম্বর ছাত্রদল সন্দেহে ১২ জনকে মারধর করে পুলিশে দেওয়া হয়। এটি কি ছাত্রলীগের কাজের মধ্যে পড়ে? আপনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সাদ্দাম হোসেন : ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে সন্ত্রাস, মৌলবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছাত্র সংগঠনের বাড়বাড়ন্ত, তাদের কাছে সেশনজটের বিষয়গুলো আগে ছিল। বর্তমানে একজন শিক্ষার্থী সময়মতো পড়াশোনা শেষ করতে পারছে। অতীতের তুলনায় একজন শিক্ষার্থী ভালোভাবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন অতিবাহিত করতে পারছে। এর পেছনে ছাত্রলীগের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে।
সমকাল : ছাত্রলীগ কি কাউকে তল্লাশি করতে পারে? কারও মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখতে পারে?
সাদ্দাম হোসেন : প্রশ্নই আসে না। এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করতে পারে।
সমকাল : আপনি কিন্তু স্পষ্ট করে বলছেন না, ছাত্রলীগ সন্দেহের বশে কাউকে মারধর করবে না বা তল্লাশি করবে না।
সাদ্দাম হোসেন : কেউ এ জাতীয় ঘটনার শিকার হলে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেন।
সমকাল : আপনার কাছে স্পষ্ট প্রশ্ন, অন্য রাজনৈতিক সংগঠন করে এ কারণে কাউকে তল্লাশি করা, মারধর করা, পুলিশে দেওয়া ছাত্রলীগের কাজ কিনা। কাউকে নির্যাতন বেআইনি। সে যেই হোক।
সাদ্দাম হোসেন : ছাত্রলীগ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে এবং গণতন্ত্রের জন্য অসংখ্য নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, বিরোধী স্বর যতই তীব্র হোক তাকে দমন গণতন্ত্রকে অবমাননা করা। কিন্তু যদি শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিকোণ দেখেন, এ দেশের শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। তারা ক্যাম্পাসে অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসে। কিন্তু দেখা গেছে, তাদের স্বপ্নকে অনেকবার নস্যাৎ করা হয়েছে। এমন একটি ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক বাস্তবতা এ দেশে রয়েছে। এ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ছাত্র রাজনীতির সমালোচনা করলে, তা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। বিশ্বের কোনো দেশেই যুদ্ধাপরাধের দায়ে সম্পৃক্ত কোনো দলের ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি করার সুযোগ নেই।
সমকাল : এর জন্য সরকার আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে। তারা দেখবে। ছাত্রলীগের কাজ শিক্ষার্থীদের নিয়ে হওয়া উচিত।
সাদ্দাম হোসেন : পাকিস্তান আমলে তো ছাত্ররা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেছে। সামরিক স্বৈরাচারের সময় ছাত্ররা আন্দোলন করেছে। তখনকার ছাত্ররা কি তখন এটা ভেবেছে যে, এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে, আদালত রয়েছে? এটি নয়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার রাজনৈতিক অধিকার ছাত্রদের রয়েছে। এর সঙ্গে আমাদের আইনের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।
সমকাল : আপনার ভাষ্যমতে যে সংগঠনগুলো বাংলাদেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে তাদের নিষিদ্ধের দাবি জানাতে পারেন, আন্দোলন করতে পারেন। তাদের ধরে মেরে পুলিশে দিতে পারেন? পুলিশের মতো আচরণ করতে পারেন না।
সাদ্দাম হোসেন : এটি আমাদের দায়িত্ব নয়। এটি আমাদের কাজের পরিধির মধ্যে পড়ে না।
সমকাল: কিন্তু পুরোনো খবর ঘাটলে এমন হাজারো ঘটনা পাবেন।
সাদ্দাম হোসেন : এটির সুযোগ নেই। প্রশ্নও আসে না। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখা, শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্ন শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করার বিষয়ে দায়বদ্ধ রয়েছে। ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য এটাই যে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করাই আমাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব। যুদ্ধাপরাধীদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা আমাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব।
সমকাল : এ দাবিতে আন্দোলন করতে পারেন। কিন্তু কাউকে তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, মারধর ফৌজদারি অপরাধ। যেমন, বুয়েটে আবরার হত্যাকাণ্ডের পর সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে একই ঘটনা ঘটেছে। শিবির সন্দেহে চারজনকে মারধর করেছে ছাত্রলীগ। এর মধ্যে দুইজন আইসিইউতে ছিল। যারা এই কাজ করেছে, তারা বিন্দুমাত্রও অনুতপ্ত নয়। বরং তারা মনে করছে যে, তারা এটি ঠিক করেছে। তাহলে কি ছাত্রলীগ থেকে এই বার্তাই দেওয়া হচ্ছে, এটা তুমি করতে পার।
সাদ্দাম হোসেন: এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সুস্পষ্ট বার্তা রয়েছে গোটা দেশের নেতাকর্মীর জন্য। সেটি হচ্ছে, আমাদের ছাত্র রাজনীতি পরিচালিত হবে আদর্শিক ভিত্তিতে। আদর্শিক ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে এবং যুদ্ধাপরাধী ও মৌলবাদীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এ ছাড়া আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আইনগতভাবে তাদের যেন নিষিদ্ধ করা হয়।
সমকাল : এটি তো আপনার আহ্বান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসনের প্রতি। কিন্তু সভাপতি হিসেবে আপনার বার্তাটা কী? বিরোধী পক্ষকে দমন না তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা?
সাদ্দাম হোসেন : বিরোধী পক্ষকে দমনের রাজনীতি ছাত্রলীগ করে না। গণতান্ত্রিকভাবে সকল ছাত্র সংগঠনকে মোকাবিলা করি। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়ার সম্পর্ক রয়েছে, রাজনৈতিক ঐক্য রয়েছে। বিরোধী মতকে দমনের রাজনীতিতে ছাত্রলীগ বিশ্বাস করে না।
সমকাল : প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোও তো ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে দমনপীড়নের অভিযোগ করছে। ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র অধিকার পরিষদ অভিযোগ করছে। কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা আক্রান্ত হলেন। হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়েছে। আপনি গণতান্ত্রিকভাবে মোকাবিলার কথা বলছেন। রাস্তা, টিএসসিতে কেউ দাঁড়ালে তাকে মারধর করা হচ্ছে।
সাদ্দাম হোসেন : সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তসাপেক্ষ বিষয় যে, কারা এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই ধরা হয়, তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সংজ্ঞা রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ পরিষদ রয়েছে, এর আওতাধীন ১৩টি ছাত্র সংগঠন রয়েছে। প্রতিটি ছাত্র সংগঠনই মধুর ক্যান্টিনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমরাও অনেক সময় তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ি। আজ ক্যাম্পাসগুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকার কারণে কোনো ধরনের সহিংসতা নেই।
সমকাল : ভুল করে না থাকলে গত ১৪ বছরে ছাত্রলীগের যত নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন, বড় অংশই ছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার। তাহলে আপনি কীভাবে সন্ত্রাস মোকাবিলা করবেন?
সাদ্দাম হোসেন : বারবারই বলছি সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে।
সমকাল : সাবেক নেতৃবৃন্দ বলছেন, আগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কে এমপি তা চিনতেন না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলে জনপ্রতিনিধিদের ও নেতা অনুসারী হচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তৃণমূলে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রের ছাত্রলীগ আলাদা। ছাত্রলীগ কি ছাত্র সংগঠন নাকি স্থানীয় নেতাদের নিজস্ব বাহিনী?
সাদ্দাম হোসেন : ছাত্রলীগ সবসময়ই গণ ও স্বাধীন ছাত্র সংগঠন। এই ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের জন্যই আমরা স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রদের একত্র করতে পেরেছিলাম। আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড স্বাধীনভাবে পালন করে থাকি। ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা কারও সঙ্গে কথা বললে বা কর্মসূচি পালন করলে তার মানে এটি নয় যে, ছাত্রলীগ তাদের অনুসারী বা তাদের সঙ্গে জড়িত। বৃহত্তর লড়াই এবং জাতীয় রাজনীতির এজেন্ডা বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে।
সমকাল : তাহলে ছাত্রলীগের গুরুত্বে জাতীয় রাজনীতি? সম্প্রতি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ৩ লাখ টাকা বেড়েছে। শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ছে। আপনার ভাষ্যমতে ছাত্রলীগ নিরন্তর শিক্ষার্থীদের দাবিতে সরব। কিন্তু শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে ছাত্রলীগের বক্তব্য শুনতে পাইনি।
সাদ্দাম হোসেন : শিক্ষার্থীদের কী প্রত্যাশা রয়েছে তা ছাত্রলীগ ভালো করেই জানে। কয়েকদিন আগে মেডিকেলের সিলেবাসের পরিবর্তন করা হলো এবং ‘ক্যারি অন সিস্টেম’ বাতিল করা হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন ও আবাসিক ফি বাড়ানো হলে আমরা প্রতিবাদ করি। ফলে এসব ফি কমানো হয়। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষেই আমরা কর্মসূচি দেব।
সমকাল : প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অজুহাতে ফি বাড়ছে। ছাত্রলীগ কর্মসূচি দিয়েছে?
সাদ্দাম হোসেন : ছাত্রলীগের কর্মসূচি তো আমরা ঠিক করব। বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য ছাত্র অধিকার ও তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা পূরণে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রমাগত বাস্তবায়ন করে চলেছেন। শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রার পাশে থাকা আমাদের দেশপ্রেমের অংশে পরিণত হয়েছে।
সমকাল : কাগজের দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ছাত্রলীগকে কিছু বলতে শুনিনি।
সাদ্দাম হোসেন : ছাত্রলীগ সব কিছু নিয়েই বলে। কাগজ-কলমের দাম বাড়লে শিক্ষার্থীরা সংকটে পড়ে। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। তবে সার্বিকভাবে দেখতে হবে। অর্থনৈতিক বাস্তবতা, সরকারের সক্ষমতা, বৈশ্বিকভাবে দাম এগুলো বিবেচনা করে ছাত্রলীগ সিদ্ধান্ত নেবে। ছাত্রলীগ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে।
সমকাল: একের পর এক বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা আসছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা সাম্প্রতিক। চাঞ্চল্যকর ঘটনা ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচার হয় না। এই নির্যাতন বন্ধে আপনাদের বার্তাটি কী?
সাদ্দাম হোসেন : যদি আইনের শাসনের কথা বলেন, মৌলিক মানবাধিকারের কথা বলেন, দলীয় রাজনীতির চোখ দিয়ে বিচার হয় না। বিশ্বজিৎ এবং আবরার হত্যার ন্যায়ানুগ বিচার হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা আমলে নেওয়া হয়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতন, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির বিষয়ে ছাত্রলীগ যেমন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও ব্যবস্থা নিয়েছে।
সমকাল : ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি মূল অভিযুক্তের দায় পায়নি।
সাদ্দাম হোসেন : সব তদন্তই মূল্যায়ন করে দেখা হবে। ছাত্রলীগ কোনো ঘটনাকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে কিনা তা দেখতে হবে। ছাত্রলীগ থেকে সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে, কেউ ফৌজদারি অপরাধ করলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ছাত্রলীগ শর্তহীনভাবে সহায়তা করবে।
সমকাল : শিক্ষক নির্যাতনের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর নাম আসছে।
সাদ্দাম হোসেন : তবে ছাত্র রাজনীতিতে কিছু নেতিবাচক উপাদান প্রবেশ করেছে বলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এর জন্য যেমন আমাদের আত্মশুদ্ধির জায়গা রয়েছে, তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আহ্বানও আমরা জানাই। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে আমরা কীভাবে চিহ্নিত করছি এটা একটা বিষয়, এর সঙ্গে সংগঠনকে জড়িয়ে ফেলা ঠিক নয়। পাঁচজনের অপরাধের জন্য ছাত্রলীগের ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে দায়ী করা যায় না।
মন্তব্য করুন