সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেও কোথাও যেন একটা শূন্যতা আছে তাঁর। গভীরভাবে খুঁজে দেখলে হাসির মাঝেও হয়তো পাওয়া যাবে বিষণ্ণতা। চার টেস্ট ইনিংসের তিনটি সেঞ্চুরি করা আজকের যে জনি বেয়ারস্টোকে নিয়ে এত উন্মাদনা, যাঁর ব্যাটিংয়ে আধুনিক টেস্ট ক্রিকেটের সংজ্ঞা বদলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা, তাঁর ক্রিকেট চলার পথে কখনোই ফুল ছড়ানো ছিল না।

বছর দশেক আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে প্রথম টেস্ট অভিজ্ঞতায় শটবলের দুর্বলতায় নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। পরে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার সামনেও একই সমস্যা, দেড় বছরের মতো দলের বাইরে থাকতে হয়েছিল তাঁর।

তখনকার এক সাক্ষাৎকারে বেয়ারস্টো বলেছিলেন, 'মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল তখন। আমি কি কাউন্টিতে খেলার যোগ্য? দেশের হয়ে খেলার কোনো যোগ্যতা কি আমার আছে? নাকি মানুষকে ভুল প্রমাণ করে ফিরে আসাটাই আমার কাজ হবে?'

এরপর অ্যাশেজ থেকে ফিরে মেন্টর ইয়ান ডিউসকে ডেকে নেন নিজের কাছে। নেটে গিয়ে নাগাড়ে অনুশীলন করতে থাকেন। ব্যাকলিফট আরও উন্নত করার চেষ্টা করে যেতে থাকেন। আত্মজীবনী 'আ ক্লিয়ার ব্লু স্কাই'-এর এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, 'আমি সোজা ব্যাটে খেলতে পছন্দ করি। মাথা এবং চোখ বলে রাখি। বলের পেছনে ছোটা বন্ধ করে দিয়েছি তখন। এখন ব্যাকফুটে খেলতেও আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।'

বইটিতে ডিউজ বলেছেন, 'ইনডোর ট্রেনিংয়ের সময় বোলিং মেশিন থেকে বল বেরোচ্ছিল। একবার এত জোরে বল মেরেছিল যে, দেয়াল ফুটো হয়ে গিয়েছিল।' ঠিক এখানেই বদলে যাওয়ার মানসিকতা পরিস্কার হতে থাকে তাঁর। ছেলেবেলায় মাত্র আট বছর বয়সে একবার মা আর বোনের সঙ্গে বাড়ি ফিরে দেখেন ক্যান্সার আক্রান্ত বাবার ঝুলন্ত মৃতদেহ। তাঁর পরিবার এখনও জানে না আত্মহত্যার কারণ। তবে এটা বেয়ারস্টো জেনেছিলেন যে, তাঁর বাবা ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। তারপর থেকেই জীবনের কোনো অধ্যায়ে 'ড্রিপেশন' শব্দটি আনতে দেননি জনি।

অভিমানী জনি ওই বয়স থেকেই মানসিকভাবে অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছিলেন। আত্মজীবনীতে বাবার সঙ্গে স্নেহ ভালোবাসার সম্পর্কগুলো সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। স্কুল জীবনেও ঘাত এলেই প্রতিঘাত করতেন জনি। একবার ক্লাব ক্রিকেটে এক সতীর্থ জোরে ছক্কা মেরেছিলেন, তা দেখে বেয়ারস্টো তাঁর থেকেও জোরে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। আর এভাবেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। সে কারণেই আইপিএলেও যে বেয়ারস্টোকে দেখা যায়, সে একই মানুষকে টেস্টেও সেই ছন্দেই দেখা যায়।