
অর্থনীতির বর্তমান সংকট নিরসনে এখন পর্যন্ত বড় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে সংকট আরও প্রকট হতে পারে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) প্রাক-বাজেট আলোচনায় এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।
পিআরআই আরও বলেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর সম্ভাবনা কম। কারণ চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ও অর্জনের ব্যবধান অনেক বেশি।
গতকাল রোববার রাজধানীর বনানীতে সংস্থার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইর স্টাডি সেন্টার অন ডমেস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশনের (পিআরআই-সিডিআরএম) পরিচালক ড. আব্দুর রাজ্জাক। বক্তব্য দেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার এতে সভাপতিত্ব করেন।
বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিপরীতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের দেওয়া অন্যতম শর্ত– আগামী অর্থবছর কর জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানো। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে কর রাজস্ব সংগ্রহের একটি লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে সংস্থাটি।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। আইএমএফ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে প্রথম ৯ মাসে আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। পিআরআইর প্রাক্কলন হলো, আইএমএফের প্রাক্কলনের তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি হবে ২১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর এনবিআরের নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে থাকবে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা এনবিআরের চেয়ে কম এবং সেটি অর্জন করতে হলে শেষ তিন মাসে ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে হবে। প্রথম ৯ মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ শতাংশ। প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় না হওয়ার পেছনে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন না হওয়া প্রধান কারণ হিসেবে মনে করে পিআরআই।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৯ মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার ক্ষয় হয়েছে। আগামী মাসগুলোতে যদি একই হারে রিজার্ভ কমতে থাকে তাহলে পাঁচ থেকে সাত মাসের মধ্যে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাঁর মতে, সব মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি এখন চাপে রয়েছে। অর্থনীতিতে সংকট শুরু হয় ১৫ মাস আগে। এখন পর্যন্ত বড় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সুদের হার নির্ধারণে কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এসব কারণে উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। আস্থা ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে বক্তৃতা দেওয়া ছাড়া মূলত তেমন কিছু করা হয়নি। আগামীতে সংকট এর চেয়ে প্রকট হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। কারণ, নির্বাচন সামনে রেখে অর্থ পাচার বেড়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে করণীয় প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখনই ক্ষেত্রভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যখন যে ক্ষেত্রে যে ধরনের সংকট তৈরি হয়, সে বিবেচনায় কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন পর্যন্ত যত পদক্ষেপ– সবই অ্যাডহক বা অস্থায়ীভিত্তিক। এসব কারণে আস্থার সংকট কাটছে না।
সভাপতির বক্তব্যে ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, চলতি হিসাবের লেনদেন ভারসাম্যে বড় যে ধাক্কা এসেছে, তা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণেই। উদ্যোক্তাদের আস্থার সংকটেরও একটা বড় কারণ অনুমান এবং গুজব। তবে সার্বিক বিবেচনায় গত ২৫ বছর ধরে সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা মন্দ নয়। আইএমএফের পক্ষ থেকেও তা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে ।
মন্তব্য করুন