দেশের ডেঙ্গু মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতিসংক্রান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচওর নির্দেশনা এক সপ্তাহ অতিক্রমের পরও উপেক্ষিত থাকা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। শনিবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে ‘অশনিসংকেত’ উল্লেখ করিয়া গত ৭ সেপ্টেম্বর ডব্লিউএইচও ওই নির্দেশনা দিয়াছিল, কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখনও পড়িয়া রহিয়াছে ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নীতিতে। এমন নহে যে, ডব্লিউএইচও অন্য কোনো সূত্র হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত সতর্কবার্তা জারি করিয়াছে।

পরিস্থিতি গুরুতর দেখিয়া ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়াদি তদারককারী জাতিসংঘের এই সংস্থা বাংলাদেশে মাঠ পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ মোতায়েন করিয়াছে। উপরন্তু তাহারা সার্বিক নজরদারি জোরদারে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করিতেছে। এই অবস্থায় ডব্লিউএইচওর কথায় কর্ণপাত না করিবার পরিণাম শুভ হইতে পারে না।

উল্লেখ্য, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মিছিল প্রতিদিন লম্বা হইতেছে; স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মোতাবেক শুক্রবার সকাল ৮টা অবধি ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে দেশে ১২ জনের মৃত্যু ঘটিয়াছে। নূতন করিয়া আক্রান্ত দুই সহস্রাধিক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হইয়াছেন। সর্বশেষ ১২ জনসহ চলতি  বৎসর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৮০০ ছুঁইছুঁই করিতেছে, যাহা ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ মৃত্যুর প্রায় তিন গুণ। ওই বৎসর ডেঙ্গুতে ২৮১ জন মৃত্যুবরণ করিয়াছেন।

 অধিকতর উদ্বেগের বিষয় হইল, এই বৎসর প্রাণঘাতী রোগটা রাজধানীর পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা অবধি ছড়াইয়া পড়িয়াছে; এমনকি কিছুদিন ধরিয়া ঢাকার চাইতে জেলা-উপজেলাতেই এই রোগে আক্রান্ত হইতেছে বেশি। এই অবস্থা বিগত বৎসরগুলিতে পরিলক্ষিত হয় নাই। অর্থাৎ এই বৎসর ডেঙ্গু এমন এমন এলাকায় ছড়াইয়াছে যথায় রোগটা সম্পর্কে জনপরিসরে তেমন কোনো ধারণা নাই; চিকিৎসা সরঞ্জামও অপ্রতুল। এই কারণেই বিশেষজ্ঞগণ ইতোমধ্যে বহুবার একটা সুষ্ঠু ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশব্যাপী ডেঙ্গু মোকাবিলার কর্মসূচির জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়াছেন।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সকল কিছুই অরণ্যে রোদনে পরিণত হইয়াছে। ধারণা করা হইয়াছিল, ডব্লিওএইচওর নির্দেশনা মানিয়া করোনাকালে এখানে অতিমারি নিয়ন্ত্রণে যে তৎপরতা দেখা গিয়াছিল, ডেঙ্গুর বেলায়ও উহার ব্যতিক্রম হইবে না। কিন্তু যেমনটা পূর্বেই বলা হইয়াছে, অন্তত অদ্যাবধি সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হইয়াছে।

ডেঙ্গু মৌসুম সাধারণত মে হইতে অক্টোবর পর্যন্ত ধরা হইলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইদানীং প্রায় সারা বৎসরই দেশে বৃষ্টিপাত হইতেছে। ফলে ডেঙ্গু মৌসুমেরও বিস্তার ঘটিয়াছে। যেমন গত বৎসর শুধু নভেম্বরেই ডেঙ্গুতে ১১৩ জন মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। আবার এই বৎসর জানুয়ারিতেও ছয়জন ডেঙ্গুতে প্রাণ হারান।

এই সকল তথ্য উপস্থাপনের হেতু হইল, আগামী বৎসর তো বটেই, এই বৎসরের অবশিষ্ট সময়ের জন্যও ডেঙ্গু মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। ইহাতে কোনো প্রকার ঢিলেমি বা অবহেলার অবকাশ নাই। অন্তত জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সাংবিধানিক নির্দেশনা ও বর্তমান সরকারের অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়া হইলেও এই লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ লইতে হইবে।