
ইসলাম জীবিকা উপার্জনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে। নবী-রাসুলগণ জীবিকা উপার্জনের জন্য শ্রম ব্যয় করতেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর সাহাবাগণ জীবিকা উপার্জনের জন্য বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করেছেন। তাঁরা বিনাশ্রমে উপার্জন করাকে নিরুৎসাহিত করতেন। পৃথিবীতে যা কিছু গড়ে উঠেছে, সবই শ্রমের ফল। শ্রমের প্রতি উৎসাহ দিয়ে পবিত্র কোরআনের সুরা জুমুআহর ১০ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যখন নামাজ পূর্ণ করা হবে, তখন জমিনে ছড়িয়ে পড়; আর আল্লাহকে অধিক মাত্রায় স্মরণ কর। আশা করা যায়, তোমরা সফল হবে।’
হাদিস শরিফে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, ‘ফরজ ইবাদতগুলোর পরই হালাল উপায়ে উপার্জন করা ফরজ দায়িত্ব।’ (তিরমিজি)। ‘হালাল উপার্জনগুলোর মধ্যে তা সর্বোত্তম, যা কায়িক শ্রম দ্বারা অর্জন করা হয়।’ (মুসলিম)।
অন্য হাদিস শরিফে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, কোনো ব্যক্তি নিজ হাতের উপার্জন থেকে আহার করা অপেক্ষা উত্তম খাদ্য কখনও আহার করেনি । আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ.) নিজ হাতের অর্জিত সম্পদ খেতেন। (সহিহ বোখারি।
রাসুলে পাক (সা.) বলেন, শ্রমজীবী মানুষ আল্লাহর বন্ধু। ইসলাম শ্রমিককে বলেছে দক্ষ, বিশ্বস্ত ও দায়িত্ববান হতে। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মা খাদিজার (রা.) ব্যবসায় দীর্ঘকাল সততা, বিশ্বস্ততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে চাকরি করেছেন। হজরত নূহ (আ.) কাঠমিস্ত্রির কাজ করেছেন। হজরত ইদ্রিস (আ.) সেলাইয়ের কাজ করতেন। হজরত সুলাইমান (আ.)-এর পিতা নবী ও সম্রাট হজরত দাউদ (আ.) লৌহশিল্প বা কামারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এমনকি নবী হজরত শুআইব (আ.)-এর খামারে হজরত মুসা (আ.) আট-দশ বছর চাকরি করেছেন। তাঁরা কেউই কাজকে অবজ্ঞা করেননি, বরং রিজিকের ফায়সালা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
ইসলাম একটি উচ্চ মানসিকতাসম্পন্ন শ্রমনীতির কথা বলেছে, যেখানে শ্রমিকের মানসম্মত জীবন-জীবিকা নিশ্চিত হয়। রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার ভাইকে তার অধীন করেছেন সে যেন তাকে তা-ই খাওয়ায়, যা সে খায়; সে-ই কাপড় পরিধান করায়, যা সে পরিধান করে। তাকে সামর্থ্যের অধিক কোনো কাজের দায়িত্ব দেবে না। যদি এমনটা করতেই হয়, তাহলে সে যেন তাকে সাহায্য করে। (বুখারি)।
ইসলাম শ্রমিকের বেতন ও পারিশ্রমিক দ্রুততম সময়ে প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে দাও । (ইবনে মাজাহ)।
অন্য হাদিসে পারিশ্রমিক ও প্রাপ্য অধিকার নিয়ে টালবাহানাকে অবিচার আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, ধনী ব্যক্তির টালবাহানা অবিচার (সহিহ বুখারি)। অর্থাৎ সামর্থ্য থাকার পরও মানুষের প্রাপ্য ও অধিকার প্রদানে টালবাহানা করা অন্যায়।
শ্রমিককে তার প্রাপ্য থেকে কম দেওয়া বা তাকে ঠকানো ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্যতম পাপ। বরং ইসলামের নির্দেশনা হলো, শ্রমিক তার প্রাপ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হলেও মালিক তাকে প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবে। মহানবী (সা.) এ ব্যাপারে হুঁঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যে জাতির দুর্বল লোকেরা জোর-জবরদস্তি ছাড়া তাদের পাওনা আদায় করতে পারে না, সে জাতি কখনও পবিত্র হতে পারে না। (ইবনে মাজাহ)।
শ্রমিকের কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পারিশ্রমিক প্রদান করা কর্তব্য। এ ব্যাপারে গড়িমসি করা মহা অপরাধ।
আমাদের দায়িত্ব হবে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রদান করে বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহতায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন।
ড. মো. শাহজাহান কবীর: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
মন্তব্য করুন