- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে বেশি হারে
মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে বেশি হারে

করোনার ধকল পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ। যুদ্ধের জেরে ঝাঁকুনি গোটা বিশ্বে। জ্বালানির দরে অস্থিরতা চলছে। সরবরাহ চেইনও ব্যাহত। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসপত্রের দর রেকর্ড হারে বাড়ছেই।
আবার গত মৌসুমে বৈরী আবহাওয়ায় স্বাভাবিক উৎপাদন হয়নি গমের। এসব কারণে গত কয়েক মাস ধরে দেশে খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত সব ধরনের পণ্যের দর অস্বাভাবিক বেশি। এক বছরের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দর দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণ। করোনার রেশ কাটিয়ে শ্রমজীবী মানুষের আয়ও কিছুটা বেড়েছে। তবে যে হারে পণ্যমূল্য বেড়েছে, সে হারে আয় বাড়েনি তাঁদের। গত তিন মাসে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের ওপরে। অন্যদিকে, মজুরি রয়েছে ৬ শতাংশের ঘরে। ফলে প্রকৃত মজুরি বাড়ছে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত তিন মাসের মধ্যে মে মাসে মজুরি বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। জুন মাসে ৬ দশমিক শূন্য ৪৭ শতাংশ এবং জুলাইয়ে বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অন্যদিকে, এ তিন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, ৭ দশমিক ৫৬ এবং ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
মজুরি সূচক নির্ধারণে কম মজুরির দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকের কর্মঘণ্টা কিংবা হাজিরাভিত্তিক দৈনিক আয়কে বিবেচনা করে থাকে বিবিএস। মাসিক কিংবা চুক্তিভিত্তিক আয় বিবিএসের মজুরির হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। মজুরির হার নির্ধারণে কৃষি, শিল্প ও সেবা- বড় এ তিন খাতের ৪৪টি পেশাকে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে কৃষি খাতের পেশা ১১টি, শিল্পের ২২টি ও সেবা খাতের ১১টি পেশা রয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে খাদ্যবহির্ভূত খাত এবং সার্বিক মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি হারে। গত তিন মাসের মধ্যে মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। জুনে ৮ দশমিক ৩৭ এবং জুলাই মাসে ছিল ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। সাধারণত, দরিদ্র মানুষের মূল্যস্ফীতি সার্বিক মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি। কারণ, খাদ্যপণ্য কিনতেই তাঁদের আয়ের বড় অংশ চলে যায়। শহরের তুলনায় গ্রামের শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও কঠিন। পরিসংখ্যান বলছে, শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি বেশি। এর ওপর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের তুলনায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি আরও বেশি।
সানেমের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষ তাঁদের মোট আয়ের ৬০ শতাংশ ব্যয় করেন খাদ্যপণ্য সংগ্রহের পেছনে।
বিবিএসের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, টানা সাত বছর ধরেই মজুরি বৃদ্ধি প্রায় একই রকম। ২০১৫-১৬ মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। পরের অর্থবছর ছিল ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৬ দশমিক ১২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিল) নির্বাহী সদস্য শাকিল আক্তার চৌধুরী সমকালকে বলেন, করোনা শ্রমিকদের অবস্থা খারাপ করেছে। জ্বালানি তেলের দর বৃদ্ধির কারণে এখন সবচেয়ে বড় অভিঘাতটা সাধারণ শ্রমিকদের ওপরই এসে পড়বে। কারণ, যাতায়াত, বাড়ি ভাড়া, খাদ্য কেনাসহ সব খাতেই নতুন করে খরচ বাড়বে। তাঁদের জীবন আরও দুর্বিষহ হবে। কম আয় দিয়ে বাড়তি খরচ মেটানোর সামর্থ্য তাঁদের নেই।
মন্তব্য করুন