
আজ পবিত্র জুম্মাতুলবিদা। রহমত, বরকত আর মাগফেরাতের মাহে রমজানের শেষ জুমার দিন। পবিত্র জুমার দিন মুসলিম মিল্লাতের কাছে খুবই মর্যাদার, পুণ্যের এবং অতীব গুরুত্বের। আর সেটি যদি হয় মাহে রমজানের শেষ জুমা তথা জুম্মাতুলবিদা, তাহলে তো এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেড়ে যায়। সম্মিলিতভাবে ইবাদত পালনে মহান আল্লাহ অধিকতর খুশি হয়ে থাকেন; সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করতে হয় জামাতে তথা সম্মিলিতভাবে। সুতরাং ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। মাহে রমজানের শেষ জুমায় রোজাব্রত পালনকারী বান্দার জামাতের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে অন্য যে কোনো সময়ের চাইতে অধিক সংখ্যক শরিক হয়ে থাকেন।
মুসলিম শরিফের এক হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি গোসল সেরে জুমার নামাজে এলো; এর পর তার সাধ্যমতো নামাজ আদায় করল; ইমামের খুতবা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করল এবং খুতবাকালীন নীরবতা অবলম্বন করল; অতঃপর ইমামের পেছনে জুমার নামাজ আদায় করল। এর ফলে দুই জুমার মাঝখানে সাত দিন এবং অতিরিক্ত আরও তিন দিনসহ মোট ১০ দিনের গুনাহ আল্লাহপাক মাফ করে দেবেন। আশার কথা হলো, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত থাকে যখন বান্দা যে কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তার সেই দোয়াই মঞ্জুর করেন। সংগত কারণেই আমাদের জুম্মাতুলবিদার গুরুত্ব অনুধাবন করে এ মহিমান্বিত দিনের যথাযথ পুণ্য হাসিলে নিজেদের সৌভাগ্যের কাতারে শামিল করতে হবে। আজ একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস। বায়তুল মুকাদ্দাস, মসজিদে আকসা, জেরুজালেম বা ফিলিস্তিন- এই শব্দগুলো সমগ্র বিশ্বের মুসলিম জাতির অস্তিত্বের অনিবার্য অংশ। মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতি আর শ্রদ্ধার সঙ্গে ওতপ্রোত মিশে আছে ওই পবিত্র স্থানগুলোর নাম। ইসলামের মহান খলিফা, অর্ধ পৃথিবীর সম্রাট ও সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী হজরত উমর ফারুক (রা.) ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে পুরো ফিলিস্তিন বিজয় করেন। ক্রুসেডাররা ১০৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিস্তিন দখল করে নেওয়ার পর ১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম বীর সেনানী সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি আবারও জেরুজালেম মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ইহুদি ও খ্রিষ্টানচক্রের জেরুজালেম নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রয়াস অব্যাহত থাকে। বিশ্বখ্যাত অটোমান সুলতান আব্দুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপনের জন্য তারা অনুমতি প্রার্থনা করে। কিন্তু সুলতান অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কুচক্রী মহলের অপতৎপরতা থেমে থাকেনি; তবে ষড়যন্ত্রে সফল হতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘকাল। অবশেষে ১৯১৭ সালে খ্রিষ্টানরা জোর করে ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে এবং ১৯২০ সালে জেরুজালেমের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। এদের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে ইহুদিরা বসতি স্থাপন করতে থাকে এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের সব ধরনের কলাকৌশল অবলম্বন করে। এভাবে ক্রমান্বয়ে জেরুজালেমের পবিত্র ভূমিতে ইহুদিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। অবশেষে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে অন্যায্য, অন্যায় ও অবৈধভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়। মুসলমানদের সঙ্গে ইহুদিদের সংঘাত, সংঘর্ষ আর আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ইহুদিরা ক্ষমতার জোরে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ফিলিস্তিনিদের হাত থেকে মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদে আকসাসহ জেরুজালেম শহরের পূর্বাঞ্চলীয় কর্তৃত্ব জবরদখল করে নেয়। তার পর থেকে ফিলিস্তিনি মুসলমানরা নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে জীবনযাপন করছেন। এমনকি পবিত্র রমজান মাসেও ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের অত্যাচার ও আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। খোদ বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদেরও জায়নবাদীরা তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই দেয়নি।
জায়নবাদীদের কবল থেকে মসজিদে আকসার মুক্তি, ফিলিস্তিনি নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মিতা ও একাত্মতা ঘোষণা এবং নিপীড়ক ইহুদি গোষ্ঠীর প্রতি ধিক্কার ও ঘৃণা প্রকাশের জন্য ১৯৭৯ সালে ইরানের মহান রাহবার আয়াতুল্লাহ ইমাম খোমেনি কর্তৃক প্রতি রমজানের শেষ জুমার দিনটিকে 'আল কুদস দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তাই আজকের জুম্মাতুলবিদার পাশাপাশি আল কুদস দিবসের তাৎপর্যকেও আমাদের ধারণ করতে হবে। বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীসহ মানবতাবাদী সব মানুষের উচিত অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলের দীর্ঘকাল ধরে নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিষ্পেষিত ও আক্রান্ত আর্তমানবতার পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সমস্যার যৌক্তিক ও মানবিক সমাধানে এগিয়ে আসা- বিবেকবান বিশ্বমানবের কাছে আজকের আল কুদস দিবসে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন: চেয়ারম্যান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মুসলিম শরিফের এক হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি গোসল সেরে জুমার নামাজে এলো; এর পর তার সাধ্যমতো নামাজ আদায় করল; ইমামের খুতবা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করল এবং খুতবাকালীন নীরবতা অবলম্বন করল; অতঃপর ইমামের পেছনে জুমার নামাজ আদায় করল। এর ফলে দুই জুমার মাঝখানে সাত দিন এবং অতিরিক্ত আরও তিন দিনসহ মোট ১০ দিনের গুনাহ আল্লাহপাক মাফ করে দেবেন। আশার কথা হলো, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত থাকে যখন বান্দা যে কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তার সেই দোয়াই মঞ্জুর করেন। সংগত কারণেই আমাদের জুম্মাতুলবিদার গুরুত্ব অনুধাবন করে এ মহিমান্বিত দিনের যথাযথ পুণ্য হাসিলে নিজেদের সৌভাগ্যের কাতারে শামিল করতে হবে। আজ একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আল কুদস দিবস। বায়তুল মুকাদ্দাস, মসজিদে আকসা, জেরুজালেম বা ফিলিস্তিন- এই শব্দগুলো সমগ্র বিশ্বের মুসলিম জাতির অস্তিত্বের অনিবার্য অংশ। মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতি আর শ্রদ্ধার সঙ্গে ওতপ্রোত মিশে আছে ওই পবিত্র স্থানগুলোর নাম। ইসলামের মহান খলিফা, অর্ধ পৃথিবীর সম্রাট ও সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী হজরত উমর ফারুক (রা.) ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে পুরো ফিলিস্তিন বিজয় করেন। ক্রুসেডাররা ১০৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিস্তিন দখল করে নেওয়ার পর ১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম বীর সেনানী সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি আবারও জেরুজালেম মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ইহুদি ও খ্রিষ্টানচক্রের জেরুজালেম নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রয়াস অব্যাহত থাকে। বিশ্বখ্যাত অটোমান সুলতান আব্দুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপনের জন্য তারা অনুমতি প্রার্থনা করে। কিন্তু সুলতান অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কুচক্রী মহলের অপতৎপরতা থেমে থাকেনি; তবে ষড়যন্ত্রে সফল হতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘকাল। অবশেষে ১৯১৭ সালে খ্রিষ্টানরা জোর করে ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে এবং ১৯২০ সালে জেরুজালেমের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। এদের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে ইহুদিরা বসতি স্থাপন করতে থাকে এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের সব ধরনের কলাকৌশল অবলম্বন করে। এভাবে ক্রমান্বয়ে জেরুজালেমের পবিত্র ভূমিতে ইহুদিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। অবশেষে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে অন্যায্য, অন্যায় ও অবৈধভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়। মুসলমানদের সঙ্গে ইহুদিদের সংঘাত, সংঘর্ষ আর আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ইহুদিরা ক্ষমতার জোরে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ফিলিস্তিনিদের হাত থেকে মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদে আকসাসহ জেরুজালেম শহরের পূর্বাঞ্চলীয় কর্তৃত্ব জবরদখল করে নেয়। তার পর থেকে ফিলিস্তিনি মুসলমানরা নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে জীবনযাপন করছেন। এমনকি পবিত্র রমজান মাসেও ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের অত্যাচার ও আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। খোদ বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদেরও জায়নবাদীরা তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই দেয়নি।
জায়নবাদীদের কবল থেকে মসজিদে আকসার মুক্তি, ফিলিস্তিনি নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মিতা ও একাত্মতা ঘোষণা এবং নিপীড়ক ইহুদি গোষ্ঠীর প্রতি ধিক্কার ও ঘৃণা প্রকাশের জন্য ১৯৭৯ সালে ইরানের মহান রাহবার আয়াতুল্লাহ ইমাম খোমেনি কর্তৃক প্রতি রমজানের শেষ জুমার দিনটিকে 'আল কুদস দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তাই আজকের জুম্মাতুলবিদার পাশাপাশি আল কুদস দিবসের তাৎপর্যকেও আমাদের ধারণ করতে হবে। বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীসহ মানবতাবাদী সব মানুষের উচিত অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলের দীর্ঘকাল ধরে নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিষ্পেষিত ও আক্রান্ত আর্তমানবতার পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সমস্যার যৌক্তিক ও মানবিক সমাধানে এগিয়ে আসা- বিবেকবান বিশ্বমানবের কাছে আজকের আল কুদস দিবসে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন: চেয়ারম্যান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিষয় : ইসলাম ও সমাজ মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন
মন্তব্য করুন