ব্যবসার পরিবেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নতি আনতে হবে

সােমবার রাজধানীতে এফআইসিসিআই আয়ােজিত সেমিনারে অতিথিরা ফটাে রিলিজ
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:০০
বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ এবং সরকারি সেবা বিশেষ করে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন প্রক্রিয়া নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অভিজ্ঞতা খুব বেশি সুখকর নয়। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসার পরিবেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নতি আনতে হবে। সহজ করতে হবে সেবাপ্রাপ্তি।
গতকাল সোমবার ‘বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ : বর্তমান অবস্থা ও লক্ষ্য ২০৪১’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফআইসিসিআই) ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিনে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা সরকারের ঘন ঘন নীতি-কৌশল বদল, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীরগতি, করনীতি ও কাঠামোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বলা হয়, বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যাপক আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে তাকে বাস্তব রূপ দিতে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারার মতাে সমস্যাতেও পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে জেটরোর এক গবেষণায় দেখা গেছে, এশিয়ায় জাপানের বিনিয়োগের শীর্ষ পাঁচে আছে বাংলাদেশ। কিন্তু জাপানি বিনিয়োগকারীদের বেশির ভাগ এ দেশের ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নন।
আলোচনায় জেটরোর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইউজি আন্দো বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতের মতো বড় বাজারকে বিবেচনায় রেখে এখানে বিনিয়োগ করছেন জাপানিরা। বিডাসহ অন্যান্য সংস্থা সেবাপ্রাপ্তি সহজ ও দ্রুত করার চেষ্টা করছে। তবে কাস্টমস এবং অন্যান্য কিছু পরিষেবার মান এখনও সন্তোষজনক নয়। স্বচ্ছতার অভাবও আছে। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলে জাপানের বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্ট প্রমোশন এজেন্সির মহাপরিচালক সামসো কিম বলেন, লজিস্টিকসহ অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ গত এক দশকে অনেক উন্নতি করেছে। শ্রমমূল্য কম। তবে বাংলাদেশে কোরিয়ার যে বিনিয়োগ আছে, তার বেশির ভাগই পুরোনো। নতুন বিনিয়োগ সে তুলনায় কম।
মূল প্রবন্ধে পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ গত ৫২ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি বর্তমান বিনিয়োগ পরিবেশের সংকট ও চ্যালেঞ্জের বিষয়েও আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করতে বর্তমানের তুলনায় বিনিয়োগ বহুগুণ বাড়াতে হবে। এ জন্য ব্যবসার পরিবেশের প্রতিটি ধাপে অনেক উন্নতি করতে হবে। তিনি বলেন, বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে ঠিক কোথায়, কখন কাজ করতে হবে– তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে বলে মনে হয়।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশ একটি বড় বাজার। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গকে বিবেচনায় নিলে এ অঞ্চল বিশাল এক বাজার। ভারতের সঙ্গে বন্দরসহ সড়ক, নৌ, রেলসহ সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ বাণিজ্য সুবিধাও আছে। এ বাজার ধরতেও বাংলাদেশে বড় বিদেশি বিনিয়োগ আসতে পারে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বিনিয়োগকারীদের সুষ্ঠু বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারি সব দপ্তর ও সংস্থায় অটোমেশন কার্যক্রম চলছে। অগ্রাধিকারভিত্তিক বাজার সুবিধা নিশ্চিতে জাপান, ভারত, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ নানা দেশের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষরের চেষ্টা চলছে। তবে বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে জাপানের ব্যবসায়ীদের নেতিবাচক ধারণা কারণ কী তা ঠিক বুঝতে পারছেন না তিনি। জাপানি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ কী শুধু কাস্টমস সমস্যার কারণে কিনা– সেটা বোঝা যাচ্ছে না। তারা কিছু সমস্যার কথা বলছেন। বিনিয়োগে এসে তারপর কোনো সমস্যা থাকলে তা জানাতে জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
করকাঠামোসহ ঘন ঘন সরকারি নীতি পরিবর্তনে ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হয় বলে মত দেন এফআইসিসিআইর সাবেক সভাপতি রূপালী চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকার প্রতি বছর রাজস্ব আহরণে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে। সংস্থাটি সহজে লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিদ্যমান করদাতাদের আরও বেশি কর নিতে চাইছে। উদ্ভাবনী কোনো উদ্যোগ নিয়ে কাজ হচ্ছে না। ব্যবসার পরিবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের সবাই যেমন সৎ না, তেমনি সরকারের সব সংস্থার কাজেও যথেষ্ট স্বচ্ছতা নেই। এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, সমাজ দ্রুত বদলানোর সঙ্গে ব্যবসা এবং ব্যবসার পরিবেশও বদলাচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, এখনও কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো নজরে আসলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সমাপনী বক্তব্যে এফআইসিসিআই
সভাপতি নাসির এজাজ বিজয় বলেন, সরকার দেশের ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করছে। শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। তবে তাদের সিদ্ধান্ত কার্যকরে কিছু
সমস্যা রয়েছে।