হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, মানুষ এক দিন বেঁচে থাকার জন্য আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে লাখ টাকা খরচ করছে। অথচ কোনো কোনো শিক্ষিত যুবক-যুবতী বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ। সমকালের ২৬ আগস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে আমাদের দেশে ২৩৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যা যে শুধু শিক্ষার্থীরা করেন, এমন নয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যেই এ প্রবণতা বর্তমান। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে স্কুল-কলেজ পর্যায়ের ৪৪৬ জন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬ জন। এই হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

আত্মহত্যার সঠিক কারণ পুরোপুরি জানা সম্ভব নয়। তবে এর প্রধান কারণ মানসিক চাপ, বিষণ্নতা ও অবসাদ। এ জন্য যে বিষয়গুলো দায়ী সেগুলো হচ্ছে– আর্থিক সংকট, ভবিষ্যৎ জীবনের অনিশ্চয়তা, পারিবারিক কলহ, পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল করতে না পারা, প্রেমে ব্যর্থতা, শারীরিক সম্পর্ক, নির্যাতনের শিকার হওয়া, মাদকাসক্তি ইত্যাদি।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসে। আর্থিক চাপ মানসিক অবসাদের অন্যতম কারণ। অন্যদিকে পরীক্ষায় ভালো ফল করতে না পারলে পরিবার, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনের কথা ভাবার পাশাপাশি অসন্তুষ্টি শিক্ষার্থীদের বিষণ্নতার দিকে নিয়ে যায়। পড়াশোনা শেষ করার পর দেখা যায়, বাবা-মা ছেলেমেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন কিন্তু তাদের কাঁধে বেকারত্বের ভার। পারিবারিক কলহ, সংসার জীবনে অশান্তি, মা-বাবার মধ্যে সমস্যা, পরকীয়া, পরিবারে নিজের গুরুত্ব না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে আত্মহত্যা করেন। প্রেমে ব্যর্থতা, কাঙ্ক্ষিত জীবনসঙ্গীকে না পাওয়া, প্রেমের ফাঁদে শারীরিক নির্যাতন, অডিও-ভিডিও এবং ছবির মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলের শিকারসহ অনলাইনে বিভিন্নভাবে হুমকি মানসিক বিষণ্নতার কারণ। এ ছাড়া মাদকাসক্তি, অনলাইনভিত্তিক কিছু গেমসহ বিভিন্ন কারণে মানসিক অবসাদ, বিষণ্নতা ও চাপ সৃষ্টি হয়। তবে মানসিক অবসাদে কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘদিনের হতাশার ফল। অনেক ক্ষেত্রে ত্বরিত সিদ্ধান্তেও অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। যেমন প্রবেশপত্র হারিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে চট্টগ্রামে।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত মানুষের আশপাশে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী, মেস বা হলের বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র এবং শিক্ষক। মানসিক অবসাদগ্রস্ত শিক্ষার্থীকে দেখে বোঝা যায়, তিনি ভালো আছেন কিনা। সেটা সবচেয়ে বেশি বুঝতে পারেন তাঁর কাছের বন্ধুরা। মানসিক অবসাদগ্রস্ত মানুষের ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয়, তাঁরা এক পর্যায়ে একা থাকতে বেশি পছন্দ করেন এবং কারও সঙ্গে তেমন কথা বলেন না। নিজের সমস্যার কথা কাউকে বলেন না। সে ক্ষেত্রে আশপাশের মানুষ যখন বুঝতে পারবেন, কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ, তখন তাদের অনেক করণীয় থাকে।

শিক্ষার্থী, ফার্মাসি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়