
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো এক ধরনের প্রযুক্তি, যা মানুষের মতো কাজ করে ও ভাবে। যেমন কারও কথা বুঝতে পারা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, দেখে চিনতে পারা ইত্যাদি। মানুষের মেধা পরিমাপ করা কঠিন। আমরা মেধার কতটুকুই-বা ব্যবহার করতে পারি। আমরা রক্ত-মাংস দিয়ে গঠিত এবং নানা অহেতুক কাজে ব্যস্ত থাকি। ফলে ব্যাপকভাবে কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এখন যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে ব্যাপক কাজ করা সম্ভব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রক্ত-মাংসের শরীর নয় বলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
ফলে এটি ডিমান্ড বাই সাপ্লাই কনসেপ্টের ওপর শতভাগ কাজ করবে এবং সব সময় ভালো মানের হবে।
অতএব বাস্তবকে ভবিষ্যৎ থেকে বর্তমানে এনে তাকে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা ভালো জ্ঞান পায় এবং তারা নিজ জ্ঞান দিয়ে কিছু করতে পারে। এই লক্ষ্য অর্জনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হবে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।
তবে এখন যে জিনিসটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো শিক্ষকরা যেন ভালোভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রশিক্ষণ পান এবং ডিজিটাল টুলগুলো কীভাবে কার্যকর উপায়ে ব্যবহার করতে হবে, সে সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। তা না হলে তাঁরা শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে পারবেন না। এত দিনে শিক্ষা পদ্ধতিতে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি করবে বৈকি। শিক্ষার্থীরা পাঠ্যক্রমের মধ্য দিয়ে শিক্ষিত হয়েছে। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে শিক্ষার উদ্দেশ্য পূরণ এবং তা নিশ্চিত করা শিক্ষকদের জন্যও কঠিন। তবে ধীরে ধীরে তা সহজ হবে।
ভবিষ্যতের শ্রমবাজারের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুসরণ এবং একীভূত করা গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিন্তাশীল উপায়ে শেখানো এবং প্রয়োগ করা দরকার। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অবশ্যই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির ব্যবহারিক দিক শিখতে পারে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শেখানো এবং প্রয়োগ করা প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়াবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখবে। এটি শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি ও এর সম্ভাবনাগুলো সম্পর্কে আরও বিস্তৃত বোঝার সুযোগ করে দেবে এবং সমাজে প্রযুক্তির আরও টেকসই ও ন্যায্য ব্যবহার পাওয়া সম্ভব হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে কিছু কিছু পেশা হারিয়ে যাবে কিংবা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটজিপিটি অনেকের কাছেই পরিচিত, যেটি তাৎক্ষণিক যে কোনো প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গতি বাড়ছে। মানুষকে এ জন্য আরও সতর্ক হতে হবে। এই প্রযুক্তি কল্যাণের দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিবাচক। তা সত্ত্বেও এটি নেতিবাচক আর্থসামাজিক পরিস্থিতির কারণ হতে পারে। নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান এবং মজুরি আরও খারাপ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তবে এটি শিক্ষার স্তরের ওপর নির্ভর করবে। মানুষকে সাহায্য করার জন্য তৈরি করা প্রযুক্তি সমাজকে এমনভাবে পরিবর্তন করবে যে, কিছুই আর এক রকম থাকবে না।
এটা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে সময়ের সঙ্গে। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়, প্রযুক্তি মানুষকে সাহায্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং সেটা আমাদের ভালোভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তার জন্য বাংলা ভাষাকে সঠিকভাবে অনুবাদ এবং ব্যবহার করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনই কাজে লাগাতে শিখতে হবে।
ব্যয়বহুল সব পাঠ্যপুস্তকে অর্থ, সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পাল্টে যেতে পারে। কার্যকর এবং যুগোপযোগী শিক্ষাদানের জন্য ডিজিটাল টুলস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করার সুযোগ যেখানে রয়েছে, সেদিকেই নজর দিন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে চৌকস হতে হবে।
রহমান মৃধা: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
rahman.mridha@gmail.com
মন্তব্য করুন