
গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সেই নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ- এ বিষয়ে কারও সন্দেহ নেই। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন আহসানুল হক রিফাত। অন্য দুইজন শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন বিএনপি থেকে বহিস্কৃত বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং নিজাম উদ্দিন কায়সার। এই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের নেতাদের বহিস্কার করা হলেও বিএনপি সমর্থকরা তাঁদের প্রার্থীর পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন- এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে বিএনপির সদ্য বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। তবে শেষ হাসি হেসেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আহসানুল হক রিফাত। তিনি মাত্র ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে মনিরুল হক সাক্কুকে পরাজিত করেছেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হলেও প্রশ্ন উঠেছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় গত সাড়ে ১৩ বছরে যে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে দেশে; তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোট কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল? বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়টি নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আহসানুল হক রিফাতকে গণমাধ্যমকর্মীরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি স্পষ্ট উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে গেছেন।
রিফাতের সঙ্গে কুমিল্লার সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছেন। বাহারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ রিফাত। এর আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যাঁরা মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে বাহাউদ্দিন বাহারের দ্বন্দ্ব ছিল। ২০১২ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন আফজল খান এবং ২০১৭ সালে আফজল খানের মেয়ে আনজুম সুলতানা সীমা। বাহার ওই দুই নির্বাচনে তাঁদের প্রতি সমর্থন দিতে অস্বীকার করেছিলেন। ফলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হেরে যান। ওই দ্বন্দ্ব কি এবারও কাজ করেছে?
সাম্প্রতিক ইউনিয়ন পরিষদ এবং অন্যান্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন অনেক ক্ষেত্রে সমালোচিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন অনেক ক্ষেত্রে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে কড়া বার্তা দেওয়ার পরও নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা অনেক ক্ষেত্রে কমানো সম্ভব হয়নি। গোপালগঞ্জের একটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর হেরে যাওয়া সুস্পষ্টভাবে সাংগঠনিক অন্তর্দ্বন্দ্বের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে।
আমরা সবাই জানি, ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে; এটি সবাই বিশ্বাস করে, নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল তাদের মত পরিবর্তন করবে। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক। সেই প্রেক্ষাপট থেকে বিচার করলে আওয়ামী লীগকে এখন থেকেই সাংগঠনিকভাবে খুব শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু দলের বিভিন্ন পর্যায়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং উপদল ইতোমধ্যে যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তা আওয়ামী লীগের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।
যারা এক সময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল, তারাই আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশের প্রশংসা করছে। বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁর কন্যাও দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে ইতোমধ্যে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর। সরকার অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলা করেছে। জনগণকে এই অতিমারির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সরকার বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে, যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় উঠে এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রার্থীর তুলনামূলক কম ভোট পাওয়াসহ কুমিল্লা নির্বাচনের অন্যান্য বিষয় থেকে অনেকেই শঙ্কিত- দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কতটুকু প্রধানমন্ত্রীর ওই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে পারবে। তাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উচিত অবিলম্বে অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং কোন্দল মিটিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা। আমরা সবাই জানি যে সুসংগঠিত এবং ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী।
ড. প্রণব কুমার পাণ্ডে :অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে বিএনপির সদ্য বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। তবে শেষ হাসি হেসেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আহসানুল হক রিফাত। তিনি মাত্র ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে মনিরুল হক সাক্কুকে পরাজিত করেছেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হলেও প্রশ্ন উঠেছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় গত সাড়ে ১৩ বছরে যে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে দেশে; তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোট কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল? বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়টি নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আহসানুল হক রিফাতকে গণমাধ্যমকর্মীরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি স্পষ্ট উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে গেছেন।
রিফাতের সঙ্গে কুমিল্লার সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছেন। বাহারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ রিফাত। এর আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যাঁরা মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে বাহাউদ্দিন বাহারের দ্বন্দ্ব ছিল। ২০১২ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন আফজল খান এবং ২০১৭ সালে আফজল খানের মেয়ে আনজুম সুলতানা সীমা। বাহার ওই দুই নির্বাচনে তাঁদের প্রতি সমর্থন দিতে অস্বীকার করেছিলেন। ফলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হেরে যান। ওই দ্বন্দ্ব কি এবারও কাজ করেছে?
সাম্প্রতিক ইউনিয়ন পরিষদ এবং অন্যান্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন অনেক ক্ষেত্রে সমালোচিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন অনেক ক্ষেত্রে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে কড়া বার্তা দেওয়ার পরও নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা অনেক ক্ষেত্রে কমানো সম্ভব হয়নি। গোপালগঞ্জের একটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর হেরে যাওয়া সুস্পষ্টভাবে সাংগঠনিক অন্তর্দ্বন্দ্বের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে।
আমরা সবাই জানি, ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে; এটি সবাই বিশ্বাস করে, নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল তাদের মত পরিবর্তন করবে। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক। সেই প্রেক্ষাপট থেকে বিচার করলে আওয়ামী লীগকে এখন থেকেই সাংগঠনিকভাবে খুব শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু দলের বিভিন্ন পর্যায়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং উপদল ইতোমধ্যে যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তা আওয়ামী লীগের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।
যারা এক সময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল, তারাই আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশের প্রশংসা করছে। বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁর কন্যাও দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে ইতোমধ্যে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর। সরকার অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলা করেছে। জনগণকে এই অতিমারির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সরকার বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে, যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় উঠে এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রার্থীর তুলনামূলক কম ভোট পাওয়াসহ কুমিল্লা নির্বাচনের অন্যান্য বিষয় থেকে অনেকেই শঙ্কিত- দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কতটুকু প্রধানমন্ত্রীর ওই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে পারবে। তাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উচিত অবিলম্বে অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং কোন্দল মিটিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা। আমরা সবাই জানি যে সুসংগঠিত এবং ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী।
ড. প্রণব কুমার পাণ্ডে :অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন