দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রপরিচালনায় জ্যোতিষবিজ্ঞান সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। প্রাচীন যুগ থেকে জ্যোতিষ শাস্ত্রকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা হয়েছে এবং সুফল পাওয়া গেছে। একটা সময় ছিল যখন রাজা, বাদশাহ, জমিদাররা তাঁদের কর্মকাণ্ডে জ্যোতিষীর পরামর্শ গ্রহণ করতেন। দেখে নিতেন তাঁদের গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান। সময়টা ভালো বা মন্দ, জ্যোতিষবিজ্ঞান আমাদের জীবনের পথ নির্দেশ করতে পারে। বিভিন্ন সময় গবেষণা ও নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেশ, জাতি ও মানবজীবনে গ্রহের ভূমিকা সম্পর্কে প্রচুর তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। বিভিন্ন গ্রহের অবস্থান পর্যালোচনা করে প্রতিটি রাশির ওপর গ্রহগত সাধারণ সম্ভাবনা সম্বন্ধে আভাস পাওয়া যায়। একমাত্র জ্যোতিষবিজ্ঞান সঠিক পথ নির্দেশনা বা পরামর্শ দিতে পারে। এই জ্যোতিষবিজ্ঞান মানুষের জীবনে প্রয়োগ করতে পারলে, প্রত্যেক মানুষ সমাজ এবং দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনা সম্ভব। মহাত্মা কিরো ছিলেন একজন হস্তরেখাবিদ। অদ্ভুত প্রতিভার অধিকারী কিরো কম বয়সে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেন, তিনি একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ ছিলেন। তিনি সে সময় পৃথিবীর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের হস্তরেখা দেখেন ও তাঁদের জীবন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এক সময় তিনি ইউরোপ ও আমেরিকার বহু রাজা, প্রেসিডেন্ট ও বিত্তবানদের হস্তরেখা পরীক্ষা করেন। তাঁর গণনা সঠিক ও নির্ভুল বলে প্রমাণিত হয়। রানী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুদিন, অ্যাডওয়ার্ড সেভেনের মারা যাওয়ার তারিখ কিরোর নির্ভুল গণনা ছিল। কিরো সম্পর্কে বহু ঘটনা রয়েছে, যা লিখলে কাগজের পাতা ভরে যাবে। 

আমি ছোটবেলা থেকে জ্যোতিষবিদ্যার প্রতি আকৃষ্ট হই। হাতের তালুর হিজিবিজি রেখা নিয়ে চিন্তাভাবনা করি। কিরোর কিছু বই পড়ি। সে সময় কোনো বিষয় জ্ঞান অর্জন করা সহজ ছিল না। এখন একটা মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেটের সুবিধার কারণে সমস্ত পৃথিবী এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। আমাদের সময় যা ছিল স্বপ্নের অতীত। আমি জ্যোতিষবিজ্ঞানে বিশ্বাস করি। আমার বর্তমান বয়স ৭৫ বছর শেষ হতে চলেছে। আজ থেকে ৪৬ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৭৬ সালে আমার মৃত্যুর তারিখ ও স্থান গণনা করে রেখেছি। সে সময় আমার মৃত্যুর স্থান বিদেশে কানাডা বা আমেরিকা হতে পারে। সে সময় আমার কোনো আত্মীয় কানাডা বা আমেরিকায় ছিল না। এখানে একটা কথা বলা দরকার, হাতের রেখায় কানাডা বা আমেরিকা বলে কোনো কিছু থাকে না। যেমন বিএ, এমএ পাসের কোনো রেখা হাতে থাকে না। এটি গণনা করা হয় জাতক বা জাতিকার শিরো রেখা বা মস্তিস্ক রেখা থেকে। এ বিষয় বিস্তারিত পরে আলোচনা করব। আমার বড় ভাই প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, আমরা দু'ভাই। বড় ভাই আনিসুজ্জামানের বাসায় আমার স্ত্রীসহ বেড়াতে গেলে ভাই আমার স্ত্রী ও বড় ভাবিকে লক্ষ্য করে বলতেন, আখতার অ্যাস্ট্রোলজির ওপর বেঁচে আছে। কথাটা খুবই সত্যি। জীবনে আমি প্রচুর কষ্ট করেছি, কিন্তু কখনও হতাশাগ্রস্ত হইনি। এর মূল কারণ জ্যোতিষবিদ্যা। আমার জীবনের চরম কষ্টের কথা আমি আগেই জানতাম। 

জ্যোতিষবিজ্ঞানের আলোকে আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ব্যাখ্যা করা সম্ভব। আমি গবেষণা করে দেখেছি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভ সংখ্যা-৭ (সাত)। এবার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিচ্ছি। আমরা যদি একটু অতীতের দিকে তাকাই তা হলে দেখব, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক অমর ভাষণ ৭ মার্চ। আমাদের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর, এখানেও ১+৬ =৭। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ সালের নির্বাচন। আমি গণনা করেছিলাম, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ ছেড়ে গণফোরাম গঠন করলেন। ড. কামাল হোসেন যদি একজন জ্যোতিষীর পরামর্শ নিতেন, তা হলে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত থাকতেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের বিজয়ের কারণ হিসেবে গ্রহগত অবস্থান ও মুজিব পরিবারের শুভ সংখ্যা ১+৯+৯+৬=৭। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আমরা ২+০+১+৪=৭ সেই ৭ সংখ্যাকেই দেখতে পাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য ৭ সংখ্যা অত্যন্ত শুভ। এ ছাড়া ৩, ২, ১, ১০, ১১, ১২, ১৬, ২৫, ২১ শুভ হতে পারে। ৮ সংখ্যা সব সময় অশুভ। এ ছাড়া ১৭, ২৬ ও শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য অশুভ বলে আমি মনে করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগস্ট মাসে মৃত্যুবরণ করেন। ১২ মাসের মধ্যে আগস্ট মাসের সংখ্যা ৮। ২৬ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী হত্যাযজ্ঞ ২+৬=৮। এ ছাড়া ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভায় গ্রেনেড হামলা। এখানে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মসংখ্যা ২৮, ২+৮=১০=১ ও সভার দিন ২১, ২+১=৩ হওয়ার কারণে তিনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭। তুলা রাশি, রাশি চক্রের ৭তম ঘর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুলা রাশির জাতিকা। একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন জন্ম ছকে সেই ৭ সংখ্যা। ১২ মাসে ১২টি রাশি। ২৪ ঘণ্টায় ১২টি লগ্ন। এক একটি লগ্নের সময়কাল ২ ঘণ্টা, অর্থাৎ সকাল ৬-৮টা, ৮-১০টা, ১০-১২টা, এভাবে লগ্নকাল হিসাব করা হয়ে থাকে। সুষ্ঠু গণনার জন্য জন্মের সঠিক সময় ও স্থান জানা দরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মতারিখ জানা থাকলেও তাঁর জন্মের সঠিক সময় আমি জানতে পারিনি। জন্মের সময় জানা থাকলে ভালো গণনা করা সম্ভব হতো। তুলা রাশির হাজার হাজার জাতক বা জাতিকা আছেন, তাঁদের সবার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, কর্মকাণ্ড এক হয় না। এর মূল কারণ, তাঁদের জন্মলগ্ন ও গ্রহগত অবস্থান।

এবার আসা যাক আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে। রাজনীতিবিদরা যদি জাতীয় নির্বাচন করার আগে একজন জ্যোতিষীর পরামর্শ গ্রহণ করেন তা হলে খুবই ভালো হবে। বিভিন্ন দলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও উপদেষ্টারা আছেন, তাঁরা সবাই গুণী ব্যক্তি কোনো সন্দেহ নেই। তবে একজন জ্যোতিষও তাঁর পরামর্শদাতা হিসেবে খুব প্রয়োজন

বিষয় : রাষ্ট্রপরিচালনায় জ্যোতিষবিজ্ঞান রাজনৈতিক পরিস্থিতি জ্যোতিষীর পরামর্শ

মন্তব্য করুন